1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বান্দরবানের পাহাড়ে আরো ৫ জঙ্গি গ্রেপ্তার

১২ জানুয়ারি ২০২৩

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র আরো পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব৷ এই সদস্যরা বান্দরবানের পাহাড়ের গহীনে সশস্ত্র দল ‘কেএনএফ' বা ‘বম পার্টি'র আস্তানায় প্রশিক্ষণ নেন৷

https://p.dw.com/p/4M4Jx
ছবি: picture-alliance/dpa

রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার গভীর অরণ্যে অভিযান  চালিয়ে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এলিট বাহিনী র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন৷

গ্রেপ্তার চার জঙ্গি হলেন-নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার মুকিল্লা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে নিজামুদ্দিন হিরণ ওরফে ইউসুফ (৩০), সিলেটের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন (৩০) এবং কুমিল্লার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা (২৭), মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াছ ওরফে বাইরু (২১)৷ এবং বাকি একজন কুমিল্লার কিশোর (১৭)৷

বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সালেহ আহমেদ, সাদিকুর রহমান ও কুমিল্লার এক কিশোরকে থানচি এবং বায়েজিদ ও নিজামুদ্দিন হিরণকে রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷  তবে তাদের কাছে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে র‌্যাব৷

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার কিশোর (১৭) কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ আটজনের মধ্যে একজন৷ সাদিকুর সিলেট থেকে নিখোঁজ হওয়া চার তরুণের মধ্যে একজন৷ গ্রেপ্তার সবার নাম ‘হিজরতের উদ্দেশ্যে' নিখোঁজ হওয়া ৫৫ জনের তালিকায় রয়েছে৷

পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে অক্টোবরে সংবাদ সম্মেলন করে জানান র‌্যাব৷

অক্টোবর মাস থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় যৌথ অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব ও সেনা সদস্যরা৷ পরবর্তী সময়ে এ অভিযান চালানো হয় থানচি উপজেলাতেও৷ যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে এ পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র ১২ জন সদস্য এবং কেএনএফের পাহাড়ে যারা ‘বম পার্টি' নামে পরিচিত তাদের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

গ্রেপ্তার সদস্যদের বরাতে র‌্যাব ২১ অক্টোবর জানিয়েছিল, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সাথে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমিরের সমঝোতা হয়৷ পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফ'র ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে চুক্তিও হয়৷ সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি কেএনএফ সদস্যদের খাবার খরচ বহন করে জামাতুল আনসার৷

বুধবার যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারাও এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সেখানে প্রশিক্ষণে গিয়েছিলেন৷ কেউ কেউ প্রশিক্ষণ শেষ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন৷

তিনি জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র কাঠামো সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, সংগঠনটির ছয়জন শুরা সদস্য রয়েছে৷ তার মধ্যে আব্দুলাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার দ্বিতীয় প্রধান, মোশারফ হোসেন রাকিব অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান৷

এ ছাড়া সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক করতেন এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান৷

অপরদিকে ভাংচুংলিয়াম বম, লালজং মুই ও লালমুনঠিয়ালের তত্ত্বাবধানে কেএনএফ গহীন পাহাড়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়৷

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক তাঁর লিখিত বক্তব্যে গ্রেপ্তার পাঁচজনের পরিচয় ও জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিবরণও তুলে ধরেন৷

নিজামুদ্দিন হিরণ ওরফে ইউসুফ: নোয়াখালীর এই যুবক ২০১৯ সালে ওমান থেকে দেশে ফিরে এসে ব্যবসার সুবাদে জহির নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদের উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করেন৷ ২০২১ সালে তিনি ‘হিজরতের' প্রস্তুতি গ্রহণ করে৷ এরপর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে যান৷

সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা: কুমিল্লার একটি নূরানী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন৷ পাহাড়ে অবস্থানরত অপর এক জঙ্গি নেতা মো. দিদার হোসেন ওরফে চম্পাইয়ের মাধ্যমে এই জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হন৷ ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনিসহ আরও সাতজন সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য কেএনএফ ক্যাম্পে যান৷

সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন: সিলেটের একটি জিমনেসিয়ামে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন৷ জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য রনবীরের মাধ্যমে তিনি এই সংগঠনে যোগদান করেন৷ সিলেট থেকে যে চারজন তরুণ স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়ে জঙ্গিবাদের জড়ান, তিনি তার মধ্যে একজন৷ ফারকুন জঙ্গি সংগঠনের দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী৷ তিনি ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য বান্দরবানে আসেন৷ সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন৷

বায়েজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াছ ওরফে বাইরু: সংগঠনটির আমির আনিছ মাহমুদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন৷ ২০২১ সালের নভেম্বরে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তিনি বান্দরবানে আসেন৷

১৭ বছর বয়সি কিশোর: কুমিল্লা থেকে ‘হিজরতের উদ্দেশ্যে' যে আটজন নিখোঁজ হয় তার মধ্যে সে একজন৷ কুমিল্লা থেকে বেরিয়ে সে নারায়ণগঞ্জে আব্দুল্লাহ নাফিজ নামে একজনের তত্ত্বাবধানে ছিলেন৷ ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সে বান্দরবানে আসে৷ তারপর থেকে সেখানেই ছিল৷

কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আটজনের মধ্যে চারজনকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং একজনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷

বাকি তিনজনকে খুঁজে বের করতে অভিযান চলমান রয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে৷

এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)