ব্যাটারিচালিত রিকশা কাহিনি
সম্প্রতি ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল৷ তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়৷
যেভাবে তৈরি হয়
চীন থেকে আমদানি করা পার্টস জোড়া লাগিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি করা হয়৷ এজন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ার্কশপ গড়ে উঠেছে৷ এমনই এক ওয়ার্কশপের কর্মী শহর আলী জানান, ‘‘রিকশাগুলোর বডি দেশেই তৈরি হয়৷ ডিসপ্লে, ব্রেক এগুলো বাহির থেকে আমদানি করা হয়৷ ব্যাটারির ভেতরের কয়েল ও অন্যান্য উপাদানও দেশের বাহির থেকে আনা হয়৷’’
খরচ
সাধারণ ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা৷ এরমধ্যে ব্যাটারির দাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা৷ ইজিবাইক ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশার মূল্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা৷ এর মধ্যে ব্যাটারির খরচ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা৷ ব্যাটারির মেয়াদকাল ৬ থেকে ১২ মাস৷
আয়
ইজিবাইকে দিনে একবার চার্জ দিতে হয়৷ চার্জবাবদ প্রতিদিন খরচ হয় ১০০ টাকা৷ আর এলাকাভেদে রিকশা জমাখরচ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা৷ একজন চালক দিনে ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা আয় করেন৷ চালক শেখ ফরিদ জানান, ‘‘সময় বদলেছে, রিক্সার বদলে এখন এসেছে অটো৷ তাই সবাই এখন অটোমুখী৷ অল্পসময়ের মধ্যে বেশি পথ অতিক্রম করা যায়৷ যাত্রী পরিবহন করা যায় অনেক বেশি৷ তাই আয়ও বেশি হয়৷’’
রিকশার সংখ্যা
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে সারাদেশে ৪০ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আছে৷ এরমধ্যে ঢাকা শহরে আছে সাত-আট লাখ৷ এসব যন্ত্রচালিত রিকশার কোনো নিবন্ধন দেয় না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ৷ ঢাকাসহ কোনো সিটি কর্পোরেশনও লাইসেন্স দেয় না৷
দুর্ঘটনা
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত বিবেচনায় শীর্ষে আছে মোটরসাইকেল৷ এরপরই আছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা৷ বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের সাবেক সহকারী পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘‘এই ধরনের যানবাহন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কারণ রিকশায় যে মটর লাগানো হয় তার গতির সঙ্গে বডি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ যারা চালান তারাও প্রশিক্ষিত নন৷’’ তিনি জানান, সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা খরচ করলে এগুলো ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব৷
চালকের বক্তব্য
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক জহিরুল বলেন, ‘‘আমরা সাবধানে চালাই, কিন্তু দ্রুততা অনুযায়ী ইজিবাইকের ব্রেক সেভাবে কাজ করে না৷ তাই অনেকসময় দুর্ঘটনা হয়৷ এছাড়া যাত্রীরাও অনেকসময় দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে বলেন৷’’
এমন রিকশা চলতে দেওয়া উচিত?
দুর্ঘটনা, চার্জের জন্য বিদ্যুৎ লাগা ইত্যাদি নানা কারণে অনেকে এমন রিকশা চলাচল বন্ধের পক্ষে৷ তবে বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান মনে করেন, ‘‘ঢাকায় যানবাহন চলাচলের জন্য মোট আয়তনের যে সাত ভাগ রাস্তা আছে তারমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ গণপরিহন চলার উপযুক্ত নয়৷ ব্যাটারিচালিত রিকশাকে আধুনিক করে চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখানে চলার অনুমতি দেয়া যায়৷ তবে মহাসড়ক এবং নগরীর মূল সড়কে চলার অনুমতি দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না৷’’
সরকারের পরিকল্পনা
ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে সরকার তিন বছরের একটি পরিকল্পনা করছে৷ এরমধ্যে আছে ঢাকার অলিগলিতে কত রিকশার প্রয়োজন তার হিসাব করে লাইসেন্স দেয়া, এমন রিকশা ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য মডেল ও যান্ত্রিক স্পেসিফিকেশন নির্ধারণ করা ইত্যাদি৷