ভারতে নির্বাচনের ময়দানে নারী
ভারতের আসন্ন নির্বাচনে মোট ভোটারদের প্রায় অর্ধেক নারী৷ তবে বর্তমান লোকসভায় নারী সাংসদের সংখ্যা মাত্র ১১.৬ ভাগ৷ নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ ও ভূমিকা নিয়ে কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ক্ষমতায় যে নারীরা...
১৯৬২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনেই নারী প্রার্থীরা লড়েছেন ও জয়ী হয়েছেন৷ ২০১৪ সালের ১৬তম লোকসভায় নারী সদস্য রয়েছেন ৫৯ জন৷ এর মধ্যে সুস্মিতা দেব ও পুনম মহাজনের মতো তরুণ অথচ ‘হেভিওয়েট’ নারী রাজনীতিক যেমন রয়েছেন, পাশাপাশি রয়েছেন উমা ভারতী, মেহবুবা মুফতি বা মানেকা গান্ধি’র মতো বরিষ্ঠ রাজনীতিকরাও৷ এছাড়া, নারী রাজনীতিকরা ভারতের বর্তমান কেবিনেটের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকও সামলাচ্ছেন৷
নির্বাচনের ‘তিনকন্যা’
ভারতের সাধারণ নির্বাচনে অন্যতম বড় ‘ফ্যাক্টর’ হবেন তিন নারী৷ সব বিশেষজ্ঞদের একই মত, জনমত কোন পথে যাবে, তা নির্ধারণে কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে৷ ক্ষমতাসীন এনডিএ-জোট ছাড়া অন্যান্য দলগুলির ভূমিকা কেমন হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে এই তিন নারীর প্রচারকার্য ও ক্যারিশমার ওপর৷
নারী ভোটার
নারী ভোটারদের জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচন ব্যতিক্রমী ছিল৷ যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা কার্নেগি এনডাওমেন্ট বলছে, ভারতের ২৩টি রাজ্যে পুরুষ ভোটারদের সংখ্যায় পেছনে ফেলে দিয়েছেন নারী ভোটাররা৷ নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যায় পুরুষ এগিয়ে থাকলেও কেন্দ্রে গিয়ে ভোটদান করার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে, বলছে কার্নেগি’র একটি প্রতিবেদন৷
নারীর ক্ষমতায়ন?
ভারতে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৩০ কোটির কাছাকাছি৷ এর প্রায় অর্ধেক ভোটারই নারী৷ কিন্তু প্রতিনিধিত্বের হিসাবে সেভাবে নেই নারীর ক্ষমতা৷ ২০০৯ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো লোকসভা আসনের ১০ শতাংশের বেশি আসনে জয়ী হন নারী প্রার্থীরা৷ বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১.৬ ভাগ-এ৷
শুধু নারীদের দল!
এবারের নির্বাচনে ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লড়তে চলেছে শুধু নারীদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল ‘ন্যাশনাল উইমেন্স পার্টি’ অর্থাৎ জাতীয় নারী দল৷ ডঃ শ্বেতা শেট্টি’র নেতৃত্বে এই দলটির মূল লক্ষ্য সংসদের অর্ধেক আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা৷ ‘মায়েদের রাজনৈতিক দল’ হিসাবে প্রচার চালানো এই দলটি লোকসভার ৫৪৩টি আসনের অর্ধেক আসনে লড়বে বলে জানা গেছে৷
‘আণ্ডারডগ’ কারা?
রাজনীতির ভাষায় ‘আণ্ডারডগ’ তাঁরা, যাঁরা সবার নজর এড়িয়ে শেষ মুহূর্তে জয় ছিনিয়ে নেন৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে এমন ভূমিকা রাখতে পারেন বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থী৷ ‘আণ্ডারডগ’ হিসাবে উঠে আসছে আম আদমি পার্টির প্রার্থী আতিশি মারলেনা বা সম্ভাব্য প্রার্থী ছাত্রনেত্রী শেহলা রশিদের নাম৷
ভোটের মাঠেও গ্ল্যামার
নারী তারকাদের সাথে ভারতীয় সংসদের সম্পর্ক বেশ পুরোনো৷ হেমা মালিনী, কিরণ খের’এর মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রীরা বর্তমান লোকসভার সদস্য৷ শুধু তাই নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীতালিকাতেও রয়েছে বেশ কিছু অভিনেত্রীর নাম৷ গতবারের মতো এবারও মুনমুন সেনের নাম থাকলেও সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় উঠছে নতুন প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জাহান’কে নিয়ে৷
২০১৯-এ বদলাবে কিছু?
কার্নেগি এনডাওমেন্টের গবেষকরা বলছেন, ‘উজ্জ্বলা’ ও ‘স্বচ্ছ ভারত’ এর মতো সামাজিক প্রকল্পের হাত ধরে নারী ভোটাররা ঝুঁকতে পারেন ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির দিকেই৷ এতে সাহায্য করবে ‘তিন তালাক’-কে ঘিরে বিজেপি’র আন্দোলনও৷ কিন্তু প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেশব্যাপী বাড়ন্ত জনপ্রিয়তা টলাতে পারে বিজেপি’র একাধিপত্য, এমনটাও মনে করছেন তাঁরা৷