বাঁধের জলে ডুবে যাওয়া গ্রাম
নদীতে বাঁধ দিলে যে জলাধার সৃষ্টি হয়, বাঁধের কাছাকাছি অবস্থিত গ্রামগুলি সেই পানিতে ডুবে যেতে পারে – জলের ওপর জেগে থাকে হয়ত কোনো গির্জার চুড়া৷ আবার খনি কাটা কিংবা পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলেও বহু গ্রাম বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে৷
এডার হ্রদের সেতু
১৯১৪ সালে জার্মানির হেসে রাজ্যের এডারজে বা এডার হ্রদে বাঁধ দেবার সময় তিনটি গ্রাম পুরোপুরি ডুবে গিয়েছিল৷ সাম্প্রতিক এক গ্রীষ্মে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় হ্রদের জল নেমে গিয়ে ডুবে যাওয়া আজেল গ্রামের সেই পুরনো সেতুটি বেরিয়ে পড়েছিল৷
ইটালির রেশেন হ্রদের গির্জা
ইটালির দক্ষিণ টিরোল এলাকার রেশেনজে বা রেশেন হ্রদে পানির মধ্য থেকে যে গির্জার চুড়াটি বেরিয়ে রয়েছে, সেটি হলো চতুর্দশ শতাব্দীর সেন্ট ক্যাথারিন গির্জার ঘণ্টাঘর৷ ১৯৫০ সালে গ্রাউন গ্রামটিকে বাঁধের পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয় – অবশ্য তার আগে গ্রামবাসীদের বাস তুলে অন্যত্র যাওয়ার জন্য তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছিল৷
মেক্সিকোর কেচুলা-র গির্জা
মধ্য মেক্সিকোর চিয়াপাস অঞ্চলের মালপাসো বাঁধটির সঙ্গে যুক্ত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধার৷ ষাটের দশক থেকে এখানে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়ে আসছে৷ কিন্তু চরম খরার ফলে ২০১৫ সালে ‘সান্তিয়াগোর মন্দির’ নামে পরিচিত ৪০০ বছরের পুরানো গির্জাটি আবার মাথা চাড়া দেয়৷
রোমানিয়ার পরিত্যক্ত গেয়ামানা গ্রাম
আপুসেনি পর্বতাঞ্চলের গেয়ামানা গ্রামে এককালে হাজার মানুষের বাস ছিল৷ সত্তরের দশকে কাছেই একটি তামার খনি চালু হওয়ার পর উপত্যকাটি খনির রাসায়নিক ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলার কাজের ধাপায় পরিণত হয়৷ গ্রামটিও সেই বিষাক্ত কাদায় ঢেকে যায়৷
অতীতেও ঘটেছে
রুংহল্ট গ্রামটিকে উত্তর সাগরের ‘অ্যাটলান্টিস’, অর্থাৎ কিংবদন্তির সেই হারানো মহাদেশ বলা হয়ে থাকে৷ চতুর্দশ শতাব্দীতে সাগরের বান এসে প্রায় ৩০টি গ্রামকে ডুবিয়ে দিয়েছিল, যার মধ্যে সমৃদ্ধ রুংহল্ট গ্রামটিও ছিল৷
একক প্রহরী
স্পেনের এব্রো নদীর বাঁধের জলে স্মৃতিসৌধের মতো জেগে রয়েছে এই গির্জার চুড়াটি৷ যাটের দশকে বার্সেলোনা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তিনটি জলাধার সৃষ্টি করা হয়৷ আজ সৌখিন মৎস্যশিকারিরা সেই হারানো গ্রামের হারানো গির্জার ঘণ্টাঘরের কাছে ছিপ ফেলেন৷
খনি থেকে বিপর্যয়
জার্মানির স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যে যা ঘটেছে৷ কয়লাখনির পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজনে নাখ্টেয়ারস্টেট গ্রামটিকে ক্রমে ক্রমে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সরে যেতে হয়৷ পরে খনি বন্ধ হয়ে যায় ও খনির খোলা খাদে জল ঢুকিয়ে একটি মনোরম হ্রদ সৃষ্টি করা হয়৷ সবসত্ত্বেও ২০০৯ সালে নাখ্টেয়ারস্টেট গ্রামের একাংশ ধসে পড়ে প্রাণ হারান তিনজন মানুষ৷
কালিয়াশিন গ্রামের গির্জার ঘণ্টাঘর
১৯৪০ সালে মস্কোর ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে ভলগা নদীর উপর বাঁধ দিয়ে যে জলাধারটি সৃষ্টি করা হয়, তার দৈর্ঘ্য ১৪০ কিলোমিটার লম্বা৷ পাঁচ কিলোমিটার প্রস্থের এই হ্রদের পানির গভীরতা ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ১০০ মিটার৷ বাঁধ তৈরির সময় কালিয়াশিন গ্রামটি ডুবে যায়, কিন্তু তার ১৮০১ সালে নির্মিত নিকোলাই গির্জার ঘণ্টাঘরটি আজও মাথা তুলে রয়েছে৷