1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজফিলিস্তিন

মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে ফিলিস্তিনিদের জীবন

৩০ নভেম্বর ২০২৩

১৯৪৮ সালে যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ পালাতে বাধ্য হন৷ সেই সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিদের জীবন কিভাবে কাটছে এখন?

https://p.dw.com/p/4Zcta
গাজায় চার দিনের যুদ্ধ বিরতি, তাই খান ইউনিসে নিজেদের ঘরের অবস্থা দেখতে গেছেন ফিলিস্তিনিরা
ইউএনআরডাব্লিউএ-র সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের ৫৮টি শরণার্থী শিবিরে মোট ৫৯ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছেছবি: Mustafa Hassona/Anadolu/picture alliance

সব দেশে একই অবস্থায় নেই তারা৷ তবে যেখানেই আছেন, আছেন একটাই দাবি নিয়ে- দ্বি-রাষ্ট্র নীতিতে হতে হবে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান৷

বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া সব ফিলিস্তিনি অবশ্য শরণার্থী শিবিরে নেই, তাই সবাইকে শরণার্থী বলাও সমীচীন নয়৷ ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণসহায়তা সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ)-র সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের ৫৮টি শরণার্থী শিবিরে মোট ৫৯ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছে৷

লেবাননে ফিলিস্তিনিদের জীবন

ইউএনআরডাব্লিউএ-র তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে লেবাননে মোট আড়াই লাখ ফিলিস্তিনি ছিলেন৷ তবে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক কেলি পেটিলো মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যাটা পাঁচ লাখের মতো৷ গত প্রায় ১০০ বছরে একবারও আদমশুমারি না হওয়ায় লেবাননে জনসংখ্যা নিরূপণ করা দুষ্কর৷

অথচ রাজনৈতিক কারণে সেখানে আদমশুমারির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা কঠিন৷ লেবাননে এর নানাবিধ গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়৷ মধ্যপ্রাচ্যের এই ভূখণ্ডে প্রধানমন্ত্রী হন কোনো সুন্নি মুসলমান, প্রেসিডেন্ট হন কোনো খ্রিষ্টান আর স্পিকারকে হতে হয় শিয়া মুসলমান৷

লেবাননে ফিলিস্তিনিরা কেমন আছেন? ইউএনআরডাব্লিউএ-র এক পরিসংখ্যান বলছে, সেখানে বসবাসরত শতকরা ৮০ ভাগ ফিলিস্তিনি শরণার্থীই দারিদ্র্য সীমার অনেক নীচে বাস করেন৷ অবস্থার উন্নতির জন্য যোগ্যতা অনুসারে চাকরি তারা শত চেষ্টাতেও পান না৷ লেবাননে ফিলিস্তিনি সম্পত্তি কেনার অধিকারও নেই শরণার্থীদের৷

জর্ডানে ফিলিস্তিনিদের অবস্থা

মধ্যপ্রাচ্যে শুধু জর্ডানেই ফিলিস্তিনিদের নাগরিক হওয়ার অধিকার আছে৷ কেলি পেটিলো বলেন, ‘‘জর্ডানের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত৷ রানি রানিয়ার পূর্ব-পুরুষরাও ফিলিস্তিনি ছিলেন৷''

তবে জর্ডানের অন্তত ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি এখনো শরণার্থী৷ এবং সে দেশের সরকারের আর কোনো শরণার্থী নেয়ার ইচ্ছে নেই৷ জর্ডানের বাদশা আব্দুল্লাহ হামাস আর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধ শুরুর পর জানিয়ে দিয়েছেন, তার দেশ আর শরণার্থী গ্রহণ করবে না৷

দক্ষিণ লেবাননের সিডনে কয়েকজন ফিলিস্তিনি শরণার্থী
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক কেলি পেটিলো মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যাটা পাঁচ লাখের মতো৷ গত প্রায় ১০০ বছরে একবারও আদমশুমারি না হওয়ায় লেবাননে জনসংখ্যা নিরূপণ করা দুষ্কর৷ছবি: Ali Hashisho/Xinhua/IMAGO

মিশরে ফিলিস্তিনিদের অনিশ্চিত জীবন

কেলি পেটিলোর মতে, ‘‘মিশরের ফিলিস্তিনিরা সবচেয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে৷ বড় রকমের আইনি জটিলতার মধ্যে আছেন তারা৷'' মিশরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা জানাতে গিয়ে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক বলেন, ‘‘ মিশর ইউএনআরডাব্লিউএ-র সদস্য দেশ নয়৷ ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে যেসব পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, সেখানে সংখ্যাটা ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ৩৪ হাজারের মধ্যে উল্লেখ করা হয়৷''

মিশরের গাজা উপত্যকা সংলগ্ন সীমান্ত থাকলেও প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি একাধিকবার বলেছেন, তার দেশ সীমান্তকে কখনো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশপথ হতে দেবে না৷

সিরিয়ায় ফিলিস্তিনিদের সংকট

সিরিয়ায় মোট ১২টি শরণার্থী শিবিরের চার লাখ ৮০ হাজার ফিলিস্তিনিকে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে থাকে ইউএনআডাব্লিউএ৷ সিরিয়া যুদ্ধের কারণে তাদের অবস্থা খুবই সঙ্গীন৷

ইউএনআরডাব্লিউএ-র ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিরিয়ায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের শতকরা ৮২ ভাগই চরম দারিদ্র্যসীমায় বাস করেন৷সেখানে আরো বলা হয়, সিরিয়ার এক লাখ ২০ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি কোনো প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হয়েছেন৷

ইসরায়েলেও ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (পিসিবিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৮-এর যুদ্ধের পর এক লাখ ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলেই থেকে যান৷ ২০২০ সালে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, সেই সংখ্যাটা প্রায় দশ গুণ বেড়ে ১৫ লাখের মতো হয়েছে৷ ইসরায়েলের জনসংখ্যার ১৭%-এর মতো ফিলিস্তিনি বলেও দাবি করা হয় সেই পরিসংখ্যানে৷

ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের পরিচয় অবশ্য সবার কাছে একরকম নয়৷ কেউ তাদের বলেন ইসরায়েলি আরব, কারো কাছে তারা আবার ইসরায়েলের আরবি নাগরিক৷

জেনিফার হলেইস/ এসিবি