রোহিঙ্গাদের পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তৃতা দেন৷ স্থানীয় সাংবাদিক অব্দুল আজিজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণেআশ্রয় দেয়া হয়েছে৷ মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই তাদের ফেরত নিতে হবে৷ আশ্রয়ের এই সাময়িক সময়ে বাংলাদেশ সরকার সাধ্যমতো শরণার্থীদের সহায়তা করবে৷ তিনি মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধেরও আহ্বান জানান৷''
প্রধানমন্ত্রী শরণার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি৷ ঘরবাড়ি হারিয়ে যেসব রোহিঙ্গা এখানে এসেছেন, তাঁরা সাময়িক আশ্রয় পাবেন৷ আপনারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে৷''
প্রধানমন্ত্রী শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন৷ আহত এক শিশুসহ কয়েকটি শিশুর সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷ কথা বলেন কয়েকজন নারীর সঙ্গে৷
আব্দুল আজিজ জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কাছ থেকে অত্যাচার নির্যাতনের কথা শোনেন৷ নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা কেঁদে ফেলেন৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সান্ত্বনা দেন এবং নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন৷''
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গুলিতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে৷ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ নাফ নদীতে নারী-শিশুর লাশ পাওয়া যাচ্ছে৷ এই বর্বর হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না৷ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়৷ উপায় না দেখে এ দেশের মানুষ তখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল৷''
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতা আমির হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে আপনারা যাতে নিজ দেশে ফিরতে পারেন সেই ব্যবস্থা আমরা করব৷ তার আগ পর্যন্ত আপনারা যাতে সবাই বাংলাদেশে একসঙ্গে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ আপনারা শান্তি বজায় রেখে অবস্থান করবেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন৷ আশ্বস্ত করেছেন৷ আমরা তাঁর প্রতি আস্থাশীল৷ আমরা মনে করি, তিনিই আমাদের দুর্দশা লাঘব করতে পারবেন৷ আমাদের নিজ দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারবেন৷''
আমির হোসেন আরো বলেন, ‘‘এখনো রাখাইনে নির্যাতন অব্যাহত আছে৷ প্রতিদিনই পালিয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা৷ আমাদের ক্যাম্পগুলোতে খাদ্য, পানীয় জল এবং চিকিৎসার সংকট অব্যাহত আছে৷ বিশেষ করে শিশুরা খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে সবচেয়ে সংকটের মুখে আছে৷''
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরো ৫৭ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছে৷ তাদের হিসেব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে মোট তিন লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে৷
সোমবার সংসদে রোহিঙ্গা নির্যাতনবন্ধ ও তাঁদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে প্রস্তাব পাশ হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদদে৷ বুধবার ঢাকায় ৪১ টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরাণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন৷ আর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরবে বাংলাদেশ৷
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারকে ড. ইউনূসের ৭ প্রস্তাব:
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান জাতিগত নিধনযজ্ঞকে মানবিক বিপর্যয় আখ্যা দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ সংকট উত্তরণে মিয়ানমারের সরকারের প্রতি ৭টি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ ইউনূস সেন্টার থেকে সংবাদ মাধ্যমকে তা জানানো হয়েছে৷
ড. ইউনূস প্রস্তাবিত ৭টি পদক্ষেপ হচ্ছে:
১.অ্যাডভাইজারি কমিশন অব রাখাইন স্টেট এসিআরএসের (কফি আনান কমিশনের) সুপারিশকৃত পরামর্শগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা নজরদারি করা৷
২. মিয়ানমারে সহিংসতা নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ ও রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগ থেকে বিরত রাখা৷
৩. মিয়ানমারের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঞ্চলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়মিত প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা৷
৪. মিয়ানমার ত্যাগকারী রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা৷
৫. মিয়ানমারের ভেতরে শরণার্থী শিবির তৈরি করা এবং জাতিসংঘের অর্থায়নে ও তত্ত্বাবধানে তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা৷
৬. এসিআরএসের প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়া৷
৭. মিয়ানমারের সব নাগরিককে রাজনৈতিক ও চলাফেরার মুক্তির নিশ্চয়তা দেয়া৷