লাল ঠোঁটের ফুটকি পাখি
১৩ মে ২০১৫জুলিয়্যাঁ গোন্যাঁ সে'রকম একজন অর্নিথোলজিস্ট, মানে পক্ষীবিশারদ৷ আপাতত এসেছেন দক্ষিণ বেনিনে, আনাম্ব্রা ওয়্যাক্সবিল-এর খোঁজে৷ জুলিয়্যাঁ এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বেনিনে৷ এখানকার পক্ষীজগত নাকি অসাধারণ!
এখানকার মানুষদের জীবনই কাটে নদীতীরে, নদীবক্ষে৷ জুলিয়্যাঁ-র সাথে রয়েছেন তাঁর বন্ধু ও সহকর্মী ফাবিয়্যাঁ ম্যার্সিয়ে৷ জুলিয়্যাঁ-র ভাষ্যে:
‘‘আমরা যেখানে যাচ্ছি, সেখানে আমি এই পাখিটাকে প্রথমবার দেখি – আজ থেকে চার বছর আগে৷ এখানে যে দেখতে পাব, গোড়ায় তা ভাবতেও পারিনি৷ হঠাৎ পাখিটাকে দেখে খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম৷ সঙ্গে সঙ্গে বই বার করে দেখলাম: সত্যিই ওয়্যাক্সবিল৷ মানচিত্র অনুযায়ী এখানে তার দেখা পাবার কথাই নয়৷ সে এক আশ্চর্য অনুভূতি!''
আনাম্ব্রা ওয়্যাক্সবিলের প্রথম ছবি
চার বছর কেটেছে এই প্রকল্পের অর্থসংস্থান করতে৷ এবার আসবে ফিল্ডওয়ার্ক – মাঠের কাজ৷ পাখিটাকে কি খুঁজে পাওয়া যাবে? পাওয়া গেলে কতগুলো? খোঁজ শুরু হলো৷ কয়েক ঘণ্টা ধরে পাখি খোঁজা৷ তারপর সত্যিই সেই লাজুক, দুষ্প্রাপ্য পাখিটির দেখা পাওয়া গেল৷ তোলা হলো আনাম্ব্রা ওয়্যাক্সবিলের প্রথম ছবি, যেমন ঘাসের মধ্যে এক দঙ্গল ওয়্যাক্সবিল৷ শুধু তাদের কয়েকটাকে ধরতে পারা চাই৷
পরের দিন ভোর পাঁচটায় ফাবিয়্যাঁ আর জুলিয়্যাঁ আবার ঠিক সেই জায়গাতেই ফিরেছেন, যেখানে পাখিগুলোর দেখা পাওয়া গিয়েছিল৷ জাল দিয়ে পাখিগুলোকে ধরতে হবে৷ ছ'টা জাল বসানো হয়েছে৷ ধীরে ধীরে আলো ফুটছে, পাখিরা এবার জেগে উঠবে, পক্ষীবিশারদদেরও নৌকায় ফিরতে হবে৷ অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই৷ ওজন মাপার যন্ত্র, অন্যান্য মাপজোকের যন্ত্র, রক্ত নেবার সুঁচ, এ সব তৈরি রাখতে হবে৷
জালে পাখি পড়ল! পাখিগুলোকে জাল থেকে ছাড়াতে হবে জুলিয়্যাঁ আর ফাবিয়্যাঁকে৷ জুলিয়্যাঁ বলছেন: ‘‘দেখুন, আমার হাত কাঁপছে৷ এই প্রথম আমি এ জাতের পাখি হাতে নিয়েছি৷ খুবই ইমোশনাল মুহূর্ত৷ বেনিনে আমার প্রথম ওয়্যাক্সবিল – অ্যাডাল্ট৷ দারুণ, কিন্তু কী খুদে! আমি লাল থলেগুলো পছন্দ করেছি কেননা এদের ঠোঁটগুলো লাল, সুন্দর মানাবে৷''
পঁচিশটি আনাম্ব্রা ওয়্যাক্সবিল জালে পড়েছে – জুলিয়্যাঁ আর ফাবিয়্যাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি৷
পাখিদের মাপজোক
পাখিগুলো কি এখানেই থাকে, নাকি তারা নাইজেরিয়া থেকে এসেছে? এই হলো প্রশ্ন৷ নাইজেরিয়ায় তারা প্রায় লুপ্ত হতে চলেছে৷ দু'টি দেশে একই ধরনের জলবায়ু, পরিবেশ৷ তবে প্রথমে পাখিগুলোকে মাপতে হবে, মাপজোক সব লিখে রাখতে হবে৷ জুলিয়্যাঁর ভাষ্যে:
‘‘ঠোঁটটা মাপা খুবই দরকার৷ তাহলে ঠোঁটের মাপ অনুযায়ী এই পাখিগুলোকে নাইজেরিয়ার ওয়্যাক্সবিলদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যাবে৷ প্রায়ই দেখা যায়, পাখিরা তাদের পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয় – সেটা বোঝা যায় তাদের ঠোঁট কিংবা পাখার পার্থক্য থেকে৷ কাজেই তুলনা করার জন্য মাপ নেওয়াটা জরুরি৷''
এরপর ডিএনএ বিশ্লেষণের জন্য রক্তের নমুনা৷ বেনিনের পাখিগুলো নাইজেরিয়ার ওয়্যাক্সবিলদের থেকে আলাদা আর একটা নিজস্ব প্রজাতি কিনা, সেটাও বোঝা যাবে তাদের ডিএনএ থেকে৷
এনজিও-র রেঞ্জার
দুই পক্ষীবিশারদ চলেছেন পরের গাঁয়ে, কয়েক কিলোমিটার দূরে, এখানেও পাখির খোঁজে৷ এখানে তাঁদের একটি ছোট্ট এনজিও-র রেঞ্জারদের সঙ্গে দেখা৷ এনজিও-টি নদীর অববাহিকায় প্রকৃতি ও প্রাণীজগতের সুরক্ষার কাজ করে৷
দুরবিনগুলো এক ধরনের উপহার – যা দিয়ে রেঞ্জাররা ভবিষ্যতে আরো ভালোভাবে পাখিদের ওপর নজর রাখতে পারবেন, যেমন আনাম্ব্রা ওয়্যাক্সবিলদের ওপর৷ যদিও এই বিরল পাখিদের বাঁচানোর একমাত্র পন্থা হলো, স্থানীয় মানুষদের মধ্যে এই পাখিগুলো সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করা৷ জুলিয়্যাঁ বলেন:
‘‘ক্যামিল আর জর্জের সঙ্গে দেখা করাটা খুব জরুরি ছিল, কেননা আমরা এখানে মাত্র দু'সপ্তাহের জন্য এসেছি, কিন্তু এরা থাকবে বেশ কয়েক বছর ধরে৷ আমরা যা জানি, তা এদের জানালে, এরা তা নিয়ে কাজ করতে পারবে৷ আমরাও পরে এদের কাছ থেকে আনাম্ব্রা ওয়্যাক্সবিল সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য পাব৷''
মজার কথা: বিরল প্রজাতিরা সুরক্ষিত হলে, তাদের দেখতে আসেন পর্যটকরা – যা যেমন বন্যপ্রাণী, তেমনই টুরিস্ট – সবার পক্ষেই ভালো৷