‘যে কোনো মুহূর্তে' শুরু হবে পারমাণবিক যুদ্ধ?
১৭ অক্টোবর ২০১৭কোরীয় উপদ্বীপে পরিস্থিতি ‘‘একটি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে ও পরমাণু যুদ্ধ যে কোনো সময়ে শুরু হতে পারে'', সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনের নিরস্ত্রীকরণ পরিষদকে বলেন উত্তর কোরিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত কিম ইন রিয়ং৷
‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ এলাকাআমাদের রকেটের পাল্লায়; যুক্তরাষ্ট্র যদি আমাদের পবিত্র রাজ্যাঞ্চলে এক ইঞ্চিও অনুপ্রবেশ করে, তাহলে ওরা পৃথিবীর যে কোনো কোণায় আমাদের গুরুতর দণ্ডদান থেকে রক্ষা পাবে না'', কিম ইন রিয়ং বলেন৷
উত্তর কোরিয়া নিয়মিতভাবে তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের শক্তি ও পাল্লা বাড়িয়ে বলে থাকে; তবে বিচ্ছিন্ন দেশটি ২০০৬ সাল যাবৎ ছ'টি পরীক্ষামূলক আণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এবং উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র গুয়াম দ্বীপে মার্কিন রাজ্যাঞ্চল অবধি পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে, বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও পিয়ংইয়াং-এর ঘনিষ্ঠতম মিত্রদেশ চীনের যৌথ আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সমরাস্ত্র কর্মসূচিকে থামাতে পারেনি৷
কিম ইন রিয়ং সোমবার নিরস্ত্রীকরণ কমিটিকে বলেন যে, তাঁর দেশ সারা বিশ্বে ‘‘পুরোপুরিভাবে পারমাণবিক সমরাস্ত্র বর্জন'' সমর্থন করে৷ কিন্তু যতোক্ষণ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘‘পরমাণু অস্ত্র নিয়ে হুমকি দিচ্ছে ও (পিয়ংইয়াংকে) ব্ল্যাকমেল করছে,'' (ততক্ষণ অবধি) উত্তর কোরিয়ার পক্ষে নিরস্ত্রীকরণ করা সম্ভব নয় – বলেন কিম ইন রিয়ং৷ তাঁর মতে ‘‘বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এতদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে চরম ও প্রত্যক্ষ পারমাণবিক হুমকির সম্মুখীন হয়নি৷''
ট্রাম্পের টুইটারে হুঙ্কার
জাতিসংঘে কিম ইন রিয়ং-এর বিবৃতির আগেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন যে, ‘‘প্রথম বোমা পড়া অবধি'' সংঘাত সমাধানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে৷
টিলারসন একটি কূটনৈতিক সমাধানের জন্য সচেষ্ট হলেও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত আগস্ট মাসে টুইট করেন যে, উত্তর কোরিয়ার হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এমন ‘‘অগ্নি ও রোষের'' বিস্ফোরণ ঘটবে, যা বিশ্ব আজ অবধি দেখেনি৷
ট্রাম্প পরে টিলারসনের প্রচেষ্টাকে টুইটারে হাস্যাস্পদ করেন এই বলে যে, টিলারসন কিম জং উন-এর সঙ্গে আপোশের চেষ্টা করে নিজের ‘‘সময় নষ্ট করছেন''৷ এছাড়া ট্রাম্প বারংবার উত্তর কোরিয়ার নেতাকে ‘লিটল রকেট ম্যান' বলে অভিহিত করেন৷ ‘‘নিজের শক্তির অপচয় কোরো না, রেক্স; যা করা দরকার, তা আমরা করব,'' ট্রাম্প যোগ করেন৷
‘সরাসরি আলাপ-আলোচনা', নাকি চূড়ান্ত প্রস্তুতি?
মঙ্গলবার মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী জন জে. সালিভ্যান তাঁর জাপান সফরের অবকাশে আভাস দেন যে, উত্তর কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি আলাপ-আলোচনার সম্ভাবনা থাকতে পারে৷ চীন ও অপরাপর দেশ এ ধরনের আলাপ-আলোচনার সপক্ষে হলেও, যতক্ষণ পিয়ংইয়াং তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, ততোক্ষণ অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেসরাসরি আলাপ-আলোচনায় বিমুখ – অন্তত বিমুখ ছিল৷ সালিভ্যান কিন্তু জাপানে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সংকট সমাধানের জন্য কূটনীতির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে৷
‘‘কালে প্রত্যক্ষ আলাপ-আলোচনার সম্ভাবনা আমরা পুরোপুরি নাকচ করি না'', সালিভ্যান টোকিও-য় তাঁর জাপানি সতীর্থের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর বলেন৷ ‘‘কিন্তু কূটনীতি ব্যর্থ হলে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্যান্য মিত্রদেশের সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে খারাপ ফলশ্রুতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে,'' তিনি যোগ করেন৷
এসি/ডিজি (এপি, ডিপিএ, রয়াটার্স)