লন্ডন এক সেমিনারে আওয়ামী লীগ বিতর্ক
২১ জুলাই ২০১৭বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার বিষয়ে অনুষ্ঠিত ঐ সংলাপে বিএনপি প্যানেল অংশগ্রহণ করলেও আওয়ামী লীগের প্যানেলটি অংশ না নেয়ায় ফলে একতরফা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়৷
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘‘আমাদেরকে জানানো হয়েছিল যে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উদ্যোগে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে৷ কিন্তু পরে আমরা জানতে পারি এই সংলাপ একজনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ ফলে আমরা এতে অংশগ্রহণ সমীচীন মনে করেনি৷''
অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে যুক্তরাজ্যের আমন্ত্রিত সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে কেউ না যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন লর্ড কার্লি৷ তিনি দাবি করেন, শেষ মুহূর্তে কোনো উপযুক্ত কারণ ছাড়াই আওয়ামী লীগ নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে৷
উল্লেখ্য, সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমানের৷
এক বিবৃতিতে লর্ড কার্লি বলেন, ‘‘যুক্তরাজ্যের সংসদে এই সেমিনারটি আয়োজন করা হয়, যেখানে ছিল স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ৷ বিষয়ভেদে পছন্দ-অপছন্দ বা মতবিভেদ থাকতে পারে৷ কিন্তু আমরা আমাদের সংসদীয় সিদ্ধান্তে অটল৷''
তিনি বলেন, ‘‘অংশগ্রহণকারী কেউ যদি অন্য কাউকে বাদ দিতে চায় তবে আমরা সেটা সৌজন্যতার অভাব বলে ধরে নেবো৷ কারণ সবারই কথা বলার সুযোগ আছে, থাকবে৷''
তিনি বলেন, বাংলাদেশি সরকারের প্রতিনিধিদল তাঁদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছিল৷ গত বছরেও লর্ড কার্লি ও এমপি আনা মেইন একইরকম সেমিনার আয়োজন করে, যেখানে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়৷
লর্ড কালি বলেন, আওয়ামী লীগের অসত্য বিবৃতিতে তিনি হতাশ৷ লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নাদিম কাদির এক বিবৃতিতে জানায়, ব্যক্তিগতভাবে আয়োজিত এই সংলাপের ব্যাপারে অবগত ছিল না আওয়ামী লীগ৷
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু ও সেকিউলার মতাদর্শীদের নিয়ে যে সংকট চলছে সে সমস্যা সমাধানে এই সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ এমনটাই দাবি লর্ড কার্লির৷ তিনি বলেন, ‘‘বিষয়গুলো ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে৷ আমরা আশা করেছিলাম বাংলাদেশ সরকার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংকট সমাধান করবে৷''
সংলাপে অংশ নিতে যুক্তরাজ্যে গিয়ে বিএনপি প্রতিনিধি দলও অবাক হয়েছে৷ তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তারা এমন আচরণে বিস্মিত৷ বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান আমির খশরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা সংলাপ শুরুর কিছুক্ষণ আগে জানতে পারি যে আওয়ামী লীগ অংশ নিচ্ছে না৷ আমাদের জন্য এটা খুবই বিব্রতকর ছিল৷''
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘‘আমরা প্রতারিত বোধ করেছি৷ কারণ এই সংলাপ ছিল ব্যক্তিগত উদ্যোগের, সংসদীয় নয়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে লজ্জিত৷ তাদের মুখ দেখানোর মতো কোনো অবস্থা নেই৷ কারণ তারা ৫ জানুয়ারি সংবিধানের অজুহাত দেখিয়ে একটি জগণ্য নির্বাচন করার পর বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে স্বল্পসময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে৷ কিন্তু তারা ক্ষমতার লোভে আজ পর্যন্ত সেই ওয়াদা রক্ষা করেনি৷ ফলে গণতন্ত্রকামী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে৷''
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল এখনো লন্ডনে আছে৷ এ নিয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদিরকে ফোন করলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ যদিও তিনি বলেছেন, বিষয়টা নিয়ে ড. মশিউর রহমান যে কথা বলেছেন সেটাই সর্বশেষ আপডেট৷
এদিকে লন্ডনে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিক মুনজের আহমেদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ঐ সেমিনারে অংশ নিতেই লন্ডনে আসেন৷ সেমিনারের কয়েক ঘণ্টা আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা আরেকটি অনুষ্ঠানেও একসঙ্গে অংশ নেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরা ঐ সেমিনারে যাননি৷ অথচ সেমিনারে জামায়াত নেতারারও অংশ নিয়েছেন৷''
তাঁর কথায়, ‘‘এটা হাউজ অফ লর্ডস-এর অনুষ্ঠান কোনো শুনানি বা সেমিনার নয়৷ সেখানে একটি হল ভাড়া করে ২০১০ সাল থেকে এই সেমিনার হয়ে আসছে৷ এটা সাধারণত ব্যক্তিগত উদ্যোগেই হয়ে থাকে৷''