‘শাপলা চত্বর দিবসে’ হেফাজতের নীরবতার কারণ
৫ মে ২০২২হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মূল মামলাগুলো হয় ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০২১ সালে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাশকতা এবং গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কারণে হেফাতের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে মামলা হয়েছে ২৫৪টি। মামলাগুলোতে স্বনামে ও নাম ছাড়া আসামি করা হয়েছে কমপক্ষে এক লাখ ৮০ হাজার জনকে।
গত বছর মোদীবিরোধী সহিংস বিক্ষোভের পর ব্যাপক ধরপাকড়ের মুখে হেফাজত তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করতে বাধ্য হয়। পরে আবার কমিটি গঠন করা হলেও মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুতে হেফাজতের সকারবিরোধী ধারা দুর্বল হয়ে যায়।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন হেফাজত নেতারা। ওই বৈঠকে সরকারের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, "হেফাজত নেতারা মৌখিক মুচলেকা দিয়েছেন যে, তারা আর রাজনীতি করবেন না বা রাজনৈতিক কোনো প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হবেন না। তারা ধর্মীয় সংগঠন। ধর্মীয় কোনো কাজের বাইরে যাবে না। আর সরকারের দিক থেকেও বলা হয়েছে, তাদের মামলাগুলো আইনগতভাবে বিবেচনা করা হবে, জামিনের আবেদনগুলো আন্তরিকভাবে দেখা হবে।”
আটক নেতা-কর্মীরা যদি ছাড়া পেয়ে আবার আগের মতো সক্রিয় হয় তাহলে কী হবে? ওই কর্মকর্তা বলেন, "জামিন পাওয়া আর মামলা প্রত্যাহার হওয়া এক নয়। মামলা তো থেকে যাচ্ছে।”
জানা গেছে, বৈঠকের পর এ পর্যন্ত ৪৩০ জন নেতা-কর্মী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ৪৫০ জন নেতা এখনো আটক আছেন।
হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানি বলেন, "আমরা রাজনীতি করতে পারবো না- সরকারের দিক থেকে এমন কোনো শর্তের কথা বলা হয়নি। তবে হেফাজত তো কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। আমরা কোনো রাজনীতির মধ্যে থাকবো না। আমরা ধর্মীয় সংঠন হিসেবেই চলবো।”
তিনি নিজেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০২১ সালের মামলার তালিকা এবং আটকদের নাম দিয়ে মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি দেয়ার অনুরোধ করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ আন্তরিক। ওই বৈঠকের পর অনেকেই ছাড়া পেয়েছেন। আশা করি আরো অনেকে ছাড়া পাবেন। তবে মাওলানা মামুনুল হক ও জুনায়েদ আল হাবিবসহ আরো কিছু শীর্ষ নেতা এখনো ছাড়া পাননি।”
এবার ৫ মে হেফাজতের কোনো কর্মসূচি না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, "এক মাস রোজা গেল, আমি নিজেও ইতেকাফে ছিলাম। আবার মহাসচিব ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন। বুধবার রাতে ফিরেছেন। তাই কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়নি।”
হেফাজতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীও (দেওয়ানার পীর) মনে করেন, হেফাজতের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তরিক। তিনি বলেন, "ফেব্রুয়ারি মাসের বৈঠকের পর আরো অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। আরো হবে। বৈঠকের পর অনেকেই জামিন পেয়েছেন। কিন্তু নেতাদের কারো কারো বিরুদ্ধে ২০-২২টি মামলা রয়েছে। এগুলো ক্লিয়ার করতে সময় লাগবে। আর মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির বিষয়টি এখনো আমরা আলোচনায় আনিনি। কারণ, তার ব্যাপারটি আলাদা। তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কথা বলেছেন। তাই তার অনুমোদন ছাড়া এটা হবে না।”
হেফাজতের পক্ষ থেকে নেতারা এখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, "আমরা প্রধানমন্ত্রীকে পরিস্কার বলতে চাই যে হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এটা একটি ধর্মীয় সংগঠন। অতীতে নানা কারণে, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে কিছু কাজ রাজনৈতিক মনে হয়েছে। ”
তার মতে, " ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় হেফাজতের কর্মসূচি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি নেয়া ঠিক হয়নি।”
শাপলা চত্বরে আট বছর আগের সমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, "ওই কর্মসূচি কিছু লোকের ব্যক্তি স্বার্থের কারণে সঠিক পথে থাকেনি। তারা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। তা না হলে দুঃখজনক ঘটনা ঘটতো না। আমরা যদি ভুল করে থাকি, তাহলে তো তার মাশুল দিতে হবে। আমাদের মূল কাজ ঈমান- আকিদা ঠিক করা। রাজনীতি করা আমাদের কাজ নয়।”
রোজা, ঈদ এবং মহাসচিবের ওমরাহ পালনকে তিনিও ৫ মে-তে কোনো কর্মসূচি বা বিবৃতি না দেয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
‘অরাজনৈতি সংগঠন যেভাবে চলে তারাও সেভাবে চলবে'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হেফাজতে ইসলামের আটক নেতা-কর্মীদের জামিন পাওয়ার সব কৃতিত্ব দিয়েছেন আইন ও আদালতকে, "হেফাজতের নেতা-কর্মীরা আইন অনুযায়ী জামিন পাচ্ছেন, তাতে তো আমাদের কিছু বলার নেই। যা হবে আইন অনুযায়ী হবে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "তারা তো সব সমই বলে তারা অরাজনৈতি সংগঠন। এদেরকে কেউ উসকে দেয়, কেউ পরামর্শ দেয়। আমাদের সাথে তারা কীভাবে চলবে তা নিয়ে কোনো কিছু হয়নি। অরাজনৈতি সংগঠন যেভাবে চলে তারাও সেভাবে চলবে। তারা তাই বলেছে।”