লাখো বছর আগে হারিয়ে যাওয়া প্ল্যাংকটনের প্রত্যাবর্তন
১ জুলাই ২০১১বাংলা ভাষায় কথায় আছে, কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও হয়তো কখনো ঘটে যাচ্ছে সেই কথারই বাস্তব প্রয়োগ৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সারা দুনিয়ার জলবায়ুতে ঘটছে নানা পরিবর্তন৷ এই পরিবর্তনের ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ আজ স্বজনহারা কিংবা বাস্তুহারা৷ তবে এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এবার ঘটেছে উদ্ভিদ জগতে এক আশীর্বাদের ঘটনা৷ শত হাজার বছর পর আবারও ফিরে এসেছে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া অতিক্ষুদ্র শৈবাল৷
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মহাসাগরগুলো উষ্ণতর হয়ে উঠছে৷ ঘটছে সমুদ্রতলের জীব জগতে এমন বিচিত্র পরিবর্তন যা মানুষ কখনও ভাবতে পারেনি৷ নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এতোটাই বেড়ে গেছে যে, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে৷ এর ফলে এমন এক জলপথ সৃষ্টি হচ্ছে যেখান দিয়ে প্রশান্ত এবং আটলান্টিক মহাসাগরে থাকা সামুদ্রিক জীবগুলো এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাতায়াত করতে সক্ষম হচ্ছে৷
এখন থেকে ঠিক এক বছর আগেও এমনি আরেকটি ঘটনা বিজ্ঞানীদের চমকে দিয়েছিল৷ তা হলো স্পেন এবং ইসরায়েলের মাঝামাঝি উপকূল অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছিল প্রশান্ত মহাসাগরের ধূসর তিমি৷ সেখানে এই তিমির খোঁজ পাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পেরেছিলেন যে, বরফে ঢাকা ক্যানাডার উপরের অংশের বরফ গলে যাওয়ার ফলেই উত্তরপশ্চিম প্যাসেজ দিয়ে পাড়ি জমাতে পারছে এসব প্রাণী এবং উদ্ভিদ প্রজাতি৷ অথচ বিগত শত হাজার বছরেও বিজ্ঞানীরা এমন ঘটনা কখনই দেখেননি৷
অবশ্য, নিওডেন্টিকুলা সেমিনি নামের এই শৈবালের আবির্ভাবকে ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হবে তা নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে৷ কারণ একদিকে দীর্ঘকাল আগে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া উদ্ভিদের প্রত্যাবর্তন, অন্যদিকে এর ফলে আটলান্টিকের জীবজগতে আঘাত হানার আশঙ্কা৷ তবে লাভ কিংবা ক্ষতি যা-ই হোক না কেন, তা যে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল তা বেশ পরিষ্কার বিজ্ঞানীদের কাছে৷ তাই এই শৈবালের দিকে গভীরভাবে নজর রাখছেন বিজ্ঞানীরা৷
ইউরোপের দশটি দেশে সামুদ্রিক জীবজগত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে তিন শতাধিক গবেষণা কর্মসূচি৷ এগুলোর সমন্বয় করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় ক্ল্যামার প্রকল্প৷ রয়্যাল নেদারল্যান্ডস ইন্সটিটিউট ফর সি রিসার্চ এর পক্ষে ক্ল্যামার প্রকল্পে কাজ করছেন কাটিয়া ফিলিপার্ট৷ সামুদ্রিক জীবজগতের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সাম্প্রতিক আবিষ্কার নিয়ে ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ফিলিপার্ট বলেন, ‘‘এটা সামদ্রিক জীবজগতে একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত৷ এই জলপথ যদি এভাবে উন্মুক্ত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতিও আরো বেশি পরিমাণে আসতে থাকবে এবং পরিবর্তনের ধারা খুব দ্রুত ঘটবে৷''
এই পরিবর্তন মানবজাতির জন্য লাভ নাকি ক্ষতির কারণ হতে পারে সেবিষয়ে ফিলিপার্ট বলেন, ‘‘এভাবে সামুদ্রিক জীবজগতে পরিবর্তনের ফলে এসব প্রজাতি তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ঘটাতে পারে৷ আর এটা করলে তারা আরো বেশি বড় আকারের হতে পারে৷ ফলে মানুষের খাবার উপযোগী এসব প্রজাতি থেকে মানুষ লাভবান হতে পারে৷ এছাড়া এই শৈবাল পরিবেশ থেকে ব্যাপক পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিতে পারে বলে এটা থেকে আমরা প্রভূত কল্যাণ পেতে পারি৷''
অপরদিকে, এই শৈবালের প্রত্যাবর্তন সামুদ্রিক জীবকুলের খাদ্য গ্রহণ চক্রকে ব্যাহত করতে পারে৷ ফলে সমুদ্রে স্তন্যপায়ী প্রাণীকুল এবং মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিজ্ঞানী ফিলিপার্ট৷ তাই সামুদ্রিক জগতের ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত অঞ্চলসমূহের দেশগুলো এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এই ঘটনাটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন, সেটির উপর জোর দিলেন ফিলিপার্ট৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক