মরক্কোয় ফলন বাড়াচ্ছে ড্রিপ সেচ পদ্ধতি
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩মরক্কোতে পানির পরিমাণ দিন দিন কমছে৷ দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে কৃষি৷ সে কারণে মরক্কো এখন সেচ ব্যবস্থা আধুনিক করতে বিনিয়োগ করছে৷ বিশ্বব্যাংক মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে৷ কিন্তু এটিই কি সমাধান?
মরক্কোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ডুক্কালা অঞ্চলের মাটি আসলে উর্বর৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কমে গেছে৷
কৃষক বুসাইব সোহেল বলছেন, ‘‘আগে আমরা খাল কেটে সেচ দিতাম৷ ওটাই আমাদের ঐতিহ্য ছিল৷ কিন্তু এখন এতে কাজ হচ্ছে না, কারণ, অনেক পানি অপচয় হয়৷''
ড্রিপ সেচের মতো আধুনিক সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করলে পানি অপচয় হয় না৷ ডুক্কালা অঞ্চলে ২০০৯ সালে একটি প্রকল্প শুরু করেছিল বিশ্বব্যাংক৷
কৃষি প্রকল্প ব্যবস্থাপক মুবারক আল-তায়ি জানান, ‘‘সেচ প্রক্রিয়ার উপর কৃষকদের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকে৷ উৎপাদন বেড়েছে৷ শস্যের মানও বেড়েছে, ফলনও বেড়েছে৷ এটা দৃশ্যমান৷ ফলন বাড়ার বিষয়টি নিয়ে কৃষকেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন৷ সব শস্যের উপর প্রভাব পড়েছে৷''
ড্রিপ সেচ পদ্ধতিতে যতটা সম্ভব গাছের মূলের কাছে পানি পৌঁছানো যায়৷ ডুক্কালায় ১৫৮ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ কৃষকদের কমসুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে৷
কৃষক বুসাইব সোহেল বলেন, ‘‘প্রযুক্তিটা ব্যয়বহুল৷ তবে তারপরও এটা ভালো, কারণ, এর ফলে আমাদের উৎপাদন বেড়েছে৷ সনাতন পদ্ধতিতে সেচ দিয়ে আমরা ৪০, ৫০ টন শস্য পেতাম৷ আর এখন ড্রিপ সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতি হেক্টরে ১০০ থেকে ১২০ টন ফসল পাচ্ছি৷''
এই সেচ পদ্ধতির কারণে কৃষকেরা এখন এমন ফসলও ফলাচ্ছেন, যার জন্য অনেক পানির প্রয়োজন৷ কিন্তু এর সমালোচনা হচ্ছে৷ ইকোলজিক্যাল জাস্টিস অ্যাক্টিভিস্ট শেরিন তালাত বলছেন, ‘‘সার্বিকভাবে মরক্কোর পুরো কৃষিখাতের কথা ভাবতে হবে৷ আমরা অ্যাভোক্যাডো, তরমুজের মতো রপ্তানি করা যায় এমন শস্য ফলাতে আমাদের পানিসম্পদ ব্যবহার করতে পারি না, কারণ এগুলো আমাদের প্রধান খাদ্য নয়৷ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখে এমন ফসল ফলাতে হতে৷ কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা ক্ষুধার হুমকিতে পড়েছে৷''
পারিবারিক জমিতে ফলন কমে যাওয়ায় বিদেশে চলে গিয়েছিলেন মুহাম্মদ আলদুবলানি৷ কিন্তু তিনি আবার দেশে ফিরে আরও কিছু জমি কিনে জলপাইয়ের চাষ শুরু করেছেন, যেটিতে পানি কম লাগে৷
কৃষক মুহাম্মদ আলদুবলানি জানান, ‘‘ড্রিপ সেচ পদ্ধতি চালুর আগে সনাতন পদ্ধতিতে চাষবাস করে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ায় মানুষ আমার মতো এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল৷ ড্রিপ সেচ পদ্ধতি চালুর কারণে গ্রামের অনেক মানুষ এলাকায় থাকতে উৎসাহিত হয়েছেন৷ অনেকে আবার ফিরে এসে জমি কিনে চাষবাস শুরু করেছেন৷ এখন আমাদের সন্তানেরাও কৃষিকাজে আগ্রহী হয়ে উঠছে৷''
ড্রিপ সেচ পদ্ধতি চালু হলেও মরক্কোতে এখনও কৃষিকাজে সবচেয়ে বেশি পানি ব্যবহৃত হয়৷ ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে৷ ফলে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প আর আধুনিক সেচ ব্যবস্থা মরক্কোর কৃষিখাতের একটি অস্থায়ী সমাধান মাত্র৷
সেমেন কাতানিয়া, মিলটিয়াডেস শ্মিট/জেডএইচ