‘দ্য বব্স’ প্রতিযোগিতায় লাকি আক্তার
১৬ এপ্রিল ২০১৩লাকির গগনবিদারী স্লোগান ছাড়া ঠিক জমে ওঠে না শাহবাগ৷ সেই ৫ই ফেব্রুয়ারি থেকেই নিয়মিত সেখানে হাজির আছেন এই অগ্নিকন্যা৷ দিনের পর দিন শাহবাগ কাঁপিয়েছেন, ‘ক-তে কাদের মোল্লা....তুই রাজাকার, তুই রাজাকার', ‘স-তে সাকা চৌধুরী....তুই রাজাকার, তুই রাজাকার' – স্লোগানে৷
ক্ষুব্ধ, হতাশ লাকি
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের মূল দাবি নিয়ে শাহবাগ আন্দোলন চলছে দুই মাসের বেশি সময় ধরে৷ সরকারের প্রতি তাদের আল্টিমেটামও ছিল৷ গত ২৬শে মার্চ সেই আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে৷ কিন্তু সরকার শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের দাবির প্রেক্ষিতে তেমন কিছুই করেনি৷ ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছেন লাকিরা৷ তারা যারপরনাই হতাশ হয়েছেন, যখন হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ সফল করতে সহায়তা করেছে সরকার৷ লাকি মনে করেন, হেফাজতে ইসলাম কার্যত শাহবাগের বিরুদ্ধেই মাঠে নেমেছে৷
তাহলে হেফাজতকে সহায়তার মাধ্যমে সরকার কি গণজাগরণ মঞ্চের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে?
লাকি আক্তার এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন একটু ভিন্নভাবে৷ তাঁর কথায়, ‘‘সরকার আসলে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করছে না৷ তারা একটি ‘কুয়াশাচ্ছন্ন' অবস্থানে রয়েছে৷ একদিকে সরকার বলছে, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, জামায়াত-শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়৷ অন্যদিকে, তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করছে না, সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে৷''
গণজাগরণ মঞ্চ বনাম হেফাজতে ইসলাম
এখানে বলা প্রয়োজন, এপ্রিলের শুরুতে ঢাকার মতিঝিলে মহাসমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম৷ সেই মহাসম্মেলন থেকে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সংগঠনটি৷ লাকি আক্তার মনে করেন, হেফাজতের তের দফা সুস্পষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী৷ গণজাগরণ মঞ্চ মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করে, তারা মনে করে মুক্তিযুদ্ধে চেতনা বাস্তবায়ন হতে হবে৷ এই চেতনা বাস্তবায়নের সঙ্গে হেফাজতের দাবি সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক৷
লাকি আক্তার বলেন, ‘‘হেফাজতের সমাবেশ থেকে কেন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়? তাদের মিছিল থেকে কেন যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির চেয়ে স্লোগান ওঠে? এগুলো আমাদের প্রশ্ন৷ এসব দেখে আমাদের মনে সংশয় জাগে, যে হেফাজতের আগে অস্তিত্বই ছিল না, তারা কিভাবে শাহবাগ আন্দোলনের পর এত বিস্তৃত লাভ করলো৷''
প্রসঙ্গ হাসনাত আব্দুল হাই
শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্প্রক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের হুমকিধামকি মোকাবিলা করছেন লাকি আক্তার৷ এগুলো তাঁর কাছে নিত্যদিনের ব্যাপার৷ লাকির মতো শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য নারীরাও মোকাবিলা করছেন বিভিন্ন হুমকি৷ সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এবং পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া এক ছোটগল্প এই নারীদের বিড়ম্বনা আরো বাড়িয়েছে৷ ‘টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি' শিরোনামে প্রকাশিত সেই গল্পে ‘সীমা' নামের চরিত্রের মধ্য দিয়ে শাহবাগের এক পরিচিত নারী কর্মীর চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করেন সমাজের অধিকাংশ মানুষ৷
‘এই গল্প পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত', বলেন লাকি আক্তার৷ গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি এই লেখার নিন্দা জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি দৈনিক প্রথম আলো এবং গল্পের লেখক হাসনাত আব্দুল হাই ক্ষমা প্রার্থনা করায় খানিকটা স্বস্তি ফিরেছে তাঁর মনে৷
লাকির চরিত্রের একটি দিক এখানে উল্লেখ না করলেই নয়৷ শাহবাগ আন্দোলনের শুরুর দিকেই একবার হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি৷ সেসময় কয়েক ঘণ্টা হাসপাতালে কাটিয়ে আবারো তিনি ফিরে আসেন প্রজন্ম চত্বরে৷ দৃঢ়চিত্তে স্লোগান ধরেন৷ তাঁর উপরে হামলার প্রভাব যাতে শাহবাগের আন্দোলনে না পরে, সেজন্য তখন তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন৷ আঘাত হজম করেছেন৷
এবার হাসনাত আব্দুল হাইয়ের লেখার বিরুপ প্রভাব তিনি গণজাগরণ মঞ্চের উপরে পড়তে দিতে চান না৷ চান না এই গল্প পড়ে যে কল্পিত চরিত্রটি সাধারণ মানুষের মনে উঠে আসছে, সেই চরিত্রটি আরো বিড়ম্বনায় পড়ুক৷ তাই তিনি চান, সবাই যাতে গণজাগরণ মঞ্চের মূল দাবিগুলো নিয়েই এগিয়ে যায়৷ আন্দোলন যাতে ‘ট্র্যাকচ্যুত' না হয়৷
এবছর ডয়চে ভেলের সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড ‘দ্য বব্স'-এর সেরা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন লাকি৷ এই খবর শোনার পর তাঁকে যারা মনোনয়ন দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই অগ্নিকন্যা৷
উল্লেখ্য, ডয়চে ভেলের এই প্রতিযোগিতার অনলাইন ভোটাভুটি চলছে এখন৷ সেখানে লাকির প্রতিদ্বন্দ্বী আরো ১৩টি আন্তর্জাতিক ভাষার ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্টরা৷ অনলাইন ভোটের ঘরে লাকির অবস্থান বেশ দুর্বল৷ এখন পর্যন্ত মাত্র দুই শতাংশ ভোট পেয়েছেন শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম এই কর্মী৷ লাকি আক্তারকে ভোট দিতে ভিজিট করুন www.thebobs.com/bengali ঠিকানা৷ আপনার ভোট এই আন্দোলনকারীকে বিশ্বের বুকে আরো পরিচিত করে তুলতে পারে৷