1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীর স্লোগান বাতিলের ডাক শুভেন্দুর, বিতর্ক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ জুলাই ২০২৪

নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান 'সব কা সাথ সব কা বিকাশ'। এই স্লোগান 'বন্ধ করার' ডাক দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন শুভেন্দু অধিকারী। দলীয় নেতৃত্বই তার বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছেন।

https://p.dw.com/p/4iRzW
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী
শুভেন্দু অধিকারীছবি: Privat

সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সকলের উন্নয়ন। এই স্লোগান তুলে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদী। ২০১৪ সালে প্রথম তিনি এই স্লোগান দিয়েছিলেন। তারপরে ২০১৯ এর নির্বাচনে সকলকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের স্লোগান শোনা গিয়েছে। এখনো বিজেপির সভা, প্রচারে এই স্লোগান শোনা যায়। এই স্লোগান সম্পর্কে মন্তব্য করে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলকে অস্বস্তি ফেলে দিয়েছেন।

শুভেন্দুর মন্তব্য

বুধবার অনুষ্ঠিত হয় বিজেপির প্রদেশ শাখার কর্মসমিতির বৈঠক। এখানে এক হাজার ৮০০ প্রতিনিধির সঙ্গে রাজ্যস্তরে দলের সব প্রধান নেতা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন এই রাজ্য থেকে নির্বাচিত কেন্দ্রের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়করা। দিল্লির প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর, সুনীল বনশল, অমিত মালব্য, মঙ্গল পান্ডে প্রমুখ। এই বৈঠকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পর বক্তৃতা দিতে ওঠেন শুভেন্দু।

গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল তাদের পারফরম্যান্স উন্নত করে ২৯টি আসনে জয় পেয়েছে। বিজেপি ২০১৯ সালের সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি। অন্যান্য বারের মতো এই নির্বাচনে রাজ্যের ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু জনতার সমর্থন তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে গিয়ে। এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতার বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে।

সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, বিভিন্ন আসনে সংখ্যালঘু ভোট সব তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, "সব কা সাথ সব কা বিকাশ আর বলব না।"

এরপর শুভেন্দু বলেন, "জো হামারা সাথ হ্যায়, হাম উনকা সাথ (যারা আমাদের সঙ্গে আছে, আমরা তাদের সঙ্গে থাকব)। 'সব কা সাথ সবকা বিকাশ' বন্ধ করো।" অর্থাৎ বিরোধী দলনেতা বলতে চেয়েছেন, সংখ্যাগুরু অংশের সমর্থন তারা পেয়েছেন, তাদের পাশেই বিজেপির থাকা উচিত।

এই প্রসঙ্গে একধাপ এগিয়ে গিয়ে দলের সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি। বিরোধী দলনেতার ভাষায়, "সংখ্যালঘু মোর্চার দরকার নেই।"

মোদী-মমতা কার, কত ক্ষমতা?

বক্তব্য খারিজ

নরেন্দ্র মোদীর পছন্দের স্লোগান নিয়ে রাজ্যের শীর্ষ নেতা প্রশ্ন তোলায় অস্বস্তিতে পড়েন প্রদেশ নেতৃত্ব। সুকান্ত মজুমদার খারিজ করে দেন এই মন্তব্য। রাজ্য সভাপতি বলেন, "এই অবস্থান দলের নয়। 'সব কা সাথ সব কা বিকাশ' হচ্ছে সরকারের ঘোষিত নীতি। আমরা সকলের পাশে, সকলের জন্য আছি। বিরোধী দলের নেতা প্রতিনিধি হিসেবে একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাব দিতে পারেন।"

এভাবে সুকান্ত ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করার পরও বিতর্ক চাপা রাখা যায়নি। দলের মুখপাত্র ও সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "বিরোধী দলনেতার এটা ব্যক্তিগত মতামত। দলের অবস্থান নয়।"

শুভেন্দুর এহেন মন্তব্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব খুশি নয়। এমনই খবর বিজেপি সূত্রের। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুভেন্দু নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, "আমি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কথাটা বলেছি। এর সঙ্গে 'সব কা সাথ সব কা বিকাশ' স্লোগানের সম্পর্ক নেই।"

সংখ্যালঘু মোর্চা নিয়েও শুভেন্দুর বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছেন সুকান্ত। তিনি বলেন, "আমাদের দলের কাঠামোতে সংখ্যালঘু মোর্চার গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। বিজেপি বিশ্বাস করে, এই মোর্চার কর্মীরা দলের সম্পদ। কেউ প্রস্তাব দিলেই তা গৃহীত হবে, তার কোন মানে নেই।"

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, "বিরোধী দলনেতা সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করেছেন। মোদীকে দলের ভিতর থেকে শুনতে হচ্ছে, তার স্লোগান চলবে না।"

বিজেপি মুখপাত্র ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, "শুভেন্দু অধিকারী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি তার মত জানাতে পারেন। কিন্তু দল এটা নীতি হিসেবে ঘোষণা করেছে কি? ঘোষণা না করলে অস্বস্তির কিছু নেই।"

সংগঠনের প্রশ্ন

একের পর এক নির্বাচনে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কর্মসমিতির বৈঠকে একাধিক নেতা এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। সেখানেও পরস্পরবিরোধী মত উঠে এসেছে।

শুভেন্দু বলেন, "আমরা বিধানসভার ভিতরে বাইরে লড়াই করেছি। সফলভাবে নবান্ন অভিযান করেছি। তার পরেও কেন এই ফল সেটা বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। উত্তরবঙ্গ, আরামবাগ, বাঁকুড়া আসন হারব, এটা ভাবতেও পারি না। সংগঠন নিয়ে যা আমার বলার, দিল্লিকে জানিয়েছি। আগে সংগঠন মজবুত করতে হবে। আমি বিরোধী দলনেতা, সংগঠনের কেউ নই।"

সুকান্ত এই বক্তব্য খারিজ করে বলেন, "সকলের সাংগঠনিক ক্ষমতাকে সম্মান করে বলছি, ভোটে সংগঠনের ভূমিকা থাকে ২৫ শতাংশ। যতদিন না কোন দল ক্ষমতায় আসছে, ততদিন সেই দলের সংগঠন দুর্বলই থাকে। বিরোধী দলনেতা রাজ্য কোর কমিটির সদস্য। সেটাও সাংগঠনিক পদ।"

পথে কোন্দল

কর্মসমিতির বৈঠকের দিন অস্বস্তি বাড়িয়েছে উত্তর কলকাতায় বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল। প্রকাশ্য রাস্তায় বিজেপির দুই শিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা গেল। দলের পুরনো কার্যালয় মুরলীধর সেন লেনে গোলমালে জড়ালেন একাধিক গোষ্ঠীর নেতা, কর্মীরা।

লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে খারাপ ফলের পর সম্প্রতি উপনির্বাচনে চারটি কেন্দ্রে হেরেছে বিজেপি। তিনটি আসন তাদের হাতছাড়া হওয়ার পর রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। বুধবার পুরনো কার্যালয়ের সামনে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ ও আদি বিজেপি পরিবারের পক্ষ থেকে সত্যাগ্রহ ও অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছিল।

সকালে মুরলীধর সেন লেনে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে মালা দিয়ে আদি বিজেপি কর্মীরা তাদের কর্মসূচি শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় দলীয় কার্যালয়ে থেকে বিজেপি কর্মীরা বেরিয়ে এসে চড়াও হয় বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের উদ্যোক্তাদের উপর।

দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল বচসা থেকে হাতাহাতি হয়। কার্যালয় থেকে বেরোনো বিজেপি কর্মীরা লাঠি নিয়ে হামলা করে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আদি বিজেপি নেতারা।