1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যেমন আছেন খালেদা জিয়া

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ জুলাই ২০২৩

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখনো অন্যের সাহায্য নিয়েই তারা বাসায় প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করেন। বাসায়ই মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

https://p.dw.com/p/4U7hi
প্রতিদিন চিকিৎসকেরা তার বাসায় যান
প্রতিদিন চিকিৎসকেরা তার বাসায় যানছবি: picture-alliance/dpa/ANN/The Daily Star

দলের মহাসচিব  ও কয়েকজন সিনিয়র নেতা ছাড়া অন্য কেউ তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান না। আর তাও প্রয়োজন হলে তিনিই খবর দেন। তার বাসায় নিয়মিত যান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ হাসপাতালে যান গত ১২ জুন। ওই দিন মধ্যরাতে তিনি তার গুলশানের ভাড়া বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। পাঁচ দিন পর ১৭ জুন তিনি ফিরোজায় ফেরেন। ওই সময় তার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করা হয়। তার চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, "মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে ম্যাডামকে এখন বাসায়ই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।” খালেদা জিয়া পুরনো লিভার সিরোসিস, অস্টিও আর্থাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। তার মেরুদণ্ড, ঘাড় ও হাতে সমস্যা, হাঁটুর সমস্যাসহ আরো কিছু শারীরিক জটিলতা আছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হন। গত বছরের জুন মাসে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান,"প্রতিদিন চিকিৎসকেরা তার বাসায় যান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তার চিকিৎসার জন্য যা দরকার তা করা হয়।”

‘রোজায় আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সন্তানসহ তার সঙ্গে ছিলেন’

তিনি বলেন,"এখনো তিনি একা কিছু করতে পারেন না। তবে অন্যের সহায়তা নিয়ে সব কাজকর্ম করতে পারেন।” অন্যের সহায়তা নিয়ে তিনি মাঝেমধ্যে দোতলার বারান্দায় যান।  তবে নিচে কখনো নামেন না।

খালেদা জিয়ার কাছাকাছি থাকেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া বাসায় মোটামুটি স্বাভাবিক খাবারই খান। তার বাসায়ই রান্না হয়। তবে তার বোন এবং ছোট ভাইয়ের বাসা থেকে মাঝে মাঝে খাবার পাঠানো হয়। তার বোন  সেলিনা ইসলামের ছেলের বউ এবং ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী প্রায় নিয়মিত বিকেলে তার বাসায় যান। খাবারও নিয়ে যান। আর গত রোজার পুরো এক মাস তার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলি রহমান। তিনি রোজার ঈদের পর লল্ডন চলে যান। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডা. আল মামুনও তার বাসায় যান। তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান লন্ডন থেকে তার নিয়মিত খোঁজ নেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।

গত কোবানির  ঈদে  বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় দেখা করেন। আর ১২ জুলাই একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার আগে ১০ জুলাই মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় দেখা করেন। আর তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং তার প্রেস উইং-এর সদস্যদের সঙ্গে তিনি প্রয়োজন হলে ডেকে কথা বলেন।

বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং-এর সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান,"তার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে তার বোন, তার ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী-এরা তার বাসায় যান। গত রোজায় মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী দুই সন্তানসহ পুরো মাস তার সঙ্গে ছিলেন। তারা ঈদের পর চলে যান।তবে দলের নেতাদের মধ্যে মহাসচিবকে প্রয়োজন হলে তিনি ডেকে কথা বলেন। আর কেউ দেখা করার অনুমতি পান না। তবে গত কোরবানির ঈদে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতি ঈদেই তারা দেখা করতে পারেন। এর বাইরে আমার দেখা মতে মহাসচিব ছাড়া আর কেউ দেখা করেন না।”

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,"বিএনপির সমাবেশ ও আন্দোলনে যোগ দেয়ার আগ্রহ তার হয়তো আছে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা সম্ভব হচ্ছে না। আমি গত কয় বছরে তাকে কখনোই দেখিনি যে তিনি রাজনীতি নিয়ে তিনি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিনি এখন নিজে  একা হাঁটাচলা করতে পারেন না। অন্যের সহায়তা লাগে। তাই কখনো নিচেও নামেন না। দোতলায়ই থাকেন।”

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা আছে। এর মধ্যে দুই মামলায় তিনি কারা ভোগ করছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যোরিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।  আর নাইকো মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান,"ম্যাডামকে যে দুইটি মামলায় দণ্ড দেয়া হয়েছে তার আপিল পেন্ডিং আছে। তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা আছে পাঁচটি। আর দুদকের মামলা আছে পাঁচটি। এগুলোর মধ্যে আছে নাইকো, গ্যাটকো, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির মামলা। নাইকো মামলায় বিচারিক আাদালত অভিযোগ গঠন করেছে। আমরা উচ্চ আদালতে অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আপিল করেছি, আপিল পেন্ডিং আছে। আর বাকি  মামলাগুলো ফৌজদারি । তিনি সেগুলোতে হুকুমের আসামি। এগুলো হামলা-ভাঙচুরের মামল। কুমিল্লা, খুলনা, ঢাকায় এরকম মামলা আছে। ওই মামলাগুলো নিয়ে আপাতত কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।”

তিনি বলেন, "খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে আছেন  নির্বাহী আদেশে। ফলে তার সঙ্গে দেখা করা বা তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে আদালত এখন আর কনসার্ন নয়।”

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে চিকিৎসার ছয় মাসের সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর থেকে তার পরিবারের আবেদনে দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে। সেভাবেই তিনি কারাগারের  বাইরে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন। চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা তাকে দেশের বাইরে নিতে চাইলেও সে অনুমতি মেলেনি।