মনোরোগের চিকিৎসার পর সমাজে পুনর্বাসনের কঠিন লড়াই
মনোরোগী সুস্থ হলেও সমাজ তাকে গ্রহণ করতে চায় না। দূরে ঠেলে দেয় পরিবার। এমনই মানুষদের পাশে প্রত্যয়।
প্রত্য়য়ী পদক্ষেপ
পরিবার পরিজনের যত্ন আত্তি থেকে দূরে জীবনের বেশ খানিকটা সময় কেটেছে লুম্বিনী পার্ক কিংবা পাভলভ হাসপাতালে। সঠিক চিকিৎসায় সেরে উঠেও বিভিন্ন কারণে নিজের বাড়ি ফেরা হয়নি। তাঁদের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টায় মগ্ন ‘প্রত্যয়’।
দুই বছরের উদযাপন
সেরে ওঠা মনোরোগীদের জন্য, সমাজ ও মানসিক হাসপাতালের মাঝে সেতু হিসাবে কাজ করে চলেছে প্রত্য়য়। তাদের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে হল উদ্যাপন।
উদ্বোধনের মুহূর্তে
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজ্যের নারী সুরক্ষা এবং শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। জন্মদিন পালনের সিংহভাগ দায়িত্ব ছিল আবাসিকদের হাতে। তাঁদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। শশী জানান, এই উৎসাহ, উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক লেগেছে তার।
ঘরে ফেরার গান
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এ বাড়িতেই থাকতেন। বর্তমানে নিজের বাড়িতে ফিরলেও ‘প্রত্যয়’-এর প্রতি টান রয়ে গেছে। এমনই এক প্রাক্তন আবাসিকের গান দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বাড়ির নারী আবাসিকেরা নাচ-গানে উদ্যাপন করলেন।
হাতের কাজ
আবাসিকদের হাতে তৈরি নানা জিনিসের প্রদর্শনীও ছিল। বিছানার চাদর থেকে হাতে তৈরি সাবান— প্রদর্শনী ঘুরে দেখলেন ‘প্রত্যয়’-এর কাছের মানুষ, স্বজনেরা।
পাশে রত্নাবলী
প্রত্যয়ের এই বিশাল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শুরুর দিন থেকে যুক্ত মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। তারই অনুপ্রেরণায় পুতুল বানানোর কর্মশালা থেকে চলচ্চিত্র উৎসব— আবাসিকদের নিয়ে সারা বছর নানা ধরনের কাজ চলে ‘প্রত্যয়’-এ।
প্রত্য়য়ের পাশে অঞ্জলী
রত্নাবলীর সংস্থা ‘অঞ্জলি’ পাশে থাকে ‘প্রত্যয়’-এর। সুস্থ হয়ে ওঠা মনোরোগীদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। রত্নাবলী জানান, তাদের মূল কাজ লুম্বিনী পার্ক আর পাভলভ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠা মনোরোগীদের সামাজিক পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করা।
স্বনির্ভর প্রকল্প
নানা ধরনের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে আবাসিকদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শী করে তোলা হয়। সমাজের মূলস্রোতে ফিরে গিয়ে যেন পরনির্ভর হয়ে থাকতে না হয়।
পেশাদার জীবন
প্রত্যয়ে যে আবাসিকেরা এসেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই নারী। অধিকাংশ নারীই হাসপাতালে আসার আগে কখনো উপার্জন করেননি। মূলত সংসার সামলাতেই তারা উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন। এখন এই মধ্য বয়সে পেশাদার জীবনে অভ্যস্ত হতে তাদের সময় লাগছে।
সামাজিক পুনর্বাসন
এখনও পর্যন্ত প্রত্যয় থেকে মোট ছত্রিশজন আবাসিকের সামাজিক পুনর্বাসন সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজন উপার্জন করছেন এবং স্বনির্ভর স্বাধীন জীবনযাপন করছেন। বাকি আঠাশ জন পরিবারের কাছে ফিরেছেন।
পরিবারের দায়িত্ব
তাদের অনেকেই এখন পরিবারে থেকে বা পরিবারের থেকে দূরে শুধু নিজেদের জন্য রোজগার করছেন এমন নয়, পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছেন। সব মিলিয়ে দু’বছরে ছত্রিশজন সংখ্যাটা খুব কম নয়।