1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিরোধী জোটে পাশাপাশি, লড়াইয়ের বার্তা পশ্চিমবঙ্গে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ জুলাই ২০২৩

পঞ্চায়েত ভোটে সহিংসতার মধ্যেই এক মঞ্চে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামেরা। এই সহাবস্থানকে কটাক্ষ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।

https://p.dw.com/p/4U30E
পঞ্চায়েত ভোট
ছবি: Subrata Goswami/DW

কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে সোম ও মঙ্গলবার বিজেপি বিরোধী জোটের বৈঠক বসেছে। সোমবারের প্রস্তুতি বৈঠকে কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধীর পাশে বসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই ফ্রেমে তাদের সঙ্গে দেখা গেছে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে। এ নিয়ে বিরোধী শিবিরকে কটাক্ষ করছে বিজেপি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই শিবিরকে 'দুর্নীতিগ্রস্ত' ও 'পরিবারতান্ত্রিক' দলগুলির জোট বলে আক্রমণ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিংসতার প্রশ্ন। মোদীর বক্তব্য, "বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা আক্রান্ত হলেও দলের নেতৃত্ব নীরব রয়েছেন। তারাই কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।"

এই সুরেই কথা বলছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব। 'আক্রান্ত' বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজ্য সফরে এসেছিল কেন্দ্রীয় দল। এই দলের প্রধান, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সোমবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে ফিরে টুইট করেন, "শুধু বিজেপি নয় বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা তৃণমূলের সন্ত্রাসে খুন হয়েছেন। অথচ সীতারাম ইয়েচুরি ও কংগ্রেস নেতৃত্ব এ নিয়ে নীরব।"

যদিও ইয়েচুরি সোমবার বেঙ্গালুরুর বৈঠকের আগেই স্পষ্ট করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে তারা কোনো জোট বা আসন সমঝোতা করবেন না। বরং কংগ্রেস ও বামেরা একজোট হয়ে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে।

‘জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে রাজ্য রাজনীতির সম্পর্ক নেই’

নিচুতলার কর্মীদের আহ্বান

এই পরিস্থিতিতে সোমবার সরাসরি বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, "নিচুতলায় যে বাম, কংগ্রেস কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন। যদি তাতে আপত্তি থাকে, তা হলে আলাদা ফ্রন্ট করে লড়াইকে শক্তিশালী করুন।"

তৃণমূল একে 'প্যানিক' প্রতিক্রিয়া বলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "বিরোধী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মণিপুরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। অথচ এই সময়ে একের পর এক দেশে সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আসলে বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত হতে দেখে ভয় পাচ্ছেন তিনি। বিরোধীরা সকলেই একসঙ্গে রয়েছে।"

২০২১ সালে বাম ও কংগ্রেসকে মুছে বিধানসভায় বিজেপি হয়ে উঠেছিল প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু গত দু'বছরে একের পর এক ভোটের লড়াইয়ে বিজেপির শক্তিক্ষয় হয়েছে। বিধানসভায় পাওয়া ৩৮ শতাংশ ভোট পঞ্চায়েতে কমে হয়েছে ২২ শতাংশ।

বাম-কংগ্রেস মিলিতভাবে বিজেপির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী জোটের বৈঠককে তুলে ধরে গেরুয়া শিবির তৃণমূল বিরোধী ভোট নিজেদের দিকে ফেরাতে চাইছে। তাই শুভেন্দু 'দিল্লিতে দোস্তি, বাংলায় কুস্তি'র তত্ত্ব খাড়া করছেন।

একরোখা রাজ্য নেতৃত্ব

বিজেপির এই প্রচার যাতে নিচুতলার কর্মীদের প্রভাবিত করতে না পারে, তা নিয়ে সতর্ক এ রাজ্যের বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, "বেঙ্গালুরুতে যা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাংলার রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। কংগ্রেস নেতৃত্ব বলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে জয়ধ্বনি করতে। বিজেপিকে এতো চিন্তা করতে হবে না।"

বাম ও কংগ্রেস বরাবর 'দিদি-মোদী সেটিং'-এর তত্ত্ব সামনে রেখেছে। বিজেপি পাল্টা পাটনা ও বেঙ্গালুরু বৈঠকের উদাহরণ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করলেও রাজ্যের বাম ও কংগ্রেস নেতারা তৃণমূলকে বিজেপি বিরোধী বলে মনে করছেন না।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা অনেক আগে থেকেই বিজেপি বিরোধী জোট গড়ার চেষ্টা করছি। তৃণমূল আগে আসেনি, ইতস্তত করেছে। ওরা যে বিজেপির পাশেই আছে, এটা ধরা পড়ে যায়। তাই এখন ক্যামোফ্লেজ করতে বিরোধী বৈঠকে অংশ নিচ্ছে।"

কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সিপিএমের বিরুদ্ধে আমাদের তীব্র লড়াই সত্ত্বেও ২০০৪ সালে মনমোহন সিং সরকারকে বামেরা সমর্থন করেছিল। জাতীয় রাজনীতিতে কী হবে, তার সঙ্গে রাজ্য রাজনীতির সম্পর্ক নেই। এখানে আমরা কাদের সঙ্গে জোট করব, সেটা রাজ্যের নেতারা ঠিক করবেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব  হস্তক্ষেপ করবেন না।"