1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপি ছাড়া জামাতের উপায় কী?

এম আবুল কালাম আজাদ
১২ অক্টোবর ২০২২

বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট অকার্যকর করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আলাদা জোট করলে দু'দলের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়।

https://p.dw.com/p/4I5EC
Demonstration gegen die Todesstrafe für Ali Ahsan Muhammad Mujahid in Dhaka
জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল (ফাইল ফটো)ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/Z.H. Chowdhury

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুরাতন এই মিত্রের শীতল সম্পর্কের শেষ হয় গত ডিসেম্বরে।

সে সময় এক গোপন বৈঠকে দুদলের শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত নেয় জোটবদ্ধ হয়ে না, বরং নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকার পতন ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুস্থু নির্বাচনের দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

অনেক হিসাব-নিকাশ করে তাদের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া হয়েছে। আর সে কারণেই তারা যুগপৎ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন নেতা ও রাজনীতি নিয়ে রিপোর্ট করেন এমন দুজন সাংবাদিক।

"জোটে না থাকলেও, মাঠ ও ভোটের রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াতের নীতি একই আছে। এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল। কেননা, রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা একে অপরের গুরুত্ব বোঝে,” বলছিলেন ঢাকার একজন সাংবাদিক।

তার মতে, দল দুটির মিশন ও ভিশন একই আছে। আর এ কারনেই বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকেও আর চাঙ্গা করছে না।

বাস্তবতার হিসাবে জামায়াতের পক্ষে রাজনীতির ময়দানে একা কিছু করা কঠিন। এদিকে একটি রিট মামলায় ২০১৩ সালে হাইকোর্টে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। যদিও এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে জামায়াত যা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

"এমন অবস্থায় জামায়াতের পক্ষে একা নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। ফলে দলটিকে অন্যকোনো দল বা প্রতীকের আশ্রয় নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিএনপি ছাড়া দলটির কোন উপায় আছে বলে মনে হয় না,” আরেকজন সাংবাদিক ডয়েচে ভেলেকে বলেন।

অন্যদিকে জামায়াতকেও বিএনপির প্রয়োজন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। আর সেটা ভোটের হিসাবে। বিগত সংসদ নির্বাচনের ভোটের হিসাবে দেখা যায়, জামায়াত যে ভোট পেয়েছে তা বিএনপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি কাছে টানলেও অন্য ছোট ছোট দলগুলোর ভোট তেমন নাই। ভবিষ্যতে নির্বাচনের জেতার জন্য বিএনপির তাই জামায়াতের ভোটের দরকার হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জামায়াতের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ২০-দলের সাথে সম্পর্ক খুবই ভাল। যুগপৎ আন্দোলনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা ২০-দলের সাথে আলোচনা করেই নিয়েছি। আমরা অন্যসব দলের সাথেও আলোচনা করছি। সকলের ঐক্যমতের প্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সে পথেই আমরা চলছি।

২০-দলীয় জোট কার্যকর নেই বলে শরিক জামায়াতে ইসলামীর আমীরের বক্তব্য প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, "উনি সঠিক কথা বলেছেন। এ নিয়ে বিএনপিও গত কয়েক মাস ধরে বলে আসছে। এখানে ভিন্নতার কিছু দেখছি না। জামায়াতও আমাদের আন্দোলনের সাথে আছে। জামায়াতের সাথে কোন দ্বন্দ্ব দেখতে পাচ্ছি না।"

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দও একই সুরে কথা বলেন। তিনি ডয়েচে ভেলেকে জানান, জামায়াত তার অবস্থান থেকে রাজনৈতিক কর্মসুচি ও দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে আছে। তবে আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপির সাথে কোন ভিন্নমত নাই।

আপাতত আর কোনো জোট না

গত ২৩ বছরে বিএনপি দুটি বড় রাজনৈতিক জোট গঠন করে। কিন্তু দুটিই এখন নিস্ক্রিয়। দলটির এখনকার কৌশল হল সমমনা ও সরকারবিরোধী সকল দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করা।

১৯৯৯ সালে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ৪-দলীয় জোট গঠন করা হয়। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই জোট জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। মন্ত্রিসভায় ঠায় পান জামায়াতের দুই নেতাও। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার ও অন্যান্য কারনে জামায়াত বড় বিপদে পড়ে। সে সময় তার একমাত্র ভরসা ছিল বিএনপি।

এরই মধ্যে জামায়াতের সাথে সখ্যের কারনে দেশে-বিদেশে বিএনপি সমালোচনার সম্মুখীন হয়। দলের ভিতর থেকে দাবী উঠে জামায়াতকে পরিত্যাগ করার। তাই ২০১৮ সালে জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপি নতুন জোটে গঠন করে এবং তখন থেকেই মূলত জামায়াতের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করে ২০-দলীয় জোটকে অকার্যকর করে বিএনপি। বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল সমমনা অন্য সব দলকে কাছে টানা এবং আন্দোলনে শরিক করা। ফলে আপাতত তারা আর জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ ভাবে অথবা একই মঞ্চে কিছু করবে না।

তবে শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া হয়েছে। কেননা, রাজনীতিতে বিশেষ করে ভোটের রাজনীতিতে একে অপরের গুরুত্ব জানে। তবে দুদলের শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা আর জোটবদ্ধ না থেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেবে। একারণে দেখা যায়, গত জুলাই মাসের থেকে বিএনপি যত কর্মসূচি করেছে তা একা করেছে, কোন দলের সাথে করেনি।

জামাতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক বলেন, আলোচনা করে একমত হয়ে দুদলের নেতারা এবারের আন্দোলন নিজ নিজ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। "একমত হয়েই যেহেতু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই কারো মধ্যে গ্যাপ বা ভুল বোঝাবুঝি থাকার প্রশ্ন উঠে না।"

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনের আগে আর প্রকাশ্যে কোন কিছু করবে না। ভিতরে ভিতরে তাদের মধ্য বোঝাপড়া থাকবে। তবে নির্বাচনের আগে অনেক কিছু বদলে যেতে পারে।

নির্বাচনের আগে হিসাব পাল্টে যেতে পারে

বিএনপি ও জামায়াতের নেতার ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচনের আগে সবকিছু বিবেচনা করে আবার জোট গঠন করা যেতে পারে। সেটা হবে সম্পূর্ণ নির্বাচনকে ঘিরে।

ভবিষ্যতে জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার বা অন্যকোনো জোট গঠনের ব্যাপারে সরাসরি উত্তর না দিয়ে আমীর খসরু বলেন, বর্তমানে যা করছি তা হল যুগপৎ আন্দোলন। এটা সকলের জন্য প্রযোজ্য। তবে চলার পথে যদি কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার হয় তা সবাই মিলে নেয়া হবে।

জামাতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকও এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেননি। তিনি বলেন, "বাস্তবতার নিরিখে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন। অতীতে এমন হয়েছে, ভবিষ্যতের হবে। সময়ই তা বলে দিবে।"