1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মালদ্বীপ বিতর্ক এবং কিছু প্রশ্ন

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ
৮ জানুয়ারি ২০২৪

সম্প্রতি মালদ্বীপের কিছু মন্ত্রী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা এক কথায় কুৎসিত। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে, তা-ও রুচিপূর্ণ নয়।

https://p.dw.com/p/4axpS
মালদ্বীপে সমুদ্রের ধারে
পর্যটকদের প্রিয় মালদ্বীপছবি: LAKRUWAN WANNIARACHCHI/AFP/Getty Images

মাসকয়েক আগেই ভারতের সঙ্গে ক্যানাডার কূটনৈতিক বিতর্ক দেখেছি আমরা। সেই বিতর্ক এখনো অব্যাহত। ভারত এবং ক্যানাডা দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়। ফলে মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্য যত গড়িয়েছে, বিতর্কও তত তীব্র হয়েছে।

এখানেই ক্যানাডা বিতর্কের সঙ্গে মালদ্বীপবিতর্কের তফাত। বস্তুত, বিভিন্ন দিক থেকেই মালদ্বীপ রাষ্ট্রটি ভারতের উপর নির্ভরশীল। তবে সম্প্রতি কূটনীতিকেরা বলছেন, আরো অনেক প্রতিবেশীর মতো মালদ্বীপও ভারত থেকে খানিকটা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ভারতের সেনা বাহিনী মালদ্বীপে থাকবে কি না, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন আগেই বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন সেখানকার প্রধানমন্ত্রী। সেই বিতর্ক খুব বেশি দূর গড়ায়নি।

সম্প্রতি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার পর মালদ্বীপের অন্তত তিনজন মন্ত্রী তা নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অন্য দেশের দায়িত্বশীল মন্ত্রী এধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভারত তার তীব্র নিন্দা করেছে। মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, মালদ্বীপ একবার নয়, বার বার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, তারা এধরনের মন্তব্য স্বীকার করে না। যাদের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছিল, দ্রুত তাদের সকলকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এখানেই ক্যানাডা বিতর্কের সঙ্গে মালদ্বীপ বিতর্কের তফাত। মালদ্বীপ রাষ্ট্র হিসেবে কুরুচিকর মন্তব্য করা মন্ত্রীদের থেকে নিজের দূরত্ব তৈরি করে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা এই বিতর্ক শেষ করতে চাইছে। স্বয়ং মালদ্বীপের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হোক এমন কোনো কিছু তিনি হতে দেবেন না।

মালদ্বীপ বিতর্ক শুরু হওয়ার পরেই বলিউড এবং ক্রিকেটারদের একাংশ হঠাৎই খুব চঞ্চল হয়ে উঠছেন। মালদ্বীপ নিয়ে টুইটের বন্যা বইছে। যার সর্বশেষ ব্যক্তি স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন। অক্ষয় কুমার থেকে জন অ্যাব্রাহাম, শ্রদ্ধা কাপূর থেকে সচিন টেন্ডুলকর সকলেই মালদ্বীপের মন্ত্রীদের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন এবং লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের আহ্বান জানিয়েছেন। সকলেরই বক্তব্য লাক্ষাদ্বীপ কোনো অংশে কম নয়।

তারকাদের বক্তব্য এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু এরপরেই অতি উত্তেজিত হয়ে কেউ কেউ বলে ফেলছেন, বয়কট মালদ্বীপ। এখানেই সমস্যা। কেউ দোষ স্বীকার করে নেয়ার পরেও যদি তাকে শাস্তি দেওয়া হয়, তখন সেই ব্যবহারও সমপরিমাণ কুরুচিকর। চোখের বদলে চোখের এই সংস্কৃতি বিদ্বেষ বাড়ায়। আমি বড় এটা প্রমাণ করতে গিয়ে অন্যকে যখন ছোট করার প্রবণতা তৈরি হয়, তখন তাকে দাদাগিরি বলে।

মালদ্বীপ বিতর্ক ঘিরে যে টুইটের বন্যা বইছে তা আসলেই ওই দাদাগিরির একেকটি অন্যতম নমুনা। এই মন্তব্যগুলি আসলে মালদ্বীপের ওই মন্ত্রীদের করা মন্তব্যের মতোই কুৎসিত। মালদ্বীপের ওই মন্ত্রীদের টুইট যেমন সমর্থনযোগ্য নয়, তারকাদের কারও কারও মন্তব্যও তেমন সমর্থনযোগ্য নয়।

কূটনৈতিক মহলে মালদ্বীপ বিতর্ক ক্রমশ থিতিয়ে আসছে। আরো থিতিয়ে যাবে। সমাজমাধ্যমেও এবার কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ হোক। মজার বিষয় হলো, মালদ্বীপের মতো প্রবল দামি পর্যটনকেন্দ্রে সাধারণ ভারতীয়েরা যান না। যে তারকারা এসব লিখছেন, তারাই দিনের পর দিন গেছেন। অবশ্যই তারা লাক্ষাদ্বীপের জন্য গলা ফাটান। অবশ্যই সাধারণ পর্যটকদের কাছে লাক্ষাদ্বীপকে তারা প্রমোট করুন। কিন্তু তুলনা টানবেন না। দুই জায়গার সৌন্দর্যকেই একই সঙ্গে স্বীকার করে নিন।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো