মোদীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের বৈঠক
২৮ এপ্রিল ২০১৮বিজেপির আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০ জন সদস্যের এক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে প্রায় এক ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রাজনৈতিক মত বিনিময় করেন৷ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দেশের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ তিনি মিলিত হন বিজেপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গেও৷ সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এই বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি৷ তবে দিল্লির কূটনৈতিক মহল এই বৈঠককে ভারত ও বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন৷ আলোচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থী, ঝুলে থাকা তিস্তা ইস্যু, আসামে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত নাগরিকত্ব তালিকা সংশোধন করতে জাতীয় রেজিস্টার অফ সিটিজন্স-এর নতুন আদমসুমারি, নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ভিত সর্বস্তরে মজবুত করা ইত্যাদি বিষয়গুলি উঠে এসেছে বলে জানা যায়৷
রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে দিল্লির অবস্থান হলো, প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো৷ এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের উচ্চস্তরের বৈঠক নিয়ে ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই বৈঠকের দু'টো প্রধান কারণ আছে৷ এর মধ্যে প্রথম হলো রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্য৷ চীন ও পাকিস্তান হয়ত চাইছে – প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতাবস্থা এবং ঢাকা-দিল্লির স্থিতিশীল সম্পর্কের স্থিতাবস্থায় ভাঙন ধরাতে৷ অভ্যন্তরীণ স্থিতাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করে হাসিনা সরকারকে গদিচ্যুত করা গেলে ভারতবিরোধীতাও জোরদার হবে৷ জামায়াতের প্রভাব বাড়বে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হবে৷ তাই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় এবং হাসিনা সরকারের পুনর্নিবাচনের পথ যাতে মসৃণ হয়, সেবিষয়ে ভারতের সজাগ থাকা উচিত৷ তবে গণতন্ত্রের শেষ কথা বলবেন বাংলাদেশের জনগণই৷''
তিনি বলেন, ‘‘দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দেশবিরোধী কাজের অপরাধে হাসিনা সরকার যাদের ফাঁসি দিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে বা যা নিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়েছে বা হতে পারে, সেই ইস্যুটি৷ কারণ বাংলাদেশে ইসলামি ভাবাবেগের পরিকাঠামো আছে, যেটা হাসিনাবিরোধিতায় কাজে লাগানোর আশংকা আছে৷
তবে পাশাপাশি এ কথাও ঠিক যে হাসিনার শাসনে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় যে লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে হবে৷ উল্লেখ্য, বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির অপরাধে জেলবন্দি করায় তা রাজনৈতিক উত্তেজনায় ইন্ধন জুগিয়েছে৷ গত নির্বাচনে বিএনপি যোগ দেয়নি৷ এ বছরের নির্বাচনে যোগ দিতে পারবে কিনা তাও অনিশ্চিত৷ হাসিনা সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন বানচাল করতে এখনও বিএনপি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিরোধী দলের দাবি, বিনাশর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে৷ অথচ বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক কোনো ব্যক্তি যদি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে সাধারণ নির্বাচনে তিনি দাঁড়াতে পারবেন না৷
তিস্তা নদীর জলবণ্টন ইস্যুর জট খুলতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের প্রধান ওবায়দুল কাদের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে কলকাতা যাচ্ছেন৷ তিনি অবশ্য বলেছেন, দিল্লি সফরের সঙ্গে এর কোনো যোগ নেই৷ বাংলাদেশে নির্বাচনের মুখে তিস্তা ইস্যু যে হাসিনা সরকারের কাছে এক বড় বিষয়, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক লাহিড়ি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিস্তা নদীর জলবণ্টন দু'দেশের কাছেই এক জাতীয় ইস্যু৷ এর ইতিবাচক নিষ্পত্তি যাতে হয়, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তা দেখা উচিত৷ বাংলাদেশের মানুষ দেখেছেন, তিস্তা নিয়ে মোদী সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই৷ শুধুমাত্র আঞ্চলিক স্বার্থে সেটা আটকে আছে৷ দু'দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এর দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার৷ আসামে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণ নিয়ে যেটা চলছে, মনে হয় না সেটা বড় রকম বাঙালি খেদাও অভিযান হয়ে উঠবে৷ নাগরিকত্ব সংশোধন তালিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এমন কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেবে না, যেটা দু'দেশের সম্পর্কে আঁচ পড়তে পারে৷ মোটকথা দিল্লি ও ঢাকাকে একে-অপরের হাত ধরেই চলতে হবে৷''
বাংলাদেশের এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন অন্যান্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ ভট্টাচার্য্য, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুবুল আলম হানিফ প্রমুখ৷ অন্যদিকে ভারতের পক্ষে বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে প্রমুখ৷
২০১৫ সালের এই ছবিঘরটি দেখুন...