1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানুষ পৃথিবীর শোষন বাড়িয়ে চলেছে

২৪ অক্টোবর ২০২২

আমাদের কাছে একটি মাত্র পৃথিবী থাকা সত্ত্বেও আমরা নির্বিচারে নিজেদের গ্রহের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছি৷ বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যের রাক্ষুসে চাহিদা ক্ষতির মাত্রা আরো ভয়াবহ করে তুলছে৷

https://p.dw.com/p/4IaSW
Russland illegaler Holzeinschlag
ছবি: picture-alliance/dpa/Sputnik/V. Ankov

গোটা ব্রহ্মাণ্ডে এখনো পর্যন্ত একটিমাত্র গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে উন্নত জীবের বিকাশ ঘটেছে৷ সেই পৃথিবীর বুকে একটি প্রজাতি বাকিদের পেছনে ফেলে আরও অগ্রসর হয়েছে৷  তারা একাধিক জটিল সমাজে বসবাস করে এবং অসংখ্য যন্ত্রপাতি ও অনেক সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে৷ কিন্তু সে সবের জন্য মানুষের বিশাল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷

ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে রাইনহল্ড লাইনফেল্ডার এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এক বড় আকারের গবেষণার আওতায় আমরা মানুষের এতকাল ব্যবহার করা জ্বালানির পরিমাণ মাপার চেষ্টা করেছিলাম৷ ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মানুষ গত ৭০ বছরে পৃথিবীর উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছে৷ তার আগের ১২,০০০ বছরের তুলনায় মানুষ এই সময়কালে দেড় গুণ বেশি জ্বালানি ব্যবহার করেছে৷ ফলে জ্বালানি ব্যবহারের গতিবৃদ্ধি স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷''

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে মানুষ পৃথিবীর ইকোসিস্টেম এতটাই বদলে চলেছে যে, বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই সময়কালকে ‘অ্যান্থ্রোপোসিন' বা মানুষের যুগ বলা হচ্ছে৷

বর্তমানে মানুষের বাৎসরিক জ্বালানির চাহিদা প্রায় ১৭০ ট্রিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার! জনসংখ্যাও বেড়ে চলেছে৷ বর্তমানে ৮০০ কোটি হলেও ২০৫০ সালের মধ্যে মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১,০০০ কোটি হয়ে দাঁড়াবে৷

জ্বালানির ক্ষুধা মেটাতে মানুষ গোটা গ্রহ শোষণ করে চলেছে৷ ফলে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে জীবজগতের সব বাসভূমি ধ্বংস হবার উপক্রম দেখা যাচ্ছে৷ সবচেয়ে সাংঘাতিক বিষয় হলো, সবকিছু পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷ মানুষের খাদ্যের ক্ষেত্রে সেটা সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট৷

ফ্রাংকফুর্টের সেনকেনব্যার্গ মিউজিয়ামের ফল্কার মোসব্রুগার বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন৷ তাঁর মতে, ‘‘আমরা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল৷ কিন্তু প্রতি বছর প্রকৃতি থেকে আমাদের চাহিদা নতুন করে প্রকৃতির পুনরুজ্জীবনের হারের তুলনায় অনেক বেশি৷ অর্থাৎ আমাদের বেঁচে থাকার মূলধনই আমরা খেয়ে ফেলছি অথবা ব্যবহার করছি৷''

বিষয়টি সত্যি অযৌক্তিক৷ আজকের মানুষের খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া বাস্তবে জ্বালানি ধ্বংসের সমান৷ খাদ্য উৎপাদনের সময় চূড়ান্ত খাদ্যপণ্যের তুলনায় অনেক বেশি ক্যালোরি ব্যবহার হয়৷ যেমন বড় আকারের মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেই ক্ষতির মাত্রা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে৷

গোটা বিশ্বের চাষের জমির প্রায় ৮০ শতাংশই হয় চারণভূমি অথবা গবাদি পশুর খোরাক চাষের খেত হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ এভাবে এক নাজুক প্রণালীর উপর মারাত্মক হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে৷ সেনকেনব্যার্গ সোসাইটির ফল্কার মোসব্রুগার বিষয়টি সহজ করে বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘‘ধরুন এই আপেলটি আমাদের পৃথিবী, যার ব্যাস ১২ থেকে ১৩ হাজার কিলোমিটার৷ হিসেব করে দেখলে বুঝবেন, সামান্য কয়েক ডেসিমিটার বা মিটার এই আপেলের চিকন খোসার মতো৷ সেই স্তর ব্যবহার করে আমরা ৮০০ কোটি মানুষের জন্য আজ শক্তি টেনে নিচ্ছি৷''

মানুষের ক্ষুধা যেন আর মেটেই না৷ সস্তায় উৎপাদন, একই শস্যের চাষ, বিশাল আকারে ফলনই এই প্রবণতার চাবিকাঠি৷ ফলে জমির উৎপাদনশীলতা আরো দ্রুত কমে চলেছে৷ গোটা বিশ্বজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির ভাণ্ডার কমে চলেছে৷ যেমনটা স্পেনের আলমেরিয়া অঞ্চলে ইউরোপের শাকসবজির অন্যতম প্রধান উৎসে দেখা যাচ্ছে৷ ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে রাইনহল্ড লাইনফেল্ডার মনে করেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশাল পরিমাণ পানির প্রয়োজন৷ সেইসঙ্গে চাই সার৷ দ্রুত গতি ও উচ্চ ফলনের স্বার্থে, অর্থাৎ সস্তায় উৎপাদের জন্য আমরা প্রচুর ফসফেট ও নাইট্রোজেন যোগ করি, তার অর্ধেকই পানিতে গিয়ে মেশে এবং শেষ পর্যন্ত সমুদ্রে চলে যায়৷''

শুধু সেটাই নয়, আমরা যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করি এবং গোটা বিশ্বে পরিবহণ করি, তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই স্রেফ ফেলে দেওয়া হয়৷

তানিয়া ক্যুশলে/এসবি