বিশ্ব এইডস রিপোর্ট
৭ ডিসেম্বর ২০১০শুধু জাতিসংঘ নয়, বিশ্ব এইডস দিবসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বিশ্ব থেকে এইডস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই মারণব্যাধির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন৷ ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতি বছরে এই রোগে নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা শতকরা ২৫ ভাগ কমিয়ে আনার এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে ওবামা প্রশাসন এই বছরের জুলাই মাসেই৷
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডাব্লিউএইচও বলেছে, এইডস-এইচআইভি এবং মানবাধিকার অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত৷ এবং এই রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা কর্মসূচি আরো অনেক বেশি কার্যকর হবে যদি তাদের মানবাধিকারকে শ্রদ্ধা করা হয়৷ ডাব্লিউএইচও-র নির্বাহী পরিচালক মার্গারেট চ্যান বলেছেন, ‘‘এইচআইভি আক্রান্তদের অধিকারের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্বাস্থ্য৷'' তিনি বলেন, ‘‘এইচআইভি আক্রান্তদের শুধু স্বাস্থ্যরক্ষার অধিকার ভোগ করার সুযোগ থাকলেই হবে না, একই সাথে তাদের শিক্ষা, কাজ, বাসস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা এবং এমন কি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আশ্রয়ের সুযোগ পাবার অধিকারও রয়েছে৷'' চ্যান বলেন, ‘‘এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে লজ্জার মনোভাব বা তাদের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শনই, বিশ্বে তাদের খারাপ চোখে দেখার প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বলেন, সারা দুনিয়ায় ২০০৯ সালে এইচআইভি পজিটিভ বলে চিহ্নিত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ৷ এবং বেশিরভাগ অঞ্চলে এইডস রোগীর সংখ্যা স্থিতিশীল থেকেছে৷ তবে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেছে, মোট আক্রান্তদের তিনভাগের একভাগের জন্যে৷ ১৯৮০ র দশকে এই রোগটি সনাক্ত হবার পর থেকে এই পর্যন্ত এইডসে প্রাণ হারিয়েছেন আড়াইলাখেরও বেশি মানুষ৷
বাংলাদেশে এইডসের বিস্তার নিয়ে আলোচনার সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক, ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বললেন, ‘‘যদিও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে আছে, তবুও পাশের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে এইডসের বিস্তার অনেক কম৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার৷ তবে সরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ১ হাজার ৭শ ৪৫ জন৷ এদের মধ্যে এইডস আক্রান্ত রোগী হচ্ছে ৬শ ১৯ জন এবং মারা গেছেন ২শ ৪ জন৷''
মায়ের কাছ থেকে শিশুর শরীরে এইচআইভির সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জোর দিয়ে এলেও গত বছর মাত্র শতকরা ৫৩ ভাগ গর্ভবতী নারী এই চিকিৎসা পেয়েছেন৷ এদিকে বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত হবার ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী কারা, জানতে চাইলে ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বললেন, ‘‘যারা নেশা দ্রব্য গ্রহণের সময়, শিরা দিয়ে সুঁচ বা সিরিঞ্জের মাধ্যমে নেশা দ্রব্য নেন, সেখানে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে যেকোন সময় সুঁচ ব্যবহারের কারণে এইডসের জীবাণু চলে যেতে পারে৷ প্রবাস থেকে আগত ব্যক্তিবর্গ, লরি চালক এবং আরেকটা বড় গোষ্ঠী হচ্ছে, আক্রান্ত গর্ভবতী মা থেকে গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময়ে বা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে সন্তানও সংক্রমিত হয়ে যেতে পারে৷ এই ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমানে সরকারি এবে বেসরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ নানা ধরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে৷ যদিও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক সময়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি নেক সময় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া হয়, এই কারণে অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি সাহায্যের জন্যে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগে আসতে লজ্জা বোধ করে৷ তবে প্রচার এবং সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে সেবা দেওয়ার জন্যে কাজ করা হচ্ছে৷''
এইচআইভি আক্রান্তদের অধিকার রক্ষায় কিছু কিছু বিষয়কে আইনে পরিণত করার আহ্বান জানিয়েছে ডাব্লিউএইচও৷ সমকামী পুরুষদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি৷ আর এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়৷ বিশ্বে এখনও ৮০টি দেশ রয়েছে যেখানে সমকামিতা বা সমকামী সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে ধরা হয় এবং ছয়টি দেশে এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক