মুক্ত জীবনেও বন্দিত্বের রেশ
১২ জুন ২০১০মুক্তি মিলেছে, তবে তা আক্ষরিক অর্থে, বন্দি জীবন কেড়ে নিয়েছে তাদের দুরন্ত শৈশব৷
হেন্টশেল এর পরিবারের বাস জার্মানির সাক্সোনি রাজ্যের বাউসেন শহরের কাছের মেশভিৎস এলাকায়৷ সাবিন এবং সিমন দুজনেই কাজ করতেন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থায়৷ তাদেরই মেয়ে চার বছরের আনা ও ছয় বছরের লিডিয়া৷ ছোট আরেকটি ভাইও আছে আনা-লিডিয়ার৷ তবে অন্য শিশুটিসহ হেনৎশেল দম্পতির কী অবস্থা, তা এখনো অজানা৷
২০০৪ সালে ইয়েমেনে যান সাবিনে ও সিমন৷ একজন নার্স, অন্যজন প্রকৌশলী৷ সাদা প্রদেশের একটি হাসপাতালে কাজ করতেন তাঁরা৷ ২০০৯ সালের ১২ জুন কাল হয়ে আসে পরিবারটির জীবনে৷
অফিসের অন্য কয়েকজনের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন হেনৎশেল দম্পতি৷ তিন সন্তানকেও সঙ্গে নিয়েছিলেন৷ তবে বেড়ানো শেষে আর ফেরা হয়নি ঘরে৷ তার আগেই পড়তে হয় অপহরণকারীদের কবলে৷ এর পর অনেক খোঁজ করেও সন্ধান মেলেনি তাদের৷
এ বছরের ১৭ মে সৌদি পুলিশ ইয়েমেন সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে আনা ও লিডিয়াকে৷ এর দুদিন পর জার্মানিতে উড়িয়ে আনা হয় তাদের৷ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে৷
কিন্তু এখন কেমন আছে তারা- জানতে চাইলে শিশু দুটির মামা রাইনহার্ড পয়েৎশকে যা বললেন, তাতে বোঝা গেলো, ভালো নেই তারা৷
মুক্তির পর মাস গড়াতে চললেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি আনা ও লিডিয়া৷ নিজেদের নামও ভুলে গেছে তারা৷ একজন নিজের পরিচয় দেয় ফাতিমা বলে৷ অন্য জন বলে, তার নাম সারাহ৷ কথা বলে কম, যে টুকু বলে, তাও আরবিতে৷
রাইননহার্ড বলেন, ‘মনে হয়, বন্দি অবস্থায় দীর্ঘ সময় শিশু দুটিকে বাবা-মার কাছ থেকে আলাদা রাখা হয়েছিলো৷ তাই তারা বাবা-মার কথাও ভুলে গেছে৷ তাদের কথা জানতেও চায় না৷'
তার ধারণা, বন্দি অবস্থায় শিশু দুটি ছিলো ইয়েমেনের কোনো আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে৷ যার প্রভাব এখনো কাটছে না৷ আর বন্দিদশায় কারো সঙ্গে খুব একটা মিশতে দেওয়া হয়নি তাদের৷
তবে আনা ও লিডিয়ার শারীরিক কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন তাদের মামা৷ তিনি বলেন, তারা পুতুল নিয়ে খেলে৷ আর ছবি আঁকতে পছন্দ করে৷
শিশু দুটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা৷ স্থানীয় গির্জায় প্রার্থনার আয়োজনও করা হয়৷ তবে কাজটি যে কঠিন তা মানছেন রেইনহার্ডও৷
উত্তর ইয়েমেনের যে এলাকায় অপহরণের ঘটনাটি ঘটে, তা শিয়া আদিবাসীদের শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত৷ তবে অপহরণের কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি আজও৷
সেদিন হেন্টশেল দম্পতির সঙ্গে অপহৃত হয়েছিলেন দুজন জার্মান নার্স, একজন দক্ষিণ কোরিয়ান শিক্ষক এবং একজন ব্রিটিশ প্রকৌশলী৷ দু নার্স এবং শিক্ষকের সন্ধান কয়েকদিনের মধ্যেই পাওয়া যায়, তবে জীবিত নয়, মৃত৷
আনা ও লিডিয়াকে পেয়ে খুশি তার স্বজনরা৷ তবে এর মধ্যেও বিষাদের সুর, কারণ বাকি তিন জনের খোঁজ যে এখনো মেলেনি৷ তাঁরা বেঁচে নেই বলেই অনেকের ধারণা৷ তবে তা মানতে স্বজনদের মন সায় দিচ্ছে না৷ রাইনহার্ড বলেন, ‘আমরা এখনো আশা করি৷ তাঁরাও ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে৷ আনা আর লিডিয়ার মতো৷'
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার