বার্লিনের স্কুলে ইহুদিবিদ্বেষ
৩ এপ্রিল ২০১৭ব্রিটেনের ‘দ্য জিউয়িশ ক্রনিকল'-এ প্রকাশিত কাহিনীটি সপ্তাহান্তে জার্মানির সমাদৃত ‘ স্পিগেল' পত্রিকার অনলাইন সংস্করণেও স্থান পায়৷
‘ক্রনিকল' ইহুদি ছাত্রটির আসল নাম প্রকাশ করেনি, তাকে শুধুমাত্র ‘ফিলিপ' বলে অভিহিত করেছে - তবে জানিয়েছে যে, ‘ফিলিপ' ইহুদি বিদ্বেষের কারণে বার্লিনের ফ্রিডেনাউ এলাকার ‘গেমাইনশাফ্টসশুলে' (কম্প্রেহেনসিভ স্কুল) ছেড়ে অন্য একটি স্কুলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে৷
সে যে ইহুদি, এটা জানাজানি হয়ে যাবার পর ‘ফিলিপ'কে গালিগালাজ ও নানা অপ্রিয় মন্তব্য সহ্য করতে হয়৷ তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করা হয় ও একটি প্লাস্টিকের পিস্তল দিয়ে ভয় দেখানো হয়৷ তার একজন (সাবেক) সহপাঠী নাকি তাকে বলে, ‘‘তুমি ছেলেটা ভালো, তবুও আমি তোমার বন্ধু হতে পারব না৷ ইহুদিরা সবাই খুনি৷''
ফিলিপের মা তাকে স্কুল ছাড়িয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ ছেলেটি নিজে বলেছে যে, এসব ঘটার সময় সে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি, কী ঘটছে৷ ' ‘ক্রনিকল' লিখেছে যে, ফিলিপের ঘটনা ‘‘ইহুদি ছাত্রদের দীর্ঘকালীন ইহুদিবিদ্বেষি হয়রানির'' আরকটি নিদর্শন৷
প্রথম ঘটনা
সংশ্লিষ্ট স্কুলটি কিন্তু একটি সহিষ্ণুতা বৃদ্ধির উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে থাকে, যার নাম হলো ‘জাতিবাদবর্জিত স্কুল - সাহসী স্কুল'৷ এই উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী স্কুলগুলি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও আন্তঃধর্মীয় শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতার নীতি মেনে চলার শপথ নেয়৷ কিন্তু ফিলিপের সহপাঠীরা দৃশ্যত সে নীতির ধার ধারেনি৷
স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘আমরা এজন্য আমাদের অনুতাপ আর বিমূঢ়তা প্রকাশ করতে চাই যে, (আমাদের) একজন ছাত্রকে তার প্রাত্যহিক স্কুলজীবনে ইহুদিবিদ্বেষ সহ্য করতে হয়েছে৷''
ফিলিপের প্রাক্তন স্কুল আরো জানায় যে, ঐ স্কুলে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ ফিলিপের দাদু-দিদাকে স্কুলে এসে বক্তৃতা দেবার অনুরোধ জানিয়েছেন৷ তাঁরা দুজনই হলোকস্টের সাক্ষী৷ এছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ সহিষ্ণুতাপন্থি ‘সালাম-শালোম উদ্যোগ' ও বার্লিনের নগর প্রশাসনের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছে৷ অপরদিকে ফিলিপকে যারা ত্যক্ত করেছে, তাদের নাম পুলিশকে জানানো হয়েছে বলে স্কুলের তরফ থেকে বলা হয়েছে৷
‘ইহুদি পেলে আমিই পেটাতাম'
তাহলে কি ফিলিপের ঘটনা একটি একক ঘটনা এবং ব্যতিক্রম? নাকি বার্লিনের যেসব স্কুলে মুসলিম ছাত্রদের সংখ্যা পর্যাপ্ত, সেখানে ইহুদি বিদ্বেষ একটা সাধারণ সমস্যা?
জার্মানিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে মুসলিম এবং একই সঙ্গে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের উদ্বাস্তু নীতির প্রতি বিরূপ সমালোচনায়৷ বস্তুত ফিলিপকে যারা হয়রানি করেছে, তারা যে উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান, এমন কোনো তথ্য নেই৷ অপরদিকে জার্মানিতে ইহুদি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের উপর আক্রমণ শুধু মুসলিম নয়, চরম দক্ষিণপন্থি মহল থেকেও হয়ে থাকে৷
অপরদিকে এটাও সত্যি যে, কিছু কিছু জার্মান স্কুলের মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষি মনোভাব ও কথাবার্তার চল আছে৷ এ কারণে কিছু কিছু ইহুদি ছাত্র বেসরকারি ইহুদি স্কুলে যেতে পছন্দ করে বলে জানিয়েছিলেন বার্লিনে মার্কিন ইহুদি কমিটির পরিচালক ডায়ার ব্যার্গার৷ দু'বছর আগে ‘বিল্ড আম জোনটাগ' পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছিলেন৷ সে বছরই ডয়েচলান্ডফুঙ্ক বেতারকেন্দ্রের একটি রিপোর্টে বার্লিনের বিভিন্ন স্কুলের মুসলিম ছাত্রকে মন্তব্য করতে শোনা যায়, ‘‘আমাদের স্কুলে কোনো ইহুদি ঢুকলে, তাকে পেটানো হবে - আমিও তাকে পেটাবো৷''
‘দ্য জিউয়িশ ক্রনিকল' পত্রিকায় বার্লিনের মোজেস মেন্ডেলসন জিউয়িশ হাই স্কুলের অধ্যক্ষ আরন একস্টেট-এর একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে৷ একস্টেট জানিয়েছেন, প্রতিবছর ছয় থেকে দশজন বাবা-মা ইহুদিবিদ্বেষি হয়রানির কারণে তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল বদলানোর চেষ্টা করেন৷
ইহুদি শিক্ষকরাও ভীত
শুধু বার্লিনেই নয়, জার্মানির অন্যত্রও ইহুদি শিক্ষকরা নাকি তাদের ছাত্রদের বলতে ভয় পান যে, তারা ইহুদি৷ ২০১৫ সালে উত্তর জার্মানির এক ইহুদি শিক্ষক ডয়েচলান্ডফুঙ্ককে বলেছিলেন যে, তাঁর এক ছাত্র নাকি তাঁকে বলেছে: ‘‘একজন ইহুদিকে দেখলেই আমি তাকে খুন করে ফেলব৷''
ফিলিপের ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যের পর বার্লিন কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে, শহরের কিছু স্কুলে ‘‘ইহুদি'' কথাটা গালাগালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷
জেফারসন চেজ/এসি