বাসে ধর্ষণ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪গত বছরের ২৪শে জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ‘শুভযাত্রা পরিবহণের' বাসে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ সাভারের কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়িতে যাচ্ছিলেন ওই গার্মেন্টসকর্মী৷ অন্য যাত্রীদের কৌশলে বাস থেকে নামিয়ে চলন্ত বাসে চালক ও সহকারী তাঁর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়৷ ধর্ষণের পর তাঁকে বাস থেকে ফেলে দেয়া হয়৷ স্থানীয় লোকজন খবর দিলে পুলিশ মানিকগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে৷ এরপর মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়৷ এই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে সারা দেশে নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷
ঐ দিন বিকেলে পুলিশ মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে চালক দীপু মিয়া এবং রাতে ঢাকার আশুলিয়ার নবীনগর থেকে চালকের সহকারী কাশেমকে গ্রেপ্তার করে৷ ধর্ষণের শিকার পোশাক শ্রমিক বাসের চালক দীপু ও সহকারী কাশেমের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন৷ আসামি দীপু ও কাশেমকে আদালতে হাজির করা হলে তারা দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়৷ পুলিশ চালক ও তার সহকারীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়ার পর, আদালত ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণা করে৷
বৃহস্পতিবার রায়ে মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম মোস্তাফা দেওয়ান বাসচালক দীপু মিয়া ও তার সহকারী কাশেম মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে৷ মামলার আরেকটি ধারায় দীপুকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক৷ মামলার দুই আসামিই রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিল৷ তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷
আদালতে গার্মেন্টস কর্মীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি৷ রায় ঘোষণার পর সমিতির চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট সালমা আলী ডয়চে ভেলের কাছে সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় এই রায়টি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে৷ তবে তাঁর কথায়, শুধু আদালতের রায় নয়, নারীদের নিরাপত্তায় সমাজ এবং রাষ্ট্রকে আরো এগিয়ে আসতে হবে৷
আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ অবশ্য ন্যায় বিচার না পাওয়ার দাবি করে উচ্চ আদালতে আপিলের কথা বলেছেন৷
এদিকে রায় ঘোষণার সময় গার্মেন্টস কর্মী বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না৷ মানিকগঞ্জের সাংবাদিক বিপ্লব চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানান, গার্মেন্টস কর্মীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে৷ তিনি এখন নতুন একটি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন৷