রাশিয়ার ‘জাপাড’ নিয়ে কেন এত হইচই?
রাশিয়া বরাবরই বলে আসছে যে বেলারুশের সাথে এ বছরের যৌথ সামরিক মহড়া সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করা হবে৷ কিন্তু তাতে আশ্বস্ত হয়নি ন্যাটো এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো৷ কিন্তু কেন? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ডয়চে ভেলে৷
জাপাড কী?
রুশ ভাষায় ‘জাপাড’ মানে পশ্চিম৷ ইউরোপের সাথে রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে রুশ এবং বেলারুশিয়ান সেনাবাহিনীর যৌথ মহড়াকে এ নামে ডাকা হয়৷ তবে এই এলাকা ন্যাটোর আওতাধীন৷ ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরের ১৪ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই মহড়া৷ সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও সমর কৌশল উন্নয়নে বিভিন্ন অঞ্চলে চার বছরে একবার এই মহড়া করে রাশিয়া৷
অতীত জাপাড কেমন ছিল?
সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম শুরু হয়েছিল জাপাড৷ রুশ ফেডারেশনে এই মহড়া সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে৷ ন্যাটো অভিযোগ তুলেছিল সেই মহড়ার মাধ্যমে ২০০৮ সালে জর্জিয়া আক্রমণ এবং ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ও পূর্ব ইউক্রেন দখলের প্রস্তুতিই নিয়েছিল রুশ সেনাবাহিনী৷
কেমন হবে এবারের জাপাড?
অরগানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ বা ওএসসিই-এর ২০১১ ভিয়েনা ঘোষণা অনুযায়ী, ১৩ হাজার সৈন্যের চেয়ে বেশি সৈন্য নিয়ে কোনো সামরিক মহড়া করলে অন্য দেশগুলোকে তা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দিতে হবে৷ রাশিয়া বলছে, জাপাড মহড়ায় অংশ নেবে ১২ হাজার সাতশ সেনা৷ তবে পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মহড়ায় এক লাখের কাছাকাছি সেনা অংশ নিতে পারে৷
গোপন অভিপ্রায় নেই
অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই মহড়া করছে রাশিয়া, ন্যাটোর এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটি৷ প্রস্তুতি থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব ধাপই স্বচ্ছ রাখার ঘোষণাও দিচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী৷ দেশটির উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেক্সান্ডার ফোমিন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন জাপাড-২০১৭ হবে ‘খুবই শান্তিপূর্ণ এবং আত্মরক্ষামূলক’৷
পর্যবেক্ষণ করছে ন্যাটো
রাশিয়া যতই আশ্বাস দিক, তাতে মন গলছে না ন্যাটোর৷ সংস্থার মহাসচিব ইয়েন্স শটলটেনবার্ক বলছেন, ‘‘রাশিয়া যা বলছে, তার চেয়ে বেশি সেনা ব্যবহার করবে’’ স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার স্মৃতি বিবেচনায় এ কথা ভাবতেই পারে পশ্চিমা দেশগুলো৷ ন্যাটো সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান তিনি৷
ভয়ে আছে জার্মানিও
এ বছরের জাপাডে রাশিয়া ‘এক লাখেরও বেশি’ সেনা মোতায়েন করবে বলে আশংকার কথা জানিয়েছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ জানুয়ারিতে এক ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে লিথুয়ানিয়ায় ৪৫০ জন সেনাসদস্য পাঠিয়েছিল জার্মানি৷ এই মহড়া নিয়ে অস্বস্তিতে আছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ লিথুয়ানিয়াও৷
বেলারুশে বিক্ষোভ
জাপাড নিয়ে শুধু রাজনীতিবিদরাই বিচলিত নন, ক্ষোভ আছে খোদ বেলারুশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও৷ জাপাড শুরুর সপ্তাহখানেক আগেই রাজধানী মিনস্কে জড়ো হন শত শত বিক্ষোভকারী৷ দেশটির সাত হাজার সেনা অংশ নেবে রাশিয়ার সাথে যৌথ এই মহড়ায়৷ জাপাড দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে আর উন্নতি ঘটাবে বলে মনে করে রাশিয়া৷ ছবিতে বিক্ষোভকারীদের হাতের ব্যানারে লেখা রয়েছে ‘শান্তিপূর্ণ বেলারুশ চাই’৷