রাবি শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের রায়
১৫ এপ্রিল ২০১৯সোমবার বাকি আট আসামিকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন বিচারক অনুপ কুমার৷
দণ্ডিতরা হলেন রাজশাহীর কাটাখালি পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম মানিক, আবদুস সামাদ পিন্টু ও সবুজ শেখ৷ এর মধ্যে সবুজ শেখ পলাতক, অন্য দু'জন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷
পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যার পর ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দিকেই ছিল সন্দেহের তির৷
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপককে ক্যাম্পাসের পাশে চৌদ্দপাই এলাকায় বাড়ির সামনে হত্যা করা হয়৷ হত্যাকাণ্ডের পর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্টে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করা হয়েছিল৷ হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের তদন্তও সেদিকে এগোচ্ছিল৷ পরে র্যাবের মাধ্যমে তদন্তের মোড় ঘুরে যায়৷
র্যাব ওই বছরই যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর দাবি করে, বিভাগের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক' আচরণের প্রতিশোধ নিতে শফিউলকে হত্যা করা হয়৷ দণ্ডিত পিন্টু ঐ নারীর স্বামী৷ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি৷
মানিক রাজশাহীর কাটাখালি এলাকার চোরাচালান, বালুমহাল ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে বিএনপি নেতাদের ভাড়াটিয়া হিসাবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ পিন্টুর সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় যুক্ত হন তিনি৷
র্যাব জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ নভেম্বর অধ্যাপক শফিউল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলে পিন্টু তাকে অনুসরণ করেন এবং মোবাইল ফোনে তার গতিবিধি অন্যদের জানান৷ সেদিন মোটর সাইকেলে এক সহকর্মীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছিলেন শফিউল৷ ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুরে সহকর্মীকে নামিয়ে দিয়ে চৌদ্দপাই এলাকায় বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি৷ মহাসড়ক থেকে ২০০ গজ দূরে বাড়িতে যেতে কাঁচা রাস্তায় নামার পর তিনি হামলার মুখে পড়েন৷ শফিউলের ছেলে জঙ্গিদের দায়ী করলেও র্যাবের বক্তব্যের পর তাদের দেখানো পথেই এগোয় পুলিশের তদন্ত৷
শফিউলের ছেলের বক্তব্য
শফিউল ইসলামের ছেলে সৌমিন শাহরিদ অবশ্য দাবি করেছেন, হত্যা মামলার তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়নি৷ তিনি মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি ছিল৷ তিনি বলেছেন, সেসময় এসব বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে তাকে পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পরামর্শ দিয়েছিল প্রশাসন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা ঘটনাটি ঠিকমতো আমলেই নেয়নি এবং যারা এই ঘটনায় আসলে দায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে৷'' সৌমিনের দাবি, র্যাব এই মামলায় যুক্ত হয়ে মামলাটিকে অন্যখাতে প্রবাহিত করেছে৷
২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউস সাদিক ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন৷ অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, পিন্টুর স্ত্রী রেশমার নামও ছিল৷ তখন আটক হওয়ার পর রেশমা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন৷ তবে রায়ে তিনি খালাস পেয়েছেন৷
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনতাজুল হক বাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রারের করা এই মামলায় গত ১৩ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছিল৷ এ মামলায় ৩৩ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত৷ যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় দিলো৷
এপিবি/এসিবি (সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ডেইলি স্টার)