বাংলার গর্ব পোড়ামাটির সম্পদ
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ছোট শহর বিষ্ণুপুর বিখ্যাত তার অসাধারণ টেরাকোটা বা পোড়া মাটির ভাস্কর্যের জন্য, যা দেখা যায় মূলত নানা ধরনের পট আর পুতুলে এবং মন্দিরের গায়ের কারুকার্যে৷
লাল মাটির সরানে
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া – এই জেলাগুলো পরিচিত তার লাল মাটির জন্য৷ ল্যাটেরাইট গোত্রের এই লাল মাটি পুড়িয়েই হয় বিষ্ণুপুরের বিশ্ববিখ্যাত টেরাকোটার কাজ৷
নিজস্ব স্থাপত্যরীতি
বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দিরের কিছু নিজস্বতা আছে৷ যেমন মূল মন্দিরের সামনে, মন্দিরের আদলেই একটি ছোট আকারের তুলসীমঞ্চ৷ বাংলার স্থাপত্যশেলীর নিদর্শন এগুলিও৷
সময়ের আঁচড়
সব মন্দিরের গায়ের রিলিফের কাজই যে যথাযথভাবে সংরক্ষিত করা গেছে, তা নয়৷ কোনো কোনো মন্দির জীর্ণ হয়েছে সময়ের আঁচড়েও৷
তবু অনন্য
তবু বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যরীতির অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে এইসব টেরাকোটা মন্দির৷ যেমন এই বাংলা চালা, যে নকশা উঠে এসেছে গ্রামবাংলার খড়ের চাল থেকেই৷
ইসলামি প্রভাব
সুলতানি আমলে ইঁটের খিলান আর গম্বুজ তৈরির যে স্থাপত্যরীতি, তার প্রভাবও স্পষ্ট বিষ্ণুপুরের মন্দিরের খিলানের কাজে৷
স্থাপত্য দক্ষতা
১৭ এবং ১৮ শতকে এইসব পোড়ামাটির মন্দির যাঁরা তৈরি করেছিলেন, সেই স্থপতিরা যে কী অসামান্য দক্ষতার অধিকারী ছিলেন, তা বোঝা যায় ক্ষয় ধরা ইটের পাঁজার দিকে তাকালেও৷
পোড়ামাটির শিল্প
শুধু স্থাপত্যরীতিই নয়, বিষ্ণুপুরের মন্দির প্রসিদ্ধ তার গায়ের পোড়ামাটির টালির কারুকাজের জন্যেও৷ পুরাণের কাহিনি থেকে যুদ্ধবিগ্রহের ইতিহাস, শিকারের গল্প – সবই বলা হয়েছে তাতে৷
জাতীয় সম্পদ
এমনই চমৎকারিত্ব পোড়ামাটির টালির এই রিলিফের কাজের, ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বিভাগ সবকটি মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে নিজেদের হাতে৷
কৃষ্ণের জীবন
বিষ্ণুপুরের এসব মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন মল্ল রাজারা৷ তাঁরা ছিলেন বৈষ্ণব৷ তাই মন্দিরের কারুকাজে কৃষ্ণজীবনের প্রাধান্য৷
আন্তর্জাতিক পরিচিতি
টেরাকোটার মন্দির আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছে বিষ্ণুপুরকে, বাংলার শিল্পকে৷ বিশ্বের দরবারে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতির অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে এই টেরাকোটা শিল্প৷