1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মানুষ বেশি হলে ঝুঁকিও বেশি হবে এমন কোনো কথা নেই’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৩ মার্চ ২০২০

করোনা এখন বড় এক আতঙ্কের নাম৷ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ কি একটু বেশি ঝুঁকিতে? যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন বা দিতে প্রস্তুত আছেন, তাদের কি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে?

https://p.dw.com/p/3ZNmi
ছবি: Privat

মিডিয়া কতটুকু দায়িত্বশীল? ডয়চে ভেলের সঙ্গে এসব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন, রোগ তত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা৷

ডয়চে ভেলে : আপনারা দু'টি হাসপাতালকে নির্ধারিত রেখেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তা কি যথেষ্ট?

অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা : আসলে আমরা দু'টি হাসপাতাল নির্ধারিত রাখিনি৷ আগে থেকেই আমরা প্রতিটি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট করেছিলাম৷ প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ৫টি করে বেড আমরা সব জায়গায় রেখেছিলাম৷ এখন আমরা খুঁজছি, এমন হাসপাতাল ৫০ বেড বা ১০০ বেড হাসপাতাল, যেখানে এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি৷ পৃথক আইসোলেশন ইউনিট করার চেষ্টা করছি৷ এর মধ্যে ঢাকায় একটাকে পৃথক করে রেখেছি৷ যেখানে অন্য কোনো রোগী ভর্তি হয় না৷ আরো কয়েকটি হাসপাতালে পৃথক বেড রাখা হয়েছে৷ আরো দুই তিনটি হাসপাতাল পৃথক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ 

রোর্গ নির্ণয়ের স্থান কতগুলো?

এটা শুধুমাত্র আমাদের অফিসেই রেখেছি৷ এটা না হলে ঝামেলা হয়ে যাবে৷

রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জাম কি শুধু আপনাদের এখানেই আছে, নাকি অন্য জায়গাতেও আছে?

এটা শুধুমাত্র আমাদের এখানেই রেখেছি৷ কারণ, একটা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সেটাকে ফলোআপ করতে হয়৷ এই কারণে অন্য কোথাও দেইনি৷ যেহেতু এখানে রোগীর সংখ্যাও কম, তাই আমাদের নেটওয়ার্ক করা আছে, স্যামপল আমাদের এখানে চলে আসে৷ আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আমরা এক জায়গায় রেখেছি৷ 

তাহলে জেলা শহরে করোনা ভাইরাস নির্ধারণে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?

জেলা শহরে যদি কেউ ‘সাসপেকটেড' হয়, আমাদের সার্ভিলেন্স টিম সেখানে গিয়ে স্যামপল কালেক্ট করে৷ প্রথম হটলাইনে কল করে৷ তারপর আমরা সাজেষ্ট করি, সে কোথায় যাবে৷ কাছের হাসপাতালে যেতে বলি আমরা৷ আমাদের টিম স্যামপল কালেক্ট করে ঢাকায় পাঠানোর পর আমরা পরীক্ষা করে তারপরই সিদ্ধান্ত দেই৷ 

আমরা দেখছি, কিছু হাসপাতালে সর্দি-কাশি নিয়ে গেলেও চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন না৷ আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন৷ এর থেকে পরিত্রাণের পথ কী?

আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি৷ হঠাৎ করেই তো ধরা পড়েছে৷ অনেকে মনে করছেন, রোগী হয়ত আরো বেশি আছে৷ অনেকেই কনফিউশনে আছেন, মনে করছেন টেষ্ট করলে ভালো হয়৷ এখন পর্যন্ত আমাদের তিনটি রোগী৷ এটা সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করছি৷ তবে সার্ভিলেন্স হিসেবে আমরা কিছু মানুষের স্যামপল টেস্ট করে দেখছি, তাদের মধ্যে পজেটিভ হয় কিনা৷ যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের থেকেই আমরা এগুলো টেষ্ট করছি৷

বিদেশ থেকে আসা মানুষদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা বলেছেন৷ কেউ যদি না থাকে, সেগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে?

জেলা শহর বা উপজেলা লেভেলে ইউনিয়ন পরিষদ অফিস বা স্বাস্থ্য সহকারীদের দিয়ে আমরা তাদের মনিটরিং করছি৷ আমাদের উপজেলা ও জেলা দুই লেভেলেই আমাদের পৃথক কমিটি করা আছে৷ ওই কমিটি এগুলো মনিটরিং করছে৷ প্রতিটি জেলা শহরেই কো-অর্ডিনেশন কমিটি আছে৷ তারা এগুলো মনিটরিং করছে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা মোবাইলে ফোন করে মনিটরিং করি৷ যদিও এটা পারফেক্ট না৷ সেক্ষেত্রে আমাদের স্থানীয় যারা আছেন, তাদের মাধ্যমে মনিটরিং করি৷

চিকিৎসক ও নার্স যারা সেবা দিচ্ছেন বা দেবেন তাদের কি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে?

করোনার ক্ষেত্রে পৃথক প্রশিক্ষণের কিছু নেই৷ এটা সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো৷ এখানে প্রিভেনশনই প্রধান৷ সেই বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি৷ 

জনসচেতনতা  বৃদ্ধির জন্য আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

মূলত আমরা পোষ্টার লিফলেট তৈরি করেছি, সেগুলো বিলি হচ্ছে৷ পত্রিকায়, টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন যাচ্ছে৷ স্থানীয় যেসব প্রতিনিধি আছেন, তারা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন৷ আমরা প্রতিদিন প্রেস বিফিং করছি৷ এটা সরাসরি গণমাধ্যমে যাচ্ছে৷ সোশাল মিডিয়া মনিটরিং করছি৷ ওয়েবসাইট সবসময় আপডেট করা হচ্ছে৷ আসলে গণমাধ্যমের সহযোগিতা আমরা অনেকখানি নিচ্ছি৷ গণমাধ্যম আমাদের অনেকখানি সহযোগিতা করছে৷  

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা

সংবাদ প্রকাশে মিডিয়া কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে? আরো কী কী করা যেতে পারে?

মিডিয়া যথেষ্ট সহযোগিতা করছে৷ আমরা তাদের সহযোগিতা পুরো মাত্রায় পাচ্ছি৷ অনেক তথ্য আমরা মিডিয়া থেকে পাচ্ছি, যা মনিটরিংয়ের জন্য কাজে লাগছে৷ তারা আমাদের সহযোগী যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে৷ তবে মিডিয়ার একটা চ্যালেঞ্জের জায়গা আছে, সেটা ঢালাওভাবে না৷ দু'একটি মিডিয়ায় রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাচ্ছে৷ ছোট্ট দেশ, সবাই তথ্য পেয়ে যান৷ কিন্তু সব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না৷ আমরা প্রত্যাশা করি, ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যাপারে তারা শ্রদ্ধাশীল হবেন৷

বাসায় পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি থেকে যায় কিনা...

কিছুটা ঝুঁকি তো থেকেই যায়৷ তবে আমরা বাসায় কোয়ারেন্টাইন বলতে যা বলেছি, তাকে পৃথক রুমে রাখতে হবে৷ পরিবারের সদস্যরাও তার সঙ্গে মিশবেন না৷ যদি এক্ষেত্রে বাসায় একটি রুম থাকে, তাহলে তাকে আমাদের যে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা আছে, সেখানে এসে থাকতে হবে৷ যাদের সেই ব্যবস্থা নেই, তাদের কিন্তু আমরা এনে রাখছি৷

ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ঝুঁকি কি বেশি?

আমি সেটা মনে করি না৷ ঘনবসতি একটা চ্যালেঞ্জ৷ কিন্তু ঘনবসতি যদি না-ও হয় আর যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে যে কোনো দেশেই এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ মূল বিষয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলা৷

মাস্ক নিয়ে দেশে হৈ চৈ হচ্ছে৷ করোনা প্রতিরোধে মাস্কের ভূমিকা কতটা ?

মাস্ক সাধারণ মানুষের জন্য আদৌ প্রয়োজন নেই৷ আমরা সবসময় বলছি, মাস্কের চেয়ে হাঁচি-কাশি, শিষ্টাচার, ঘনঘন হাত ধোয়া, হ্যান্ডশেক না করা, কোলাকুলি না করা, রোগীর থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, এগুলো মেনে চললেই হবে৷ 

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান