যৌন নিগ্রহের প্রতিবাদে দিল্লির রাস্তায় পদকজয়ী কুস্তিগিরেরা
যন্তর মন্তরে অবস্থান-বিক্ষোভ করছেন কুস্তিগিরেরা। অলিম্পিকে দেশের হয়ে পদক আনা কুস্তিগিরেরাও বিক্ষোভে আছেন।
কেন এই বিক্ষোভ?
সাতজন নারী কুস্তিগির অভিযোগ করেছেন, রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিং তাদের যৌন নিগ্রহ করেছেন। তারা পুলিশের কাছে এই অভিযোগ করেছেন। তারপরেও কিছু হয়নি। তারা অবিলম্বে ব্রিজভূষণকে ফেডারেশনের প্রধান পদ থেকে সরানোর দাবি করেছেন ও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
কারা আছেন বিক্ষোভে
প্রথম নারী কুস্তিগির হিসাবে অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পাওয়া সাক্ষী মালিক বিক্ষোভে আছেন। কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী বিনেশ ফোগত আছেন। বিনেশের বাবা মহাবীর ফোগতকে সামনে রেখেই 'দঙ্গল' তৈরি হয়েছিল। আমির খান সেখানে মহাবীরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতা বজরঙ্গ পুনিয়া আছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের প্রধান সব কুস্তিগির মিলেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। উপরের ছবিতে বিনেশ ও বজরঙ্গকে দেখা যাচ্ছে।
রাতভর রাস্তায়
যন্তর মন্তরে রাতভর রাস্তার উপরে চাদর পেতে শুয়ে থাকছেন কুস্তিগিররা। বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সারাদিন ধরে। যারা দেশের হয়ে অলিম্পিক, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসে পদক এনেছেন, তাদের পাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। তাদের কথা কেউ শুনছেনও না। সরকার চুপ।
আড়াই মাস আগে
আড়াই মাস আগে ঠিক এই অভিযোগ নিয়েই যন্তর মন্তরে প্রতিবাদ করেছিলেন কুস্তিগিররা। তখন বক্সার মেরি কমের নেতৃত্বে একটা কমিটি করে দেয় সরকার। সেই কমিটির একমাসের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। তাদের আরো দুই সপ্তাহ সমসীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়। রিপোর্ট জমা পড়েছে। কিন্তু সরকার তা প্রকাশ করেনি।
এবার কী হবে?
সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগতরা জানিয়ে দিয়েছেন, দাবিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। গতবার তারা ভুল করেছিলেন। কিছু মানুষের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেছিলেন। তারপর কিছুই হয়নি। তাই এবার তারা কোনো প্রতিশ্রুতিতে ভুলবেন না। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারাও এভাবেই বিক্ষোভ দেখিয়ে যাবেন।
সকলে স্বাগত
গতবার রাজনীতিকদের বিক্ষোভের জায়গায় ঢুকতে দেননি কুস্তিগিরেরা। এবার তারা জানিয়েছেন, গতবার ভুল হয়েছিল। এবার যে কেউ তাদের বিক্ষোভস্থলে আসতে পারেন। আগেরবার আসতে না দেয়ার জন্য তারা ক্ষমা চাইছেন। উপরের ছবিতে বজরঙ্গ পুনিয়া।
কে এই ব্রিজভূষণ?
ব্রিজভূষণ শরণ সিং হলেন উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত বিজেপি-র সাংসদ। অত্যন্ত প্রভাবশালী সাংসদ হিসাবে তার খ্য়াতি আছে। তিনি পাঁচবারের সাংসদ। চারবার বিজেপি-র হয়ে। একবার সমাজবাদী পার্টির হয়ে জিতেছেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। পরে সুপ্রিম কোর্ট তাকে অভিযোগমুক্ত বলে জানায়।
কী হবে?
কুস্তিগিরেরা জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরও করেনি পুলিশ। সাক্ষী, বিনেশদের মনে হচ্ছে, পুলিশের উপর প্রবল রাজনৈতিক প্রভাব আছে। তারা জানিয়েছেন, ক্রীড়ামন্ত্রকও চুপ। তারা মেডেল পেলে তখন মন্ত্রী, নেতারা ছবি তোলার জন্য ভিড় জমান। এখন তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তারাও এবার ঠিক করে এসেছেন, তারা শেষ দেখে ছাড়বেন।
আইনি ব্যবস্থা
বিক্ষোভরত কুস্তিগিরেরা জানিয়েছেন, তারা এবার প্রয়োজনে আইনি পথেও হাঁটবেন। তারা আগে দেখতে চান, সরকার কিছু করে কি না, যদি না করে, তাহলে তারা আইনি পথে হাঁটবেন। আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।