শস্যের বীজকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯তীব্র তাপপ্রবাহের মুখে এই গম গাছের শিকড় কেমন আচরণ করে? লাগাতার পর্যাপ্ত পানি না পেলে ছয়, নয় বা বারো দিন পর গাছের কী অবস্থা হয়?
রোব্যার্ট কলার-এর নেতৃত্বে এক গবেষকদল গাছপালার জন্য উপযুক্ত এমআরটি যন্ত্রের মাধ্যমে আগেভাগেই তার পূর্বাভাষ দিতে পারেন৷ কলার বলেন, ‘‘পাতা ঝুলে পড়ার আগেই আমরা টের পাই৷ বিপাকের মধ্যেই গাছের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ খালি চোখে তা বোঝা যায় না৷ আমরা তখন আগেভাগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারি৷''
এই সব হাইটেক যন্ত্রের সাহায্যে কৃষির উপযুক্ত গাছপালা সম্পর্কে নিখুঁতভাবে গবেষণা চালানো হচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব উপেক্ষা করে কৃষিকাজ চালিয়ে যাওয়াই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ বিশেষ করে স্ট্রেসের মুখে শিকড়ের বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে৷ ড. কলার জানান, ‘‘যে সব ক্ষেত্রে রং আরও উষ্ণ হয়ে ওঠে, যেমন লাল রং শিকড়ের বর্ধিত বৃদ্ধির হার দেখাচ্ছে৷ রং আরও শীতল, নীলাভ হয়ে উঠলে বুঝতে হবে শিকড়ের বৃদ্ধি তেমন জোরালো নয়৷''
রেডিওলজিকাল যন্ত্রপাতির মাধ্যমে গম, ভুট্টা বা আখ নষ্ট না করেও গাছের মধ্যে উঁকি মারা যায়৷ বেড়ে ওঠার সময় এভাবে গাছের কাঠামোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা সম্ভব৷ গাছ সম্পর্কে সব তথ্য একটি বারকোডের মধ্যে জমা রাখা হয়৷ ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রের ড. রোব্যার্ট কলার বলেন, ‘‘বারকোডের মধ্যে এক তথ্যভাণ্ডার লুকিয়ে রয়েছে৷ অর্থাৎ সেই তথ্যভাণ্ডারের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার বা সূচক রয়েছে, যার সাহায্যে আমরা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি৷ যেমন আমরা জানি, বীজ কতটা কঠিন ছিল অথবা গাছের কী চিকিৎসা করছি ইত্যাদি৷''
বীজই সবকিছুর উৎস৷ একটি যন্ত্রের মাধ্যমে সেটির নিখুঁত পরিমাপ করা হয়, ওজন নেওয়া হয় এবং ফলাফল নথিভুক্ত করা হয়৷ এভাবে প্রজননের জন্য সেরা গুণাগুণের খোঁজ চলছে৷ ড. কলার জানান, ‘‘আমরা ভালো প্রস্তাব দেবার চেষ্টা করছি৷ দেখো আমরা গাছের এমন গুণ আবিষ্কার করেছি, যার মাধ্যমে গাছ শুকনা অবস্থাও উপেক্ষা করতে পারে৷ যেমন আরও দীর্ঘ সময় জুড়ে শিকড়ের বৃদ্ধি অথবা আরও গভীরে শিকড় চালনা করা৷ তোমরা প্রজনন প্রক্রিয়ায় এই বিষয়গুলি বিবেচনা করতে পারো, যাতে গাছপালাগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেবার প্রস্তুতি নিতে পারে৷''
নর্মান ভিল্কে এই গবেষকদলের সদস্য৷ একটি পরীক্ষামূলক ক্ষেতে ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছে৷ নর্মান কোনো এক সময়ে উপর থেকে সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতির পরিমাপ করতে চান৷ পূর্বাভাষ অনুযায়ী ২০৫০ সাল পর্যন্ত গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে উঠবে৷ এভাবে ভবিষ্যতের জলবায়ুর নকল সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ ভিল্কে বলেন, ‘‘অর্থাৎ কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়লে জেনোটাইপগুলি কীভাবে বিকৃত হতে পারে, ড্রোন ব্যবহার করে তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে৷''
এই গবেষণা চাষিদের সাহায্য করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ ড. ভিলি ক্রেমার শিলিংস তাঁদেরই একজন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাঁদের উপর চাপ বাড়ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘যে বছর প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, সে বছর সম্পূর্ণ খরা-প্রতিরোধী বীজ আমাদের কোনো কাজে আসবে না৷ আমাদের এমন বীজের প্রয়োজন, যেটি পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে৷ বিশেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে পরীক্ষার সময় সেটিকে শক্তিশালী থাকতে হবে৷ পূর্বাভাষের প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি এই পরীক্ষাকে অত্যন্ত ভালো মনে করি৷ ২০৫০ সালের পূর্বাভাষ পেলে প্রজননকারীরা আজই আগামীকালের বীজ সৃষ্টি করতে পারবেন৷''
এভাবে প্রকৃতির মধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার চাবিকাঠি পাওয়া যাবে, এমন আশা করা হচ্ছে৷
সিগরিড লাউফ/এসবি