মাথা নত করব না: রায়হান কবির
২২ আগস্ট ২০২০রায়হান শুক্রবার গভীর রাতে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকা আসেন৷ শনিবার ভোরে তিনি নারায়ণগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে যান৷ ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া৷ কিন্তু তাকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি দেশটির পুলিশ, যে কারণে তাকে মুক্তি দেয়া হয়৷
শনিবার বিকেলে রায়হান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি ২৯ দিন কারাগারে ছিলাম, আমাকে রিমান্ডে নেয়া হয়৷ আমাকে কোনো শারীরিক নির্যাতন করা না হলেও আমার ওপর প্রচন্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়৷’’
রায়হান জানান, তারা বারবার তার কাছে জানতে চেয়েছেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রবাসীদের নির্যাতনের কথা আল জাজিরাকে বলেছেন কিনা৷ তার সাথে কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো গ্যাং-এর যোগাযোগ আছে কিনা৷ তদন্ত কর্মকর্তারা তার সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ফোন, ফেসবুক, হোয়াসআ্যাপ পরীক্ষা করেছে৷ বাংলাদেশের কেউ তাকে প্রভাবিত করেছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখেছে৷ কিন্তু এ ধরনের কোনো যোগাযোগই তারা পায়নি৷ মালয়েশিয়া সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কিনা সে বিষয়েও তার কাছে জানতে চাওয়া হয়৷
রায়হান জানান, ‘‘আমি মালয়েশিয়াতে পড়াশোনার সময় স্টুডেন্ট অর্গানাইজার হিসেবে কাজ করেছি৷ বাংলাদেশিদের মধ্যে আমিই প্রথম যে প্রবাসীদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরি৷ আল জাজিরা আমার সাথে যোগাযোগ করায় আমি তাদের সাক্ষাৎকার দিয়েছি৷ প্রবাসীদের সাথে তারা যা করে তাই বলেছি৷ সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে৷ প্রবাসীরা নানা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷ কোনো অসত্য কথা বলিনি৷ আর আমি সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেই যাব৷’’
রায়হান এখন অবশ্য তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত৷ কোনো অপরাধ না করলেও তাকে মালয়েশিয়া থেকে বহিস্কার করা হয়েছে৷ তিনি চাকরি হারিয়েছেন৷ এই অন্যায় আচরণের প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ চান তিনি৷ ‘‘কিন্তু কার কাছে চাইব?,'' প্রশ্ন তার৷
রায়হানরা দুই ভাই-বোন৷ তার বাবা মো. শাহ আলম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘রায়হানকে মালয়েশিয়া পাঠাতে আমার তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে৷ পড়াশোনা শেষে একটি চাকরিও পেয়েছিল৷ এখন তো আর কিছু নাই৷ আমার ছেলে ফিরে এসেছে তাতেই আমি খুশি৷ তারপরও সরকারে কাছে আমার আবেদন তারা যেন রায়হানের জন্য কিছু একটা করে৷’’ তিনি জানান, রায়হান আটক হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি৷
গত ৩ জুলাই ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট' শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে আল-জাজিরা ৷ প্রতিবেদনে মালয়েশিয়া সরকার মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (এমসিও)-এর মাধ্যমে মহামারির সময়ে অভিবাসীদের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করে তা তুলে ধরা হয়৷ সেখানে রায়হান কবিরের একটি সাক্ষাৎকারও দেখানো হয়৷ এরপর মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ রায়হানকে খুঁজতে থাকে৷ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও তার ছবি প্রকাশ করা হয় তথ্য দেয়ার জন্য৷ ২৪ জুলাই রায়হানকে আটক করে পুলিশ৷
রায়হান জানান, তাকে আটকের পর সেখানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷ তারা এখন বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে প্রবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না৷ কারাগারের অবস্থারও উন্নতি হয়েছে৷
তার মুক্তির জন্য দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন চাপ সৃষ্টি করে৷ ব্রাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসানও সক্রিয় ছিলেন রায়হানের মুক্তির জন্য৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ছাড়া মালয়েশিয়া আর কোন দেশের নাগরিকদের হাতে হাতকড়া পড়াতে পারে? রায়হান কোনো অপরাধ করেনি তারপরও তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে৷ এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷ সরকারের উচিত এই বিষয়টি দেখা৷ কোনো দেশ চাইলে অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের তার দেশ থেকে বহিস্কার করতে পারে৷ কিন্তু তার তো কারণ থাকতে হবে৷ রায়হানের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত৷ নেপালের মত দেশ অভিবাসীদের পাশে দাঁড়াতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না!’’
তবে এইসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরই কথা বলতে রাজি হয়নি৷
২০১৯ সালের ছবিঘরটি দেখুন...