বাংলায় আল কায়দা? বিপদ কতটা?
১১ জানুয়ারি ২০২১পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় গত শনিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর সঙ্গে দেখা করার পরেই মন্তব্য করেন, পশ্চিমবঙ্গে আল কায়দার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের সংগঠন বাড়িয়ে চলেছে, কিন্তু রাজ্য সরকার নির্বিকার৷ ভোটের বছরে কেন্দ্রের সরকারের কাছে রাজ্যপালের এই ধরনের অভিযোগের অবশ্যই রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে৷ বিশেষত যেখানে পশ্চিমবঙ্গে শাসন ক্ষমতা দখলে তৎপর বিজেপি বারবারই রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ তুলে, কেন্দ্রীয় শাসন জারির দাবি তুলছে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি আদতেই কতটা উদ্বেগজনক?
সারা ভারতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান এবং অভিযানের মূল দায়িত্ব জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ'র৷ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে গত বছর নভেম্বরে জঙ্গিসন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারি এবং তাদের ডেরায় তল্লাসির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এনআইএর এক অফিসার পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানালেন, উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে৷ মাটির তলায় কংক্রিটের ঘর এবং সুড়ঙ্গ তৈরি ছাড়াও, হাতে তৈরি বিস্ফোরক খুঁজে পাওয়া গেছে৷ তল্লাশি করে পাওয়া গেছে হাতে তৈরি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, যা এমনকি মাওবাদী জঙ্গিরাও কখনও বানায়নি৷ এসবের অর্থ একটাই৷ বড় কোনও নাশকতার প্রস্তুতি চলছিল৷
এনআইএ'র ওই অফিসার জানালেন, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ দায়ের হওয়া আর.সি-৩১/২০২০ মামলায় দেশের একাধিক জায়গা থেকে মোট ১১ জনকে আটক করা হয়েছে, যারা প্রত্যেকেই বাঙালি এবং পশ্চিমবঙ্গেরবাসিন্দা৷ এর মধ্যে একদিনেই আটক হয়েছে নয় জন৷ ছয় জন মুর্শিদাবাদে এবং তিন জন কেরলে৷ এই দলটির নেতা সন্দেহে আটক হয়েছে জনৈক মুরশিদ হাসান ওরফে শফিক, যে পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের একাধিক জায়গা ঘুরে আল কায়দার জিহাদি মতবাদ প্রচার করছিল বলে অভিযোগ৷
যদিও মুর্শিদাবাদের গ্রেপ্তারির ঘটনায় পাল্টা অভিযোগও উঠেছিল, যে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে এনআইএ'র হাতে, তারা সবাই নিরীহ সাধারণ মানুষজন৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সংস্থা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার বশবর্তী হয়েই মুসলিমদের অভিযুক্ত করছে৷ কিন্তু বিষয়টা এরকম নয় তো যে বিজেপির মুসলিম-বিরোধিতার নীতির বিরোধিতা করতে গিয়ে আসল বিপদটা নজর এড়িয়ে যাচ্ছে?
অধ্যাপক শামিম আহমেদ, যিনি সব সময়ই সোশাল মিডিয়ায় এবং সভা-সমিতিতে এই ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ধরপাকড় হেনস্থার প্রতিবাদ করে থাকেন, তিনি কিন্তু প্রশ্নটার গুরুত্ব স্বীকার করছেন৷ তবে তাঁর মতে, ‘‘(বিপদের সম্ভাবনা) বেশিরভাগ সময়ে চোখের আড়ালেই থাকে৷ আমার তো মুর্শিদাবাদে, সীমান্ত এলাকায় বাড়ি৷ যারা এই ধরনের কাজ করে থাকে, তাদের সঙ্গে পুলিশ, প্রশাসনের একটা অংশ তো আছে৷ যারা কাজটা করছে, তারা মুসলমান, কিন্তু টাকাপয়সার জোগানে হিন্দু লোকও যুক্ত আছে৷ এটা একটা বড় র্যাকেটও৷ অস্ত্রশস্ত্র থেকে শুরু করে সব কিছুই৷ ছোটবেলা থেকেই এটা আমরা দেখে আসছি৷ এর মধ্যে ধর্মীয় বিষয় ছিল না৷ যেহেতু সেখানে ৬০-৬৫% মুসলমান, সেহেতু যারা যুক্ত আছে, তাদের অধিকাংশই মুসলমান৷ কিন্তু হিন্দুরাও যুক্ত আছে কম-বেশি৷''
রাজ্যপাল ধনকড়ের অভিযোগের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি৷ তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুরু থেকেই মুর্শিদাবাদেএনআইএর কাজকর্ম সম্বন্ধে অবহিত থাকছেন৷ প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার সময়, তিনি ধর্মনিরপেক্ষভাবে প্রশাসকের ভূমিকা পালন করেন কি না, সেটাই এবার দেখার৷