বেটিং-এর সঙ্গে ধর্ষণের উপমা
১৪ নভেম্বর ২০১৩কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই প্রধান রণজিৎ সিনহার বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে নারীবাদীদের মধ্যে এত আলোড়ন কেন? কী বলেছিলেন তিনি? সংস্থার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে ক্রীড়বিদ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে এক অভিজ্ঞ এডিটর ভারতে সম্প্রতি আইপিএল ক্রিকেটে বেটিং বা স্পট-ফিক্সিং কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চান ক্রীড়া জগতে বেটিং, স্পট-ফিক্সিং বা বাজি ধরা বন্ধ করতে সিবিআই-এর ভূমিকা কী এবং কতটা?
সিবিআই প্রধান বলেন, যা বন্ধ করা একরকম অসম্ভব তা বৈধ করাই উচিত৷ নিষিদ্ধ করতে আইন আনা যায় ঠিকই, কিন্তু তা কার্যকর করা কঠিন৷ তাই কর বসিয়ে তা মেনে নিলে ক্ষতি কী? সরকারের ঘরে দুটো পয়সা আসবে৷ সরকার কালো টাকা ঘোষণা করার জন্য বিশেষ ‘স্কিম' যদি আনতে পারেন, বিভিন্ন রাজ্যে লটারি এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ক্যাসিনো বৈধ করতে পারেন, তাহলে বেটিং-এর ক্ষেত্রে তা না হবার কারণ নেই৷ বেটিং-এর সঙ্গে ধর্ষণের পরোক্ষ উপমা টেনে সিবিআই প্রধান বলেন, ‘‘যেমন কথায় বলে ধর্ষণ প্রতিরোধ না করতে পারলে তা উপভোগ করাই শ্রেয়৷''
এতে নারীবাদীদের ক্ষোভ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কোপ সামলাতে সিবিআই প্রধান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই উপমায় নারী মহলের অপমান হয়ে থাকলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী৷ অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দেবার জন্য তিনি দুঃখিত৷ কিন্তু তাতে ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি৷ জাতীয় মহিলা কমিশনের সভানেত্রী মনে করেন, এই ক্ষমা প্রার্থনা অর্থহীন৷ তাঁর উচিত ইস্তফা দেয়া৷ জাতীয় মহিলা কমিশন সিনহাকে নোটিশ পাঠিয়েছে৷ মহিলা কমিশনের অপর এক সদস্যের মতে, যিনি দেশের শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থার প্রধান এবং মহিলাদের নিরাপত্তা ও সম্ভ্রম রক্ষা করা যাঁর দায়িত্ব, তাঁর কাছ থেকে এই মন্তব্য ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ৷ সিবিআই প্রধানের ইস্তফা দাবি কোরে বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন এক ধাপ এগিয়ে বলেন, তাঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে তাঁর পরিবার কী একমত?
সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, আপাত দৃষ্টিতে এই মন্তব্য অশালীন মনে হলেও আক্ষরিক অর্থে তা না নেয়াই বাঞ্ছনীয়৷ তবে এর বায়োলজিক্যাল দিকটা ভালো বিশ্লেষণ করতে পারেন মনোবিজ্ঞানিরা৷ ‘‘থ্রি-ইডিয়টস'' নামে একটি হিন্দি সিনেমার উদাহরণ দিয়ে বি. কে মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ঐ সিনেমায় দেখানো হয়, হিন্দি জানে না এমন এক ছাত্র হলভর্তি ছাত্র ও শিক্ষকদের সামনে একটি বিষয় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চমৎকারের জায়গায় বলে ফেলে ‘বলাৎকার'৷ দর্শকদের মধ্যে হাসির রোল ওঠে৷ সবাই এটাকে হাল্কা ভাবে নেয়৷ তবে যেহেতু এক্ষেত্রে ব্যক্তিটি সিবিআই প্রধান, তাই এত হৈ চৈ৷