বাড়িতে জরুরি রসদ রাখতে বলল জার্মানি
বেসামরিক প্রতিরক্ষার অঙ্গ হিসেবে জার্মান সরকার পরিকল্পনা করছেন যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটলে, প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি সামলে ওঠার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের বাড়িতে কিছু কিছু করে রসদ রাখতে হবে৷
সব কিছুর জন্য প্রস্তুত
সরকারের ‘বেসামরিক প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা’ অনুযায়ী জার্মানদের বাড়িতে দশদিনের মতো খাবার আর পাঁচদিনের মতো পানীয় জল রাখতে হবে, এছাড়া ওষুধ ও কিছু নগদ টাকা৷ উদ্দেশ্য হলো, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্য এসে পৌঁছানো অবধি নাগরিকরা কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন৷
বিপর্যয়ের প্রস্তুতি
ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ শেষ হবার পর আর এ ধরনের বেসামরিক প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির প্রশ্ন ওঠেনি৷ পরিকল্পনার সূচনা ২০১২ সালে, এক সংসদীয় কমিটির ফরমায়েশে৷ এখন সেটি পেশ করা হলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক পর্যায় নতুন পদক্ষেপের সঙ্গে; অপরদিকে জার্মানিতে সন্ত্রাসী আক্রমণের শঙ্কাও বেড়েছে৷ খোদ পরিকল্পনাটিতে নতুন কিছু নেই৷ জার্মান কর্তৃপক্ষ বহুকাল ধরেই বাড়িতে দু’সপ্তাহের মতো জরুরি রসদ রাখতে বলে আসছেন৷
পর্যাপ্ত পানীয়
বেসামরিক সুরক্ষা ও বিপর্যয় ত্রাণ সংক্রান্ত ফেডারাল দপ্তর একটি অনলাইন চেকলিস্ট প্রকাশ করেছে, যা-তে ১৪ দিনের জন্য জরুরি সাহায্যের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে – সুপারিশ হিসেবে৷ এই তালিকার সবচেয়ে জরুরি আইটেম হল, মানুষ প্রতি ২৮ লিটার পানি জমিয়ে রাখা – দিনে দু’লিটার হারে ১৪ দিনের জন্য ২৮ লিটার৷ কারণ মানুষ না খেয়ে কয়েক সপ্তাহ বাঁচতে পারে, কিন্তু জল না খেয়ে চারদিনের বেশি বাঁচে না৷
ভাঁড়ার
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত একটি অনলাইন ক্যালকুলেটর অনুযায়ী একটি মানুষের জন্য দু’সপ্তাহের রসদে থাকবে ৪.৯ কিলো চাল, রুটি বা নুডল জাতীয় খাদ্য; এছাড়া ৫.৬ কিলো সবজি, ৩.৭ কিলো দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ফলমূল ও বাদাম; সেই সঙ্গে ২.১ কিলো মাছ-মাংস৷ এ সব খাবারই রেফ্রিজারেটর ছাড়া রাখতে পারা চাই৷
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
কলের জল অথবা বিদ্যুৎ ছাড়া হাত ধোওয়া, চান করা অথবা দাঁত মাজা, শিল্পোন্নত বিশ্বে সবই সমস্যাকর৷ বড় বড় গামলায় বা ক্যানে জল ধরে রাখা যায়৷ কিন্তু বাড়িতে সাবান, কাপড় ধোয়ার সাবান, দাঁতের মাজন, টয়লেট পেপার ইত্যাদি মজুদ থাকা অতি জরুরি৷
ওষুধের আলমারি
হাসপাতালে না যেতে পারলে, এই ওষুধের আলমারিই হয়তো প্রাণ বাঁচাবে, যদি তা ঠিকমতো ভরা থাকে৷ প্রথমেই থাকা চাই ফার্স্ট এইড কিট, সেই সঙ্গে ডাক্তারের দেওয়া ব্যক্তিগত ওষুধপত্র, জ্বরজারি, পেট নামা, বমি অথবা ব্যথাবেদনা থামানো বা কমানোর ওষুধ; থার্মোমিটার ও ডিসইনফেক্ট্যান্টও থাকতে হবে৷
নিষ্প্রদীপ
আপৎকালীন অবস্থায় বেশ কয়েক দিনের জন্য বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে৷ কাজেই বাড়িতে টর্চ ও ব্যাটারি, দেশলাই ও মোমবাতি রাখা ভালো৷ ফায়ারপ্লেস থাকলে কয়লার ব্রিকেট আর কাঠ রাখলেও ভুল করা হবে না৷
রেডিও শোনা
ব্যাটারি চালিত রেডিও থেকে সরকারি নির্দেশ, সতর্কতা বা অন্যান্য তথ্য ও খবরাখবর শোনা যেতে পারে৷ কাজেই রেডিও-র জন্য বাড়তি ব্যাটারি জমা রাখতে হবে৷
নগদ টাকা
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যাংকে যাবার সময় না থাকতে পারে, এটিএম বন্ধ থাকতে পারে৷ কাজেই বাড়িতে কিছু নগদ টাকা রাখা প্রয়োজন৷
এমার্জেন্সি ব্যাগ
বিপদের মুখে যদি বাড়ি ছাড়ার দরকার হয়, তাহলে একটি ব্যাগে বুনিয়াদি কিছু রসদ প্যাক করে রাখা ভালো৷ সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী সেই ব্যাগে থাকবে ফার্স্ট এইড-এর সরঞ্জাম, দু’দিনের খাবার, জরুরি ব্যক্তিগত কাগজপত্র, জলের বোতল, স্লিপিং ব্যাগ, কিছু জামাকাপড় ইত্যাদি৷