বার্লিনে ‘কারি ভুর্স্ট’ মিউজিয়াম
৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯বিনে পয়সায় কোন মিউজিয়ামে প্রবশাধিকার নেই, টিকেট কাটতেই হবে৷
জার্মানির অন্যকোন শহরকে নয়, বার্লিনকেই বলা হয় মিউজিয়ামের শহর৷ বার্লিনে কি নিয়ে মিউজিয়াম নেই? জুতোর ৷ পোশাকের৷ টুপির (হ্যাট)৷ নারীর বক্ষবন্ধনীর৷ এমক কী রসুনেরও৷ সম্প্রতি যোগ হলো ‘কারি ভুর্স্ট' মিউজিয়াম৷ কারি ভুর্স্ট মূলত এক ধরণের সসেজ৷ বিশেষ মাংসের সসেজ৷ ঠিক হট ডগ নয়, যদিও দেখতে হুবহু অনকটাই ৷ কারি ভুর্স্ট স্পাইসি৷ যেহেতু ‘কারি' অতএব মসল্লা থাকবেই৷ তবে হালকা৷ সর্ষেবটার সস, কেচআপ, গুঁড়ো পাপরিকা মাখিয়ে খেতে দারুণ সুস্বাদু৷ কারি ভুর্স্ট, ব্রাটভুর্স্ট, ভিনার বিভিন্ন ধরণের সসেজ জার্মানদের প্রিয়৷ তবে বিশেষ করে বার্লিনে সবচেয়ে প্রিয় কারিভুর্স্ট৷ অনেকে মচমচে পাঁউরুটি, আলু ভাজি দিয়েও খেতে ভালাবাসে৷
কারি ভুর্স্টের (সসেজ) ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক আছে৷দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রেশনিং পদ্ধতি চালু হয়৷ রুটি, গম, আলু, মাংস, দুধ, মাখন এমন কী জল খরচেরও রেশনিং৷ মাংসে যেহেতু প্রোটিন অধিক, সংরক্ষণের ব্যবস্থা দীর্ঘ, এই বোধে ভুর্স্টের আবিস্কার৷ হামবুর্গ শহরের দাবি, হামবার্গারের সসেজ হামবুর্গেই প্রথম তৈরি৷ বার্লিন মানতে নারাজ৷দাবি করে , খাদ্যে প্রথম রেশনিং বার্লিনে৷ বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকায় দুই মাংস বিক্রেতা, মাংস কিমা (জার্মান ভাষায়- ‘হাক ফ্লাইশ') করে প্রথম ভুর্স্ট সসেজ তৈরি করেছিল৷
জার্মানদের ইতিমাসজ্ঞান সবচেয়ে টনটনে৷ কবে, কোথায়, কোন সময়ে কী ঘটেছিল সব লিপিবদ্ধ৷ আশ্চর্য এই ভুর্স্টের ইতিহাস পরিস্কার নয়৷
তন্ন তন্ন করে খুজেঁও পায়নি সঠিক তথ্য ৷ এ-যেন সুকুমার রায়ের ‘‘কি মুস্কিল'' ছড়া ৷ কেতাবে দুনিয়ার সব খবর লেখা আছে৷ চাটনি বানানোর খবর থেকে শুরু করে, মুষ্টিযোগের বিধান, দাঁতের মাজন বানাবার কায়দাকেতাও ৷ কেবল নেই ‘পাগলা ষাঁড়ে করলে তাড়া কেমন করে ঠেকাবে৷'
কারিভুর্স্টের দাবিদার হামবুর্গ, বার্লিন যে শহরই হোক, এই দাবি তথা ইতিহাস এখন গৌণ৷ জার্মানদের প্রিয় খাদ্য এই কারিভুর্স্ট৷ অতএব মিউজিয়াম জরুরি৷
সঙ্গীতশিল্পী হ্যারবার্ট গ্রোনেমাইয়ার বার্লিনের ‘মিটে' (মধ্য) এলাকার কারিভুর্স্ট মিউজিয়াম খুলেছেন ৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ ক'রে৷
মিউজিয়ামের কিউরেটর মার্টিন লোয়্যেভার৷ তিনি বলেন, এই মিউজিয়াম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খাদ্য রেশনিং এর কাহিনি -ঘটনা তুলে ধরবে নানা প্রেক্ষিতে৷
বিশ্বের যে কোন প্রান্তের ভ্রামণিক বার্লিন এলে ঐতিহাসিক চেকপয়েন্ট চার্লি দেখবেই৷ চেক পয়েন্টের গা ঘেঁষে শ্যুয়েটৎসেন স্ট্রাসে ৷ ৭০ নম্বার বাড়ির একতলায় সবটা জুড়েই কারিভুর্স্ট যাদুঘর৷
কেবল কারিভুর্স্টই নয়, যাদুঘরে আরো নানা ভুর্স্ট ছোট বড় বিভিন্ন প্লেটে সাজানো৷ কাচের বাক্সের মধ্যে৷ যাতে, মশা মাছি না লাগে৷
যাদুঘরে চারটি ভাষায় ভুর্স্টের বিবরণী৷ রন্ধন প্রণালী থেকে শুরু করে কোন্ মসলা মাখিয়ে খেতে সুস্বাদু সেই তথ্যও দেওয়া আছে৷
যাদুঘরের প্রবেশ মূল্য ৪ ইউরো৷
এই অভিনব যাদুঘর দেখতে দেখতে রসনায় জল আসবেই৷ মিউজিয়ামের এক কোণে কারি ভুর্স্টের ইমবিস৷ এক তরুণী ভাজছেন দুই তরুণী পরিবেশন করছেন৷ গরম গরম খেয়ে তারিফও করছেন দর্শকরা৷ গোটা মিউজিয়াম জুড়েই কারিভুর্স্টের ম ম গন্ধ৷
শুধু দেখলেই হবে না, খরচাও আছে৷
প্রতিবেদক: দাউদ হায়দার, বার্লিন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক