1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভয় দেখাতে জিল্লুরের বাড়িতে পুলিশ, নাকি তুচ্ছ বিষয়ে অতিরঞ্জন?

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৩ ডিসেম্বর ২০২২

‘তৃতীয় মাত্রা’র উপস্থাপক ও পরিচালক জিল্লুর রহমানের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ৷ জিল্লুরের দাবি, ভয় দেখাতে পুলিশ এমন করেছে৷ অন্যদিকে পুলিশের দাবি, ঘটনাটি তুচ্ছ, কারণ মাত্র একজন পুলিশ গিয়েছিলেন বিট পুলিশিংয়ের অংশ হিসেবে৷

https://p.dw.com/p/4LNFf
জিল্লুর রহমান
জিল্লুর রহমানছবি: CGS

তবে পুলিশের ভাষ্য, সাধারণ পুলিশিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশ সদস্যরা শরীয়তপুরের ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন৷  

চ্যানেল আই-এর টক শো তৃতীয় মাত্রার জনপ্রিয় সঞ্চালক জিল্লুর রহমান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) নামে একটি থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক৷ সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের নিয়ে মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর অনুষ্ঠান করছেন তিনি৷ এই অনুষ্ঠানে আসা জাপানি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা হয়৷ অনেকের মতো সরকার কিছুটা বেকায়দায়ও পড়ে৷ সম্প্রতি বিদেশি অতিথি এনে ঢাকায় ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন-২০২২’ নামে একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানও করেছেন তিনি৷

‘‘যে কারও বাড়িতেই তো পুলিশ তথ্য সংগ্রহের জন্য যেতে পারে, আপনার কেন মনে হচ্ছে, ভয় দেখানোর জন্য পুলিশ আপনার গ্রামের বাড়িতে গেছে?’’ এ প্রশ্নের জবাবে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত জিল্লুর রহমান টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর আগে-পরে অনেকগুলো ঘটনা আছে৷ আমার জন্ম হয়েছে ঢাকায়৷ ঢাকাতেই থাকি৷ বছরে দুইবার গ্রামের বাড়িতে যাই চ্যারিটেবল কাজের জন্য৷ ঢাকায় আমার অফিসও আছে৷ পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করতে চাইলে আমার অফিসেও আসতে পারে৷ টেলিফোনেও আমার সঙ্গে কথা বলতে পারে৷ তা না করে সিভিলে ও পোশাক পরা অবস্থায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের আমার গ্রামের বাড়িতে যাওয়া আমি স্বাভাবিক বলে মনে করতে পারি না৷ আমরা জানি তথ্য সংগ্রহে গেলে সিভিলে যায়৷ একজন যেতে পারেন৷ কয়েকজনের তো একসঙ্গে মহড়া দিতে যাওয়ার দরকার নেই৷’’

টিভি ও পত্রিকাগুলোকে এই অনুষ্ঠানের খবর প্রচার না করতে বলা হয়েছে: জিল্লুর রহমান

জিল্লুর রহমান মনে করেন, ‘‘তাকে ও তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের ভয় দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছে৷’’ জিল্লুর রহমানের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার জুসিরগাঁও গ্রামে৷ বৃহস্পতিবারই ফেসবুকে একটা পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা শুধু নিন্দনীয় নয়, এটা দেখা অত্যন্ত বিরক্তিকর যে, আমার কণ্ঠরোধ করতে পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে৷’’ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি৷

তবে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানার ওসি আসলাম সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা খুবই ছোট্ট একটা ঘটনা৷ আমাদের এখানে বিট পুলিশিং চলছে৷ সে কারণে বিট পুলিশের সদস্যরা প্রত্যেক ইউনিয়নে খোঁজ নিচ্ছেন ওই এলাকায় কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বাড়ি৷ অধ্যাপক, চিকিৎসক, মুক্তিযোদ্ধা বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা আছেন তাদের তথ্য নিচ্ছি আমরা৷ শুধু তাই নয়, চোর বা ডাকাতদের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ ওই এলাকায় কতগুলো স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা আছে সেটাও সংগ্রহ করছি৷ এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমার একজন পুলিশ সদস্য ওনার বাড়িতে গিয়েছিলেন৷ তা-ও বাড়ির ভেতরে না, বাইরে৷ ওনার একজন চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে পুলিশ সদস্যের কথা হয়েছে৷ উনি কোথায় থাকেন, কতদিন পরপর আসেন এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে৷ পরে ওই পুলিশ সদস্যকে চা খেতে বাড়ির ভেতরে যাওয়ারও অনুরোধ করেছিলেন উনার চাচাতো ভাই৷ কিন্তু পুলিশ সদস্য যাননি৷ এটা একেবারেই একটা স্বাভাবিক ঘটনা, অযথা বিষয়টি নিয়ে টেনে হিঁচড়ে লম্বা করা হচ্ছে৷ এটা তেমন কিছুই না৷’’

অযথা বিষয়টি নিয়ে টেনে হিঁচড়ে লম্বা করা হচ্ছে: ওসি আসলাম সিকদার

কারো তথ্য সংগ্রহে পুলিশ কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিভিলে কেউ একজন গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে৷ সেটা তার বাড়িতে না গিয়ে প্রতিবেশী বা মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছ থেকেও তথ্য নিতে পারে৷ কিন্তু পোশাক পরে দলবল বেঁধে কখনো কারো ব্যাপারে তথ্য আনতে পুলিশ যেতে পারে না৷ অতি উৎসাহী কেউ এমনটা করে থাকতে পারে৷ আর পুলিশ কাউকে ভয় দেখাবে কেন? পুলিশ তো চাইলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে৷ সেখানে কাউকে ভয় দেখানোর জন্য যাওয়ার সুযোগ নেই৷’’

জিল্লুর রহমান ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান সিজিএসের যে কাজগুলো আমরা করছি সেটা নিয়ে সরকারের একটি মহল ভুল ব্যাখ্যা করছে৷ আমি এই প্রোগ্রামটাতে জিও পলিটিক্স নিয়ে কথা বলি৷ পাশাপাশি রিজিওনাল পলিটিক্স, সহযোগিতা এসব নিয়ে আলোচনা করি৷ এখানে অডিয়েন্স যারা থাকেন তারাও কিছু প্রশ্ন করেন৷ তারা অনেক সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন৷ সেটাও আমার দুই ঘন্টার অনুষ্ঠানের ৫-১০ মিনিটের বেশি না৷ আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলি না৷ সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতের একটা বক্তব্য নিয়ে মিডিয়া হাইপ তৈরি হয়েছে৷ এটা নিয়ে সরকারের দিক থেকে কেউ কেউ অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন৷ ওই অনুষ্ঠানের পর আমরা ঢাকায় ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন-২০২২’ নামে একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান করি৷ সেখানে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর আসার কথা ছিল৷ পরে তারা আসেননি৷ এমনকি তৃতীয় দিনে একজন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে এলেও আরেকজন মন্ত্রীর ফোনে তিনি বক্তব্য না দিয়েই চলে যান৷ এই অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথি ছাড়াও দেশীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নিয়েছেন৷ আমাদের এই অনুষ্ঠানে খবর দু-একটি মিডিয়া ছাড়া অধিকাংশ মিডিয়াতে প্রচার হয়নি৷ পরে জেনেছি, টিভি ও পত্রিকাগুলোকে এই খবর প্রচার না করতে বলা হয়েছে৷ বিভিন্ন এজেন্সি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছে৷ আমি নিশ্চিত তারা এখানে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু পায়নি৷ এসব কারণে হয়ত সরকারের একটি মহল বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করে এসব কাজ করে থাকতে পারে৷’’

বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনে অংশ নিয়েছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এই অনুষ্ঠানে চমৎকার সব আলোচনা হয়েছে৷ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যেতে হলে এই অঞ্চলের অন্যান্য শক্তি ছোট বড় যারা আছে সেই দেশগুলোর সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন৷ আমি সেখানে আলোচনা করেছি, এই অঞ্চলের বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি যেটা আছে এসডিজি, সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য এই দেশগুলোর সহযোগিতা কেন গুরুত্বপূর্ণ৷ আমি এর মধ্যে অসুবিধার কোনো কিছু তো দেখিই না, মিডিয়ার উপস্থিতিতে আলোচনা হয়েছে৷ এতে গর্হিত কোনো কিছু আমি অন্তত লক্ষ্য করিনি৷’’

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পাকিস্তানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল আবদুর রশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন জিল্লুর রহমান৷ সেই সাক্ষাৎকার চ্যানেল আই-এ প্রচার করা হয়েছিল৷ সরকারি দলের অনেকেই বিষয়টির এখনও সমালোচনা করেন৷ এছাড়া করোনা মহামারির সময় রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণা করা রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদকে তৃতীয় মাত্রার ২১টি টকশোতে অতিথি হিসেবে আনারও সমালোচনা করেন অনেকে৷