যার কাছে ফ্যাশন একটি জীবনদর্শন
২৬ এপ্রিল ২০১৮এগারো তলা জুড়ে পঞ্চাশ আর ষাটের দশকের ফ্যাশন ফটোগ্রাফি৷ আলোকচিত্রীর নাম এফ সি গুন্ডলাখ, জাতিতে জার্মান৷ ৯১ বছর বয়সি গুন্ডলাখকে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে সুপরিচিত আলোকচিত্র শিল্পীদের মধ্যে ফেলা চলে৷
কিউরেটর ভ্যার্নার লিপার্ট বললেন, ‘‘এফ সি গুন্ডলাখ খুব ভালো মেজাজের মানুষ, কিন্তু অন্যদিকে খুব কড়া৷ উনি চান যে, প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি সঠিক হবে; উনি যা চান, তা সঙ্গে সঙ্গে করা না হলে, উনি খুব অসহিষ্ণু হয়ে পড়তে পারেন৷ সুদীর্ঘ জীবনে উনি স্বভাবতই বহু জায়গায় গেছেন, লক্ষ লক্ষ মাইল প্লেনে বসে কাটিয়েছেন৷''
গুন্ডলাখ তাঁর মডেলদের দূর-দূরান্তে, পৃথিবীর কোণায় কোণায় নিয়ে গেছেন৷ এভাবে তিনি স্বদেশের মানুষদের সীমিত জীবনে অসীমের ছোঁয়া এনে দিয়েছেন৷
লিপার্ট জানালেন, ‘‘উনি নিজেই বলেন যে, ফ্যাশন ফটোগ্রাফি আসলে সমাজের স্বপ্নের একটা প্রতিফলন৷ জার্মানির মহিলাদের কল্পনাতেও যা তখনো আসেনি, গুন্ডলাখ তার ছবি তুলে তাদের দেখিয়েছেন: পিরামিডের সামনে বেদিং ক্যাপ, অথবা কম্বোডিয়ার পটভূমিতে তোলা ছবি৷ জার্মানরা এমন সব ছবি এর আগে কখনো দেখেননি; ‘ব্রিগিটে' বা ‘কনস্টানৎসে' বা ‘ফিল্ম উন্ড ফুঙ্ক'-এর মতো পত্রিকাও যে বিনা বাক্যব্যয়ে তা মেনে নিয়েছে, এমন নয়৷''
কেননা গুন্ডলাখের দক্ষিণ অ্যামেরিকা বা উত্তর আফ্রিকায় তোলা ফ্যাশনের ছবি বা যাত্রাকাহিনির একটা অদ্ভুত নিজস্বতা ছিল৷ তাঁর মডেলরা সবাই ‘কুল', ক্যাজুয়াল এবং পরমাসুন্দরী – সব মিলিয়ে একটা আকর্ষণীয় লাইফস্টাইল৷
সেই সময়
লিপার্ট বললেন, ‘‘পঞ্চাশের দশকের কথা মনে করতে হবে৷ আমাদের মা বা দিদিমারা তখন যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে ব্যস্ত, ফ্যাশন নিয়ে ভাববার সময় নেই৷ তখন এ ধরনের ফ্যাশন ফটোগ্রাফি খুবই চিত্তাকর্ষক ছিল, মডেলরা ছিলেন সব মহিলার আদর্শ, ছবির নীচে তাদের নাম লেখা থাকত৷ মডেলরা সবাই ছিলেন বিখ্যাত, এমনকি গ্রীষ্মের গরমে যে ভারী চামড়ার ওভারকোটগুলো পরতে হত, সেগুলো পারিশ্রমিক হিসেবে বাড়ি নিয়ে যেতে পারতেন৷ ঠিক আজকের মতো ছিল না৷''
গুন্ডলাখের জন্ম ১৯২৬ সালে৷ দশ বছর বয়সে ছবি তোলার হাতেখড়ি৷ এই ছবিগুলো তখন টাইমার দিয়ে তুলেছিলেন৷
চল্লিশের দশকের শেষে আলোকচিত্রী হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করার পর গুন্ডলাখ ফ্যাশন ফটোগ্রাফিতে আসেন৷ মডেলদের পোজ আর ছবি তোলার উদ্ভুটে লোকেশান কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে ফ্যাশন ফটোগ্রাফির তারকায় পরিণত করে৷ তাঁর ছবিতে যেন ‘সাইটগাইস্ট' বা যুগচেতনা ধরা পড়েছে৷ গুন্ডলাখের আলোকচিত্র আজ সংস্কৃতির ইতিহাসের অঙ্গ৷
আজ পর্যন্ত গুন্ডলাখ সক্রিয় এবং বিভিন্ন প্রদর্শনীর দেখাশোনা করে থাকেন৷ এই ব্যাপক আলোকচিত্র সংগ্রহের শিল্পী হিসেবেই হোক, আর কিউরেটর হিসেবেই হোক, ফ্যাশন তাঁর কাছে শুধু ফ্যাশন নয় – ফ্যাশন তাঁর কাছে একটা জীবনদর্শনও বটে৷
গুন্ডলাখ বলেন, ‘‘ফ্যাশন মানে শুধু জামাকাপড় নয়৷ ফ্যাশন প্রতিটি মানুষের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ৷ প্রতিদিন সকালে আমাদের ঠিক করে নিতে হয়, আজ আমরা কী পরব৷ যে রংটা বেছে নিই, তা থেকে বোঝা যায়, আমাদের মনের অবস্থা আজ কেমন৷ এভাবেই মানুষ আর মানুষের মধ্যে নির্বাক কথোপকথন চলে৷''
‘ভার্টিক্যাল গালারি'-তে গুন্ডলাখের ফ্যাশন ফটোগ্রাফির প্রদর্শনী চলছে এপ্রিল মাসের সূচনা অবধি৷ চাইলে ছবিগুলো কেনাও গিয়েছে: এক একটি ছবির দাম ছিল ৩,০০০ থেকে ১৫,০০০ ইউরোর মধ্যে৷
নোরা শুস্টার/এসি