1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মার্কিন ভিসা নীতিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমও যুক্ত হবে- রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কেউ বলছেন, এটা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, আবার কেউ মনে করছেন এটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় সহায়ক হবে।

https://p.dw.com/p/4WmrF
Bangladesh Zeitungen
ছবি: DW

বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যারা বাধা হবে তাদের ব্যাপারে মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু হয়েছে৷ এরইমধ্যে সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ এর আওয়তায় এসেছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রবিবার একটি বেসরকারি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হাস বলেছেন, মার্কিন ভিসা নীতিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমও যুক্ত হবে৷ তবে তিনি এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি৷

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সাংবাদিক এবং যারা বাক স্বধীনতা নিয়ে কাজ করেন তাদের মতামত জানতে চাইলে নানা ধরনের মতামত উঠে আসে৷ সেগুলোকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। কেউ পাল্টা প্রশ্ন রাখছেন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে? কেউ কেউ মনে করছেন, এর ফলে গণমাধ্যম আরো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। তবে আরেকটি অংশ মনে করছে, পিটার হাসের বক্তব্য আরো স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

সিনিয়র সাংবাদিক, এমিরেটাস সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘অনেক কথার ভিড়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওই কথা বলেছেন। আমরা এখনো ক্লিয়ারলি জানি না এটার মডালিটিস কী হবে৷  আমার ধারণা, তারা তাদের পারপাসের সিরিয়াসনেস বোঝাবার জন্য এইটাই বলতে চাচ্ছেন যে,  একটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনকে যারা নিরুৎসাহিত করবে, বাধাগ্রস্ত করবে, বাধা তৈরিতে কাজ করবে, এমনকি সেটা যাদ মিডিয়া হয় তাহলে তারাও ভিসা নীতির আওতায় পড়বে৷”

আমি মনে করি না, যুক্তরাষ্ট্র সাংবাদিকদেরকে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়: ইলিয়াস খান

তার কথা, ‘‘অ্যামেরিকা মিডিয়ার স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করে৷ তাই আমি মনে করি না যে, তাদের কোনো অ্যাকশন মিডিয়ার স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করবে বা এমন কোনোভাবে ব্যবহৃত হবে৷’’

তিনি মনে করেন, সংবাদমাধ্যমের উচিত এই বিষয়টি নিয়ে পিটার হাসের আরো বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নেয়া৷

আর গ্লোবাল টিভির চিফ এডিটর সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘‘যারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের সবার জন্যই তো মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকর হবে৷ সেক্ষেত্রে মিডিয়া তো তার বাইরে নয়৷’’ তার কথা, ‘‘তবে বাংলাদেশের গণমাধ্যম তো বাংলাদেশের আইন, এখানকার সিস্টেমের বাইরে যেতে পারবে না। আমাদের গণমাধ্যমের তো মালিকানার বিষয় আছে, যার যার নিজস্ব পলিসি আছে৷ আর রাজনৈতিকভাবে আমাদের সমাজ যেহেতু বিভাজিত, তার কিছুটা চাপ গণমাধ্যমের ওপর আসে৷ কিন্তু সামগ্রিকভাবে এইরকম একটা চাপ যদি বাইরে থেকে আসে, আমাদের জন্য অনেক দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি তাহলে আমাদের গণমাধ্যমেরও টুঁটি চেপে ধরছে যে ‘তোমাদের আমাদের কথাই বলতে হবে?’- এই প্রশ্নটা কিন্তু আসে৷’’

তবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, ‘‘কোনো গণমাধ্যম যদি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে পারে বলে আমি মনে করি৷’’

তার কথা, ‘‘এখানে অনেক গণমাধ্যম সরকারের পারপাস সার্ভ করে। এখানে মালিকদের দায় আরো বেশি৷ সাংবাদিকদেরও একটি অংশ আছে৷ আমি মনে করি না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখানকার সাংবাদিকদের, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়৷ যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, তাদের তো কোনো সমস্যা নেই৷”

তবে জাতীয় প্রেসক্লাবের বতর্মান সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত মনে করেন, ‘‘গণমাধ্যম একটি নির্বাচনের ব্যাপারে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? গণমাধ্যম পক্ষে-বিপক্ষে দুইভাবেই ভূমিকা রাখতে পারে৷ আবার এটাই তো আবার মুক্ত গণমাধ্যম চর্চার একটা নজির হিসেবে থাকে৷ আমিও ঠিক স্পষ্ট নই৷ আর উনিও (পিটার হাস) ক্লারিফাই করেননি প্রোপারলি যে মার্কিন ভিসা নীতি মিডিয়ার ব্যাপারে কীভাবে প্রয়োগ করা হবে৷ তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই ধরনের অ্যাপ্রোচগুলো একটা অগণতান্ত্রিক অ্যাপ্রোচ৷”

এই ধরনের অ্যাপ্রোচগুলো অগণতান্ত্রিক: শ্যামল দত্ত

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘এক শ্রেণির সাংবাদিক, যারা জনগণের স্বার্থের বাইরে গিয়ে দলীয় চিন্তায় সাংবাদিকতা করেন, এটা যদি তাদের ব্যাপারে, তাহলে এই ভিসা নীতি নেয়া যায়৷ তবে তারা যদি এটা দিয়ে অন্যভাবে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে এটা সমস্যার কারণ হবে৷”

আর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, ‘‘এই ভিসা নীতি সাংবাদিকদের জন্য কোনো চাপ নয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাকে ভিসা দেবে বা দেবে না এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷ ওই দেশে নির্বাচনের সময় একেকটি গণমাধ্যম সরাসরি কোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়৷ আমাদের এখানে সেটা হয় না৷ তবে আমাদের এখানে অ্যাজেন্ডা সাংবাদিকতা আছে৷ আর গণমাধ্যমের সহায়তায়ই দেশে বা দেশের বাইরে জানতে পারে যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা৷ তাই গণমাধ্যমকে ভিসা নীতির মাধ্যমে কোনো চাপ দেয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না৷’’

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিকাব)-এর সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণ আছে। তারই আলোকে বিভিন্নজনের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করছে৷ এখন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যে বলেছেন, মিডিয়া বা সাংবাদিকরাও এর আওতায় আসবে৷ আমি মনে করি, এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য নয়, এটা তার দেশের অবস্থান, তিনি উল্লেখ করেছেন মাত্র৷ কারণ, রাষ্ট্রদূতরা যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই দেশের অবস্থান বা নীতি তুলে ধরেন মাত্র৷ সুতরাং তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা বা তার উপর ক্ষোভের কিছু নেই৷’’

গণমাধ্যম তো বাংলাদেশের আইন, সিস্টেমের বাইরে যেতে পারবে না: সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

বাংলাদেশ ওভারসিজ করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘‘গণমাধ্যমের ওপরে  মার্কিন ভিসা স্যাংশন আসতে পারে- এটা আমার কাছে একটু অন্যরকম মনে হয়েছে৷ আমরা সারা পৃথিবীতে দেখছি যে, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে মিডিয়া৷ মিডিয়া ফ্রিডমের জন্য সারা পৃথিবীতে এক ধরনের প্রচেষ্টা আছে, সংগ্রাম আছে৷ ফ্রি মিডিয়ার কথা বলা হচ্ছে৷ সেইখানেই আমরা দেখছি, নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হচ্ছে৷ তাদের ( যুক্তরাষ্ট্র) এই ধরনের প্রচেষ্টায় মিডিয়া ফ্রিডমের ওপর আঘাত আনবে কিনা সেটাও বিবেচনা করা প্রয়োজন৷’’

এদিকে বাক স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আর্টিক্যাল নাইটিন-এর দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান ফারুক ফয়লাল মনে করেন, ‘‘মার্কিন এই ভিসা নীতি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সহায়ক হবে৷ সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে এরকম লোকের অভাব নেই৷ এখন এইসব লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা হয়, তাহলে তাদের স্যাংশন দেয়া হবে বলে আমি করি৷ তাই এটা গণমাধ্যমের ওপর চাপ নয়, বরং, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার সুযোগ করে দেবে৷ নির্ভয়ে মত প্রকাশ করা যাবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান