1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রবীন্দ্র ভাবনায় ‘গাছের ইস্কুল' দিচ্ছে স্বনির্ভরতার পাঠও

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ আগস্ট ২০২২

গাছের তলায় বসে পড়াশোনা। শিক্ষালাভের সঙ্গে প্রকৃতির সাহচর্য। তার উপর স্বনির্ভরতার পাঠ। আদিবাসী ছেলেমেয়েদের নিয়ে অভিনব স্কুল খুলেছেন কলেজ শিক্ষক।

https://p.dw.com/p/4G28k
Westbengalen l Hochschullehrer hat eine Schule gebaut l Fest
ছবি: Payel Samanta/DW

শীতল গাছের ছায়া। তার মধ্যে পাখির কিচিরমিচির। এর সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল কচিকাঁচাদের কলরব। এটাই ‘গাছের ইস্কুল'। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার শামলাপুর গ্রামে। শিশুরা পড়ছে, গাছ পুঁতছে, তার পরিচর্যা করছে। কীভাবে এ সব নিয়ে নিজের পায়ে ওরা দাঁড়াতে পারে, সেই শিক্ষাও দিচ্ছেন শিক্ষক অংশুমান ঠাকুর ও তার সঙ্গীরা।

রবি কবির ভাবনা

লকডাউনে দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তাতে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রান্তিক সমাজের ছোট ছেলেমেয়েদের। তাদের হাতে ফের বই-খাতা তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রিন হ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-এর। ২০২১-এর মার্চে খোলা হয় ‘গাছের ইস্কুল'। মোট আটজন এই মহতী কাজে যুক্ত রয়েছেন। অংশুমানের সঙ্গে রয়েছেন আরো দুই শিক্ষক বিপ্লব মণ্ডল ও ডলি সিংহ। জনা পাঁচেক ছেলেমেয়ে নিয়ে শুরু হওয়া এই স্কুলে পড়ুয়া এখন ৭০-এর বেশি। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অংশুমান বলেন, "শান্তিনিকেতনের সঙ্গে

এখানকার পরিবেশের মিল আছে। লাল মাটি, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাই রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতিচিন্তা ও শিক্ষা ভাবনার একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ গড়ে তোলার চেষ্টা।”

‘প্রকৃতিতে আনন্দপাঠের মধ্য দিয়ে ওরা বড় হবে, স্বনির্ভর হবে’

পড়ি, লিখি, গাছ পুঁতি

ঝাড়খণ্ড সীমানার কাছেই এই গ্রাম। আদিবাসী দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে এসে অক্ষর চেনে, ছড়া পড়ে, নামতা আওড়ায়। পেট ভরে খায়। বই, খাতা-পেন্সিল, পোশাক দেওয়া হয়। একেবারে শান্তিনিকেতনের আদলে গাছতলায় ওদের নিয়ে পড়াতে বসেন শিক্ষকরা। তাঁদের সঙ্গে পড়ুয়ারা মাটি খোঁড়ে, গাছ লাগায়। কীভাবে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে, তার পাঠও নেয়। অংশুমানের ভাষায়, "পরিবেশ নিয়ে কাজ মানে কয়েকটা গাছ লাগানো বা পুকুর সাফাই শুধু নয়। তা হলে কাজটা ওই কর্মসূচির দিনেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। তাই স্কুল তৈরির ভাবনা। শৈশব থেকে ওদের চেতনা ও জীবনচর্যায় প্রকৃতির গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলা। তবেই বিশ্ব উষ্ণায়নের মোকাবিলা করা যাবে।”

নিজের পায়ে দাঁড়াও

কোভিড অতিমারির জেরে লকডাউন হয়ে যাওয়ায় দেশ জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকের ঢল নেমেছিল যার বড় অংশে ছিলেন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ। শামলাপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সদস্যরাও কাজের খোঁজে ঘর ছেড়ে দূরে পাড়ি দেন। এই প্রবণতা দূর করতে অর্থনীতিকে এই উদ্যোগের সঙ্গে জুড়েছে গ্রিন হ্যান্ডস। শিশুর মায়েদের স্কুলের সঙ্গে একাত্ম করে তোলা হচ্ছে। হাতের কাজ শেখানো হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই চলে গেল রাখিবন্ধন

উৎসব। অংশুমান বলেন, "মাটি ও বীজ দিয়ে রাখি তৈরি করা হয়েছিল। উৎসবের পর ওই রাখি ফেলে দিলে তা থেকে গাছের জন্ম হবে। অল্প সময়ের মধ্যে মায়েদের হাতে ছয় হাজার টাকা তুলে দিতে পেরেছি। শিশুরাও তাদের মায়েদের দেখে শিখবে, এ ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার শিক্ষা পাবে। পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে উঠবে না।” চাটাই তৈরির মতো আরো হাতের কাজ শেখানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন এ কাজে যুক্ত সুপবিত্র মণ্ডল, ইলা দাস, ওঙ্কার ঘোষরা।

আদিবাসীর অলচিকি

আদিবাসী সংস্কৃতি যাতে রক্ষা পায়, সে ব্যাপারে সজাগ অংশুমানরা। এই ছেলেমেয়েরা অলচিকি হরফ চেনে না। একজন স্থানীয় শিক্ষকের সহায়তা নেওয়া হয়েছে যাতে তারা নিজেদের ভাষায় অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারে। অলচিকি হরফ শেখানোর জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এই মুহূর্তে সেই সামর্থ্য অবশ্য তাদের নেই। এমনটাই জানিয়েছেন ফরাক্কার নুরুল হাসান কলেজের বাংলার শিক্ষক অংশুমান ঠাকুর। আশার কথা, সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রিন হ্যান্ডস কোনো আবেদন রাখলেই বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাদের সমর্থনেই এগোচ্ছে ‘গাছের ইস্কুল'। দীপায়ন মণ্ডল, মৈত্রেয়ী ঘোষরা শামলাপুরে অনেকের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন।

আনন্দপাঠের গুরুত্ব

প্রাথমিকের পড়াশোনা যে কোনো দেশের শিক্ষা পরিকাঠামোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। কিন্তু শিক্ষায় কম ব্যয়বরাদ্দ, লকডাউনের প্রভাব,

শিক্ষকের অপ্রতুলতা, পড়ুয়াদের ড্রপ আউট-এ সেই পরিকাঠামোর অবস্থা তথৈবচ। তাই অংশুমান-বিপ্লব-ডলিদের চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। সংগঠনের সদস্য আনন্দ হান্ডা বলেন, "শিক্ষাদানের পদ্ধতি নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও তা বাস্তবায়নের পরিসর আমাদের দেশে তেমন পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে গ্রিন হ্যান্ডস-এর উদ্যোগ অসামান্য। প্রকৃতির কোলে আনন্দপাঠের মধ্য দিয়ে ওরা বড় হবে, স্বনির্ভর হবে।”