বিডিবিডি এফএম: উদ্বাস্তুদের কল্যাণে উদ্বাস্তুদের রেডিও

উগান্ডার বিডিবিডি শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রের রেডিও স্টেশন বিডিবিডি এফএম-এর সাংবাদিক হিসাবে আছেন বেটি ইয়াঙ্গি ওয়ানি৷ কয়েক বছর আগে সাউথ সুদান থেকে পালিয়ে এখানে এসেছেন এই তরুণী৷ সেখানেই ডিডাব্লিউ অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি৷ ওয়ানি বলেন, ‘‘একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসাবে কাজ করা আমার জন্য অবিশ্বাস্য এক সুযোগ৷’’ ‘‘এই শিবিরের মানুষের জন্য আমি কথা বলতে পারি, কারণ এটি আমাদের রেডিও!’’ জানালেন তিনি৷

সাউথ সুদান থেকে আসা ক্লিমেন্ট বথোসার বয়স ২৫ বছর৷ তিনি রেডিওটির একজন সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ ব্যক্তিজীবনে ১০ জন শিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি, কিন্তু তাদের কেউই তার নিজ সন্তান নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের কারো বাবা-মা নেই৷ তারা সবাই আমার আত্মীয়৷ আমি নিশ্চিত করি তাদের খাবার আছে, তারা ক্যাম্পের স্কুলে যাচ্ছে৷ তবে, আমার উপার্জন খুব বেশি নয়৷’’

বিডিবিডি উদ্বাস্তু শিবিরে আড়াই লাখ মানুষের বসতি, যাদের ৮৪ শতাংশ নারী ও শিশু৷ তাদের বেশিরভাগই এসেছেন সাউথ সুদান থেকে৷ দেশটিতে ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে হাজারো মানুষকে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয় প্রতিবেশী দেশ উগান্ডায়৷ শিবিরে কাদা এবং খেজুরের ঝাড় দিয়ে নিজদের কুঁড়েঘর তৈরি করেন শরণার্থীরা৷ সাহায্য সংস্থার দেয়া খাবারে দিন চলে না, তাই খাদ্য উৎপাদনেরও চেষ্টাও আছেন তাদের৷

বিডিবিডি এফএম হলো ওই শরণার্থী শিবিরের এবং ওই অঞ্চলের একমাত্র রেডিও স্টেশন৷ রেডিওটির ভাষাও সাউথ সুদানী শরণার্থীদের জন্য সহজবোধ্য৷ তিনটি ভাষায় সম্প্রচারিত হয় রেডিওটি৷ এগুলো হলো: ইংরেজি, সাউথ সুদানের জুবা আরবি এবং স্থানীয় উগান্ডার ভাষা আরিঙ্গা টি৷ সাউথ সুদানের অনেকেই নিরক্ষর, ফলে তাদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে রেডিওটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷

উগান্ডার উত্তরাঞ্চলীয় শহর ইয়াম্বের কাছেই বিডিবিডি শরণার্থী শিবিরের অবস্থান৷ সেখান থেকে সাউথ সুদানের সীমান্ত খুব বেশি দূরে নয়৷ তুলনামূলকভাবে শান্ত শহর ইয়াম্বে৷ তারপরও আড়াই লাখ উদ্বাস্তুদের দেখভালের প্রশাসনিক কেন্দ্র এই শহর৷ তবে শহরটির মানুষের গড় জীবনযাপন উদ্বাস্তুদের চেয়ে খুব একটা উন্নত কিছু নয়৷

ছবির ডানের মানুষটি হলেন মাজুবো রাফাহ৷ রেডিওটিতে সম্পাদনার দায়িত্বে আছেন তিনি৷ বলেন, ‘ডিডাব্লিউ অ্যাকাডেমির খুব ভালো খ্যাতি রয়েছে৷ যখন আমি শুনলাম তারা ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে এই প্রকল্পটি পরিচালনা করছে, আমি সরাসরি আবেদন করেছিলাম৷’’ রেডিওটির লক্ষ্য উদ্বাস্তু সম্পর্কে স্থানীয়দের আরো তথ্য দেয়া, যাতে তারা উদ্বাস্তুদের জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করেন এবং সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারগুলো থেকে বেরিয়ে আসেন৷

রেডিওটিতে সম্পাদকের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের একজন হলেন আইজ্যাক দেদি৷ তিনিও এসেছেন সাউথ সুদান থেকে৷ জানালেন, ‘‘এই শিবিরের উদ্বাস্তুদের কোন বিষয়গুলো আন্দোলিত করে, আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি৷ কারণ, আমরা এখানে বাস করি, একই রকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি৷ এ কারণেই রেডিওটি শ্রোতাদের এতো কাছে পৌঁছাতে পেরেছে৷’’