1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে এ বার লকডাউন উঠবে?

২৯ এপ্রিল ২০২০

ভারতে লকডাউন শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩ মে। কী হবে তারপর? লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়বে, না কি, তা আংশিকভাবে থাকবে, অথবা তা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হবে?   

https://p.dw.com/p/3bXdA
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Pan

একদিকে করোনার বিপদ এবং তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা, অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল করার প্রশ্ন, কোটি কোটি মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্ন, অভুক্ত লোককে খাবার ও কাজ দেওয়ার তাগিদ-- এই দুই বিকল্পের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। বর্তমান লকডাউনের মেয়াদ আগামী ৩ মে পর্যন্ত। ১৩৭ কোটি ভারতবাসীর প্রশ্ন হলো, ৪০ দিন পর লকডাউন কী এ বার উঠবে, না কি দেশের সেই জেলাগুলিকে খুলে দেওয়া হবে, যেখানে করোনা রোগী নেই। যেখানে গত ২৮ দিন ধরে করোনায় কেউ আক্রান্ত হননি, সেই জেলাগুলিকে বলা হচ্ছে সবুজ এলাকা। যেখানে ১৪ দিন ধরে কেউ আক্রান্ত হননি, তাকে বলা হচ্ছে কমলা এলাকা। আর যে জেলাগুলি করোনার হট স্পট, তাদের নাম দেওয়া হয়েছে লাল এলাকা।

গত ১২ দিনে লাল এলাকায় থাকা জেলার সংখ্যা ১৭৭ থেকে কমে ১২৯ হয়েছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, মোট করোনা রোগীর ৬০ ভাগই মাত্র ২০টি লাল জেলা থেকে পাওয়া গিয়েছে। তবে কোনও রাজ্য সরকারই লাল জেলা থেকে লকডাউন তুলে দিতে চায় না। আর ভারতের বড় শহরগুলোর মধ্যে মুম্বই, দিল্লি, ইন্দোর, আমদাবাদ, পুনের মতো শহরের অনেকটাই লাল তালিকায় আছে। কলকাতাতেও বেশ কয়েকটি এলাকাকে স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর কমলা জেলার সংখ্যা হলো ২৫০ এবং সবুজ জেলার সংখ্যা ৩৫৭। কিন্তু মুশকিল হয়েছে, ২৮ বা ১৪ দিন ধরে করোনা না হওয়ার পরেও কয়েকটি জেলায় নতুন করে করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।  আর এই ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে সরকারকে। আগামী ৩ মে যখন লকডাউন বাড়ানো বা আংশিকভাবে তুলে দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তখন এই সব তথ্য মাথায় রাখতে হবে সরকারকে।

সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, লকডাউনপুরোপুরি তুলে দেওয়ার বিপদ হলো, এখনও ১২৯টি জেলা লাল তালিকায় আছে। পাঁচ-ছয়টি বড় শহরের অবস্থা খারাপ। সেখানে লকডাউন তুলে নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে বাধ্য। রাজ্য সরকারও লাল এলাকায় লকডাউন বজায় রাখতে চায়। সেই দাবি মানা হলে, বিকল্প হলো আংশিকভাবে লকডাউন তুলে নেওয়া। সেক্ষেত্রে সবুজ জেলাগুলিতে লকডাউন থাকবে না। গোয়া, মণিপুর সহ তিনটি রাজ্য নিজেদের করোনামুক্ত বলে ঘোষণা করেছে, সেখানে লকডাউন তুলে দেওয়া হতে পারে। এমনিতেই সবুজ এলাকায় বেশ কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। এমনও হতে পারে, সেই ছাড় আরও বাড়ানো হবে। বিমান, রেল ও বাস চলাচলের কী হবে? সূত্র জানাচ্ছে, লকডাউন পুরোপুরি তুলে না নিলে তা চালু করায় অসুবিধা আছে। রজ্যের ভিতরে সবুজ এলাকায় যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। এটাও ঘটনা, বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলির অবস্থা শোচনীয়। তারা চায়, অবিলম্বে বিমান চলাচল শুরু হোক। না হলে তাদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে। আর বিমানবন্দরে বিমান রাখার একটা খরচ আছে। তা যাতে দিতে না হয়, সে জন্য তারা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। 

পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এখন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তারা সবুজ জেলাগুলিতে লকডাউন কতটা শিথিল করা যায় তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইতিমধ্যে এই ধরনের জেলায় চাষের কাজ, চাষের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা যন্ত্র তৈরি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি, সেচ, রাস্তা বানানো, চটকলে কাজ করা, শপিং মল বাদে দোকান খোলার কথা বলেছে। রাজ্যের লাল এলাকায় ২১ মে পর্যন্ত লকডাউন বহাল রাখতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। আর কোনও কমলা এলাকায় করোনার সন্ধান পেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আলাদা করে দেওয়া হবে এবং সেই এলাকা প্রবল কড়াকড়ির মধ্যে থাকবে।

আসলে এতদিন ধরে লকডাউন চলতে থাকায় দেশের অর্থনীতির হাল খুবই শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের কোনও কাজ নেই। তাঁদের হাতে টাকা নেই। হয় তাঁরা একবেলা খাচ্ছেন অথবা কার্যত অভুক্ত থাকছেন। প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়েছেন। তাঁরা মরিয়া হয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন। মঙ্গলবারও এমনই একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। মুম্বই থেকে এক শ্রমিক এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে উত্তর প্রদেশে তাঁর গ্রামে ফিরতে চেয়েছিলেন। ১৪ দিন ধরে কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও ট্রাকে করে তিনি শুধু বিস্কিট খেয়ে গ্রামে পৌঁছন। দুপুরেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেই শ্রমিকের নাম ইনসাফ আলি। তিনি ছিলেন এক রাজমিস্ত্রির সহকারী। এরকম লাখ লাখ ইনসাফ আলি লকডাউন ওঠার অপেক্ষায় বসে আছেন। আর কোটি কোটি মানুষ বসে আছেন কাজের অপেক্ষায়। হিসাব বলছে, ১২ কোটি মানুষ তাঁদের বেতন পাবেন না। শুধু কৃষি ও অল্প কিছু শিল্পে কাজ শুরু হয়েছে। লকডাউন না উঠলে বাকি জায়গায় কাজ শুরু হবে না। আর যতদিন না চাহিদা বাড়বে, ততদিন কারখানাগুলিতেও পুরোদমে উৎপাদন হবে না। লকডাউন তুলে নিলে লোকের করোনায় মারা যাওয়ার ভয় থাকছে, না তুললে লোকে না খেয়ে মারা যাবেন।

তাই ৩ মে লকডাউন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী কী ঘোষণা করেন, তার দিকে তাকিয়ে পুরো দেশ।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)