মমতার প্রার্থী দুই সাবেক ক্রিকেটার, ছয় তারকা এবং অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা
ভারতে ভোটের দিন ঘোষণার আগেই প্রার্থীদের নাম জানাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। তৃণমূল তো প্রার্থীদের র্যাম্পে হাঁটালো।
ব্রিগেডের অভিনব মিটিং
বিশাল ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সাধারণত বিশাল মঞ্চ থাকে। তৃণমূলেরও একাধিক মঞ্চ ছিল। কিন্তু এবারের চমক ছিল র্যাম্প। তিনদিকে ছড়িয়ে গিয়েছিল এই র্যাম্প। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় তো বটেই, অভিষেকও প্রথমে র্যাম্পে হেঁটে জনসভার উপস্থিত মানুষদের কাছে পৌঁছে গেলেন। পরে প্রার্থীরাও হাঁটলেন র্যাম্পে। সাধারণত বিনোদন ও ফ্যাশন জগতের তারকারা র্যাম্প ওয়াক করেন। এবার করলেন রাজনীতিকরা।
প্রার্থী দুই সাবেক ক্রিকেটার
দুই সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান ও কীর্তি আজাদকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ইউসুফকে প্রার্থী করা হয়েছে কংগ্রেসের লোকসভা নেতা অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বহরমপুর কেন্দ্রে। অতীতে অনেক চেষ্টা করেও অধীরকে হারানো যায়নি। অধীরের কেন্দ্রে ৬৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম। ইউসুফের একটা তারকা-আকর্ষণ আছে। ফলে বহরমপুরে জবগদস্ত লড়াই হতে পারে। ছবিতে মহুয়া মৈত্র, সায়নী ঘোষদের সঙ্গে ইউসুফ পাঠান।
অধীরের বক্তব্য
অধীর বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ইউসুফ পাঠানকে সম্মান দিতে চাইতেন তো রাজ্যসভায় পাঠাতেন। তিনি ইন্ডিয়া জোটের কাছে গুজরাটে একটা রাজ্যসভা আসন চাইতে পারতেন। কিন্তু তিনি রাজ্যে মেরুকরণ করতে ইউসুফকে করলেন। মমতার একমাত্র উদ্দেশ্য তাকে পরাজিত করা। ইউসুফকে বহিরাগত বলেছেন কংগ্রেস নেতারা। অধীর বহরমপুর থেকে পাঁচবার লোকসভায় জিতেছেন।
দিদি নাম্বার ওয়ানের সঞ্চালিকা রচনা
তৃণমূল এবার মিমি ও নুসরত জাহানকে প্রার্থী করেনি। নুসরত ছিলেন বসিরহাটের সাংসদ, যার কেন্দ্রের মধ্যে সন্দেশখালি পড়ে। তাদের জায়গায় নতুন দুই তারকা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জুন মালিয়াকে প্রার্থী করা হয়েছে। জনপ্রিয় টিভি শো দিদি নাম্বার ওয়ানের সঞ্চালিকা রচনা লড়বেন হুগলিতে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। দুই টলিউড তারকার লড়াই দেখবে হুগলি। জুনকে মেদিনীপুরে প্রার্থী করা হয়েছে। ছবিতে মমতার পিছনে রচনা।
আবার দেব
তারকা প্রার্থী দীপক অদিকারী বা দেব-কে আবার পুরনো কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। দেব এবার দাঁড়াতে চাননি। কিন্তু মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পর মতবদল করেন।
আছেন শত্রুঘ্ন
আসানসোলে প্রবীণ বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহাকেই আবার দাঁড় করিয়েছেন মমতা। শত্রুঘ্ন র্যাম্পে হেঁটেছেন। আসানসোলে হিন্দিভাষীদের ভোট যথেষ্ট। সেখানে শত্রুঘ্নের একটা বাড়তি প্রভাব আছে। ছবিতে শত্রুঘ্নর সঙ্গে কীর্তি আজাদ ও মালা রায়।
মহুয়া, সায়নী ও শতাব্দী
মহুয়া মৌত্র বর্তমান লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তাকে আবার পুরনো কেন্দ্র কৃষ্ণনগর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। টলিউডের তারকা সায়নী ঘোষকেও আবার প্রার্থী করা হয়েছে। তবে তিনি এবার যাদবপুর থেকে লড়বেন। সায়নী যুব তৃণমূলের প্রধান। দুজনেই খুব সাবলীলভাবে র্যাম্পে হেঁটেছেন। শতাব্দী রায়কে তার পুরনো কেন্দ্রে দাঁড় করানো হয়েছে।
প্রবীণরাও আছেন
তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় প্রবীণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মালা রায়রা টিকিট পেয়েছেন। সুদীপকে প্রার্থী করা নিয়ে তো দলে এটা ছোটখাট বিদ্রোহ পর্যন্ত হয়েছিল। তাপস রায় দল ছেড়েছেন। কুণাল প্রকাশ্যে প্রবল সমালোচনা করেছিলেন। পরে কুণালের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে নেন সুদীপ। ছবিতে সুদীপকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে।
আছেন অভিষেক-ব্রিগেডের নেতারাও
তৃণমূলের প্রার্থীতালিকায় অভিষেক-ঘনিষ্ঠ দেবাংশু ভট্টাচার্য, শাহনওয়াজ আলি রায়হান, প্রকাশ চিক বরাইকরা আছেন। ইউসুফ পাঠানকেও দলে এনেছেন অভিষেকই। আরেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করার পিছনে আছেন তিনিই।
সাবেক পুলিশকর্তাও প্রার্থী
তণমূলের প্রার্থীতালিকায় আরেক চমক হলো সাবেক পুলিশকর্তা প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করা। তাকে মালদহ উত্তর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও হাওড়ায় প্রার্থী করে হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের প্রার্থী
উত্তরবঙ্গের আট আসনে গতবার জিততে পারেনি তৃণমূল। এবার তাই একেবারে নতুনদের প্রার্থী করা হয়েছে। মালদহে দনি খানের আত্মীয়দের নয়, প্রর্থী করা হয়েছে গবেষক শাহজাহান আলি রায়হানকে। চা-বাগান প্রধান আলিপুরদুয়ারে জনজাতি নেতা প্রকাশ চিক বরাইককে প্রার্থী করেছেন মমতা। রাজবংশী নেতা ও বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বসুনিয়াকে কোচবিহারে প্রার্থী করা হয়েছে।
মমতার বক্তব্য
মমতা বলেছেন, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কয়েকজনকে প্রার্থী করা যায়নি। তাদের তিনি বিধানসভায় প্রার্থী করবেন।
তালিকা পড়েন অভিষেক
অভিষেকই মঞ্চ থেকে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি প্রথমে র্যাম্পে এসে আভূমি প্রণাম করেন। তারপর বন্ধ গাড়িতে ইউসুফের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে মঞ্চে এসে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এবার প্রার্থীদের নামবাছাইয়ের ক্ষেত্রে মমতার পাশাপাশি অভিষেকেরও প্রভাব আছে।