1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিকল্প নোবেল পুরস্কার

মারিনা জোয়ারদার১ অক্টোবর ২০০৮

এবছর সুইডেনের রাইট লাইভলিহুড ফাউন্ডেশনের বিকল্প নোবেল পুরস্কার পেলেন যারা তাদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ ভারতের কৃষ্ণাম্মাল জগন্নাথন ও তাঁর স্বামী শংকরালিঙ্গম৷

https://p.dw.com/p/FSUG
বিকল্প নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৃষ্ণাম্মাল জগন্নাথনছবি: AP

পুরস্কৃত অন্যান্যরা হলেন কোলন শহরের নারীরোগ বিশেষজ্ঞ মণিকা হাউজার, মার্কিন সাংবাদিক এমি গডম্যান, সোমালিয়ার নারীবাদী আশা হাগী৷ বিস্তারিত শুনুন মারিনা জোয়ারদারের কাছ থেকে

ভারতে বসেই কৃষ্ণাম্মাল জগন্নাথন খবর পান যে তিনি নিজেকে নিজেকে একজন বিকল্প নোবেল বিজয়ী হিসেবে অভিহিত করতে পারেন৷ তবে তিনি সেদিকে খুব বেশী গুরুত্ব না দিয়ে বেশ সহজভাবেই বললেন, এটি পুরোপুরিই ঈশ্বরের দান৷

সেল ফোনে এই পুরস্কারের কথা জানতে পারেন তিনি স্বভাবতই আনন্দ হয় তাঁর৷ দক্ষিণ ভারতের গ্রাম বাসীদের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার বাড়ী তৈরীর পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেছেন৷ এর জন্য প্রয়োজন অনেক টাকার৷ সে প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আমি প্রার্থনা করেছি এই বলে যে সাহায্য করার সামর্থ্য যেন আমাকে দেয়া হয়, অর্থের যোগান যেন হয়৷ আমি তা দিয়ে যেন বাড়ী তৈরী করে দিতে পারি৷ এখন যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ আমার হাতে এসেছে৷ একারণেই আমি এই পুরস্কারকে পুরোপুরি ভগবানের আশীর্বাদ বলে মনে করি৷

কৃষ্ণাম্মাল এবং তাঁর স্বামী শংকরালিঙ্গম জগন্নাথন বলতে গেলে জীবনের পুরো সময়টিই অসহায় এবং দরিদ্র মানুষদের জন্য কাজ করে কাটিয়েছেন৷ বিশেষ করে দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে, ভূমিহীন মানুষদের মাঝে জমি বন্টনের কাজ করে আসছেম বহু বছর ধরে৷

বুধবার এই জুটির নাম ২০০৮ সালের বিকল্প নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ এই পুরস্কারের মধ্যে দিয়ে তামিল নাড়ুর দরিদ্র হাজার হাজার মানুষকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত হল৷

কৃষ্ণাম্মাল জগন্নাথন বেশ দরিদ্র, একটি পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ তিনিও দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত৷ আর্থিক কষ্ট থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করতে সক্ষম হন৷ শৈশবকাল সম্পর্কে তিনি জানান, অনেক ছোট বেলা থেকেই আমি শপথ গ্রহণ করি দলিতদের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার, বিশেষ করে মহিলাদের৷ ভূস্বামীদের হাত থেকে তাদের মুক্ত করাও ছিল আরেকটি প্রতিজ্ঞা৷ তাঁর মা মাত্র বত্রিশ বছর বছর বয়সে বিধবা হন৷ ঘরে তখন ১২টি সন্তান৷ ৬ টি সন্তান মারা যায় কিন্তু তার পরেও তিনি বাকি ছয় সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে সক্ষম হন৷

কৃষ্ণাম্মাল জগন্নাথন জানান, পুরস্কারের টাকা দিয়ে তিনি দলিত নারীদের জন্য সুন্দর কিছু বাড়ী তৈরী করে দেবেন৷ যারা দিন রাত পরিশ্রম করছে, ধান ক্ষেতে কাজ করছে৷ এবং দিনের শেষে যাদের অনেকে স্বামীদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছে৷

কৃষ্ণাম্মাল জগন্নাথন এপর্যন্ত প্রায় তের হাজার দলিত নারীকে জমি দিয়ে সাহায্য করতে পেরেছেন৷ বিকল্প নোবেল পুরস্কারের অর্থ মূল্য এবার প্রায় ৩ লক্ষ মার্কিন ডলার৷ তিনি জানান, এই অর্থ আরো অনেক দলিত নারীকে সাহায্য করবে৷ এই পুরস্কারকে তিনি দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রমের সোনালী ফসল হিসেবে অভিহিত করেন৷

কৃষ্ণাম্মাল এবং তাঁর স্বামী শংকরালিঙ্গম জগন্নাথনের পরিচয় ১৯২০ সালে মাহাত্মা গান্ধীর সামাজিক সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে৷ ৮২ বছর বয়স্ক কৃষ্ণাম্মাল এবং ৯৫ বছর শংকরালিঙ্গম জগন্নাথন দুজনাই প্রায় ৬০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন সমাজের নির্যাতিত, নিপীড়িত দলিত সম্প্রদায়ের জন্য৷ দলিতদের সাহায্য করতে তারা প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি সংগঠন৷ বেশ প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই তারা জানান এ অর্থ তাদের সংগঠনকে আরো দ্রুত এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে৷