1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের কাছে পাত্তাই পেলো না আফগানিস্তান

শিহাব উদ্দিন
২০ জুন ২০২৪

সুপার এইটে গ্রুপ ২-এ নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৪৭ রানের সহজ জয় পেয়েছে ভারত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৮১ রান করে তারা। জবাবে ১৩৪ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান।

https://p.dw.com/p/4hKXM
সূর্যকুমার যাদব
সূর্যকুমার যাদব : ম্যান অব দ্য ম্যাচছবি: Ricardo Mazalan/AP Photo/picture alliance

ভারতের সঙ্গে আফগানদের লড়াইটা এখনো অসম। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শক্তিতে দুই দলের পার্থক্য অনেক। তবে বোলিংয়ে ভারতের কাছাকাছি না হলেও লড়াই ফিরিয়ে দেয়ার মতো সামর্থ্য রাখে আফগানরা। দেখার ছিল এই লড়াইটা কেমন হয়। সেখানে চোখ কপালে তোলার মতো কিছুই করতে পারেনি রশিদ খানের দল।

ভারতকে শুরুতে জেঁকে ধরলেও ব্যাটিং অভিজ্ঞতায় বড় স্কোরই পেয়েছে ভারত। সূর্যকুমার যাদবের ১৯তম টি-টোয়েন্টি ফিফটিতে বড় স্কোর পায় ভারত। মাত্র ২৮ বলে ৫৩ করেন এই ব্যাটার। রান তাড়ায় নেমে আফগান ব্যাটারদের ভুল শটের পসরায় সহজ উইকেট পেয়েছেন ভারতের বোলাররা। তাই জয়টাও এসেছে সহজেই।

বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালের পিচ দেখে ৭৪ বছর বয়সেও ব্যাট হাতে নেমে যেতে চাইলেন সুনীল গাভাস্কার। ভারতের সাবেক এই কিংবদন্তী ব্যাটার ম্যাচ-পূর্ব মন্তব্যে এমনটাই জানিয়েছিলেন। সেই পিচে ভারত বিশাল স্কোর করবে- এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনিং জুটিকে উড়ন্ত সূচনা পেতে দেননি ফজল হক ফারুকী।

চলতি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে সুপার এইটে তোলার অন্যতম নায়ক এই পেসার। ১২ উইকেট নিয়ে এ ম্যাচের আগেই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি। দুই দিকে বল সুইং করাতে পারেন বলে নতুন বল হাতে ফারুকী আরও দুর্বোধ্য। প্রথম ওভারে তাকে সহজে খেলতেও পারেননি রোহিত শর্মা। ভারত ওপেনার ওভারের পঞ্চম বলে চার দিয়ে রানের খাতা খোলেন। তবে ওই বলটি একটু উঁচুতে ক্যাচ হতে পারতো।

নড়বড়ে রোহিতকে নিজের পরের ওভারেই ড্রেসিংরুমে ফেরান ফারুকী। ওভারের প্রথম বলে জোরালো এলবিডাব্লিউর আবেদন করেন। কিন্তু বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করায় এ যাত্রা বেঁচে যান রোহিত। তবে পঞ্চম বলেই পরাস্ত হন। ফারুকীর একটি স্লোয়ার ডেলিভারি বুঝতে না পেরে আগেই ব্যাট চালিয়ে দেন রোহিত। ব্যাটের নিচের দিকে লাগায় বল চলে যায় মিড অনে রশিদ খানের হাতে। মাত্র ৮ রানেই বিদায় নেন ভারত অধিনায়ক।

জাসপ্রীত বুমরাহ
বুমরাহ . চার ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেটছবি: Ricardo Mazalan/AP Photo/picture alliance

রোহিত হতাশ করায় ভারতের চোখ ছিল বিরাট কোহলির ওপর। গ্রুপ পর্বে একেবারে নিশ্চুপ ছিল তার ব্যাট। ১, ৪ ও ০ করেছেন আগের তিন ম্যাচে। সুপার এইটে কোহলির জ্বলে ওঠার আশা ছিল। আসরে নিজের প্রথম ছক্কায় ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অপরদিকে পান্ত-এর টানা তিন চারে এ দুই ব্যাটারের জুটি বেশ জমে ওঠে। শুরুর দুই ওভারে মাত্র ৮ রান এলেও কোহলি-পান্তের ২৫ বলে ৪৩ রানে পাওয়ার প্লে-তে ৪৭ রান পায় ভারত।

২৪ বলে ২৪ রান করা কোহলি ও ১১ বলে ২০ রানে থাকা পান্তের ব্যাটে দুইশ' ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছিল তারা। কিন্তু পরের ৫ ওভারে ভারতের রান আটকে দেন রশিদ খান। বার্বাডোজের এই উইকেটে রান হলেও রিস্ট স্পিনারদের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই

পেসার মোহাম্মদ সিরাজকে বসিয়ে একাদশে চায়নাম্যান কুলদ্বীপ যাদবকে রাখে ভারত। আর আফগানদের রশিদের সঙ্গে নূর আহমেদ তো ছিলেনই।

রিস্ট স্পিনার সফল হওয়ার সম্ভাবনাই সত্যি হলো। ৭ থেকে ১১ ওভারের মধ্যে নিজের তিন ওভারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন রশিদ। সপ্তম ওভারে কোহলিকে ২৪ রানেই থামান এই স্পিনার। ইনসাইড আউট করে অফ সাইডে ছক্কা মারার চেষ্টা করে লং অফে মোহাম্মদ নবীকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোহলি। এক ওভার পর পান্ত রশিদকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ফেরাতে পারেননি টুর্নামেন্টে ভারতের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার।

এক ওভার পর শিবম দুবেকে এলবিডাব্লিউ করে ম্যাচে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন রশিদ। একপ্রান্তে এমন উইকেট পড়লেও ভারতের রান সচল রাখেন সূর্যকুমার যাদব। কোহলির বিদায়ের পর উইকেটে এসে দ্রুত রান তুলছিলেন। ক্যারিয়ারের ১৯তম ফিফটি করেই অবশ্য তার ইনিংস থামে ফারুকীর বলে। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ২৮ বলে ৫৩ করেন সূর্যকুমার।

তার সঙ্গে হার্দিক পান্ডিয়ার ৩৭ বলে ৬০ রানের জুটিতে স্বস্তিদায়ক সংগ্রহের পথ পায় ভারত। সঙ্গীর বিদায়ের পর হার্দিকও বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি। নাভিন উল হককে বিশাল ছক্কা মারা ১৮তম ওভারের শেষ বলে আরেকটি বড় শটের চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে দিলে শেষ হয়ে যায় ২৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় করা ৩২ রানের ইনিংস।

রশিদ খান
রশিদ খান : ২৬ রানে ৩ উইকেটছবি: Ricardo Mazalan/AP Photo/picture alliance

সূর্যকুমার ও হার্দিকের ব্যাটে শেষ ১০ ওভারে ১০২ রান পেয়ে যায় ভারত। শেষ ওভারে ৬ বলে অক্ষর প্যাটেলের ১২ রানের ক্যামিও ইনিংসে ৮ উইকেটে ১৮১ রানের পুঁজি পায় তারা।

ব্যাটিংয়ে আফগানদের বড় ভরসা রহমানউল্লাহ গুরবাজ। আর্শদ্বীপ সিংয়ের প্রথম ওভারটিতে এক চার ও বিশাল এক ছক্কায় ভরসা করার মতোই শুরু করেছিলেন এই ওপেনার। তবে রহমানউল্লাহকে উড়তে দেননি জাসপ্রিত বুমরাহ। অনেকের মতে বর্তমান বিশ্বের সেরা পেসারের কাছে পরাস্ত হন আফগান ওপেনার।

দ্বিতীয় ওভারে বুমরাহর অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে পান্তের ক্যাচ হন গুরবাজ। উড়ন্ত শুরুর আশাও শেষ হয় আফগানিস্তানের। চতুর্থ ওভারে তিনে নামা ইব্রাহিম জাদরান অক্ষর প্যাটেলের বলে ভুল শট খেলেন। এক চারে ৮ রান করে সরাসরি ক্যাচ তুলে দেন কাভারে দাঁড়ানো রোহিতের হাতে।

পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই আবার উইকেট নেন বুমরাহ। তার কাটার বুঝতে পারেননি জাজাই। মাত্র ২ রান করা জাজাইয়ের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল যায় পয়েন্টে দাঁড়ানো জাদেজার হাতে। ২ ওভার শেষে মাত্র ৫ রানে ২ উইকেট নেন বুমরাহ।

পাওয়ার প্লে-তেই তিন উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় আফগানরা। প্রথম ৬ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ৩৫ রান পায় দলটি। দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়ায় উইকেটে থিতু হয়ে জুটি গড়ার দরকার ছিল। গুলবাদিন নাইব ও আজতুল্লাহ ওমরজাই তাতে সফল হন। ৩৮ বলে ৪৪ রান যোগ করেন দুজনে।

তাতে বেশি কিছু হয়নি। রান রেট ততক্ষণে ওভারপ্রতি ১০-এর ওপর। বিপদ আরও বাড়িয়ে দুই ব্যাটারই বিদায় নেন পরপর দুই ওভারে। গুলবাদিন ২১ বলে ১৭ ও ওমরজাই ২০ বলে ২৬ রান করে ভারতের দুই স্পিনারকে বড় শট মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন।

৭১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায় আফগানিস্তান। রান রেট বেড়ে তখন ওভারপ্রতি ১৫। বড় রানের চাপে বড় শট নিতে গিয়ে ভুল শটে উইকেট ছুঁড়ে আসেন নাজিবুল্লাহ জাদরান (১৯), মোহাম্মদ নাবি (১৪), রশিদ খানরা (২)। ভারতের হয়ে বুমরাহ ও আর্শদ্বীপ ৩টি করে এবং কুলদ্বীপ ২ উইকেট পেয়েছেন।

সুপার এইটে প্রথম ম্যাচেই জয় দিয়ে পূর্ণ ২ পয়েন্টের পাশাপাশি নেট রান রেট ২.৩৫ করে নিয়েছে ভারত। এতে টুর্নামেন্টে সাউথ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অজেয় থাকলো তারাও।

শিহাব উদ্দিন সাংবাদিক