ব্রাজিলে আগুনে পুড়লো ২০০ বছরের ইতিহাস
১৮১৮ সালে রাজা ষষ্ঠ জোঁ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রিও ডি জানেরো মিউজিয়ামে ২ কোটি মূল্যবান বস্তু ছিল৷ ভয়াবহ আগুনে শত শত কক্ষ পুড়ে গিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে দেশটির ইতিহাস ও সংস্কৃতির৷
ধ্বংসস্তূপ
রোববার রাতে লাগা আগুন অবশেষে সোমবার নিয়ন্ত্রণে আনেন দমকলকর্মীরা৷ তবে এর আগে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে৷ ২ কোটিরও বেশি জিনিসের অধিকাংশই এরই মধ্যে ধ্বংস হয়েছে৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল টেমার অবশ্য সংগ্রহে থাকা সব ক্ষতিগ্রস্ত সামগ্রী পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
পুরানিদর্শন রক্ষার যুদ্ধ
দমকলকর্মীদের সাথে জাদুঘরের কর্মীরাও ঝাঁপিয়ে পড়েন ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবান সব সামগ্রী আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে৷ তবে জাদুঘরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা তখন কাজ করছিল না বলে জানান কর্মীরা৷ ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র রবার্টো রোবাডে জানিয়েছেন, জাদুঘরের কর্মীরা বেশকিছু মূল্যবান নিদর্শন বাঁচাতে সহায়তা করেছেন৷
পাঁচ ঘণ্টার যুদ্ধ
দমকল বাহিনীর ২৫টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে৷ পাঁচ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগে আরো অনেকক্ষণ৷ সাবেক পরিবেশমন্ত্রী মারিনা সিলভা এ ঘটনাকে ব্রাজিলের ইতিহাসে ‘বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেছেন৷
‘অপূরণীয় ক্ষতি’
প্রেসিডেন্ট মিশেল টেমার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘দুশ’ বছরের গবেষণা এবং অর্জিত জ্ঞান আমরা হারিয়েছি৷’’ দিনটিকে ব্রাজিলের জন্য ‘একটি দুঃখজনক দিন’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহের এই ক্ষতি অপূরণীয়৷’’
ব্যাপক ক্ষোভ
জাদুঘরের উপ পরিচালক লুইস ফের্নান্দো জিয়াস দুয়ার্চে এ ঘটনায় তীব্র ‘অসহায়ত্ব ও ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছেন৷ ব্রাজিলের সরকারের ‘ঔদাসিন্যকেও’ দায়ী করেছেন তিনি৷ ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা জাদুঘরটিতে বেশ কিছুদিন ধরেই বাজেট কমানো হচ্ছে৷ দুয়ার্চে বলেন, ‘‘আজ যেসব সম্পদ হারালাম, তা বাঁচাতে বিভিন্ন সরকারের আমলে আমরা সাহায্য চেয়ে আসছি৷’’
বিক্ষোভ দমন
ইতিহাসের এমন ক্ষতি মেনে নিতে পারেননি সাধারণ মানুষও৷ সোমবার সকাল থেকেই জাদুঘরের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানাতে থাকেন তাঁরা৷ এক পর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে, টিয়ার শেল ও মরিচের গুড়াও ছোঁড়ে পুলিশ৷ সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী সের্জিও সা লেইতোও স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘‘চাইলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো৷’’
আগুনের আগে জাদুঘর
জাতীয় ইতিহাস ও অ্যানথ্রোপলজি বিষয়ক এই জাদুঘরে গ্রেকো-রোমান এবং মিশরীয় সভ্যতার সময়কালের নিদর্শন রক্ষিত ছিল৷ তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ব্রাজিলে পাওয়া সবচেয়ে পুরনো মানব ফসিল ‘লুসিয়া’৷ এই অমূল্য নিদর্শনও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে৷