‘লজ্জাশরম থাকলে চলবে না’
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯পর্দায় নয়, ত্বকের উপরেই শিল্পকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে৷ অস্ট্রিয়ার ক্লাগেনফুয়র্টে বিশ্ব বডিপেন্টিং উৎসবে প্রায় ৫০টি দেশের শিল্পী উপস্থিত হয়েছেন৷
রাশিয়ার শিল্পী ইয়াকেটেরিনা মিখাইলিনা-মিলোভানোভা নিজের দেশে বডিপেন্টিং প্রতিযোগিতায় প্রথম ৬টি স্থান দখল করেছেন৷ এখানে তিনি ‘স্পেশাল এফেক্টস' বিভাগে নাম লিখিয়েছেন৷ এ ক্ষেত্রে ত্বকের উপর ল্যাটেক্স বা সিলিকনের মতো উপকরণ দিয়েও নক্সা করার অনুমতি রয়েছে৷ ইয়াকেটেরিনা বলেন, ‘‘বেশ দ্রুত কাজ করা যায় বলে আমি খুশি৷ আইডিয়াগুলি বাস্তব করে তুলতে পারি৷ নানা সাজসরঞ্জাম ও অলংকরণের সমন্বয়ে বডিপেন্টিং করতে পারি৷ নিখুঁত রেখা টানতে হাত স্থির রাখতে হয় ও ভালো করে চিন্তা করতে হয়৷ রং নিয়েও ভালোভাবে কাজ করার ক্ষমতা থাকতে হবে৷''
শিল্প হিসেবে বডিপেন্টিং স্থায়ী হয় না৷ বিশেষ করে বৃষ্টি সংশ্লিষ্ট সবার জন্য দুঃস্বপ্নের মতো৷ কারণ পানিতে রং ধুইয়ে যায়৷ শরীরে রং করার পর সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ কিন্তু কাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগে৷ মডেলের গায়ে রং করার আগে বাসায় সাত ঘণ্টা ধরে অনেক প্রস্তুতি লাগে৷
রাশিয়ার এই শিল্পী ও তাঁর মডেল ইয়েভগেনিয়া এক্সিনা প্রায় ছয় বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করছেন৷ বডিপেন্টিং-এর ক্ষেত্রে লজ্জাশরম থাকলে চলবে না৷ সেইসঙ্গে চাই অসীম ধৈর্য্য ও দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা৷ ইয়েভগেনিয়া বলেন, ‘‘আমার পা অবশ হয়ে যাচ্ছে৷ দুই দিক থেকে আমার পা রং করার সময়ে আমাকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়৷ তখন উসখুস করি৷ কখনো তারা নালিশ করে৷ আমি তাদের বলি, একটু অপেক্ষা করো, আমার শরীর একটু ঢিলা করতে দাও৷''
এখানে ছয়টি ভিন্ন বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের সম্মান দেওয়া হয়৷ যেমন ‘তুলি ও স্পঞ্জ' অথবা ‘এয়ারব্রাশ'-এর মতো কায়দা৷
প্রতিযোগিতা উৎসবের একটা অংশমাত্র৷ রংয়ের বাহার, অভিনব মোটিফ ও ইনস্টলেশন শিল্প প্রতি বছর ত্রিশ হাজারেরও বেশি দর্শক আকর্ষণ করে৷ কেউ বলেন, রংয়ের বাহার অসাধারণ৷ মডেলদের মাথায় সজ্জাসহ অন্যান্য আইডিয়া নিয়ে যা করা হয়, তা যেন রূপকথার মতো৷ কারো মতে, শুধু রং দিয়ে শরীর কীভাবে বদলে ফেলা যায়, কৃত্রিম অঙ্গ দিয়ে শিল্প সত্যি বিস্ময়কর৷
১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বের সেরা বডিপেন্টাররা ক্যারিন্থিয়া অঞ্চলের এই উৎসবে আসছেন৷ ইয়াকেটেরিনা এই নিয়ে পাঁচবার এখানে এলেন৷ একাধিক বিভাগে তিনি প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘এখানেই সবচেয়ে বেশি বিভাগ রয়েছে, অন্য কোনো উৎসবে এমনটা নেই৷ একমাত্র সমস্যা হলো, সবকিছু বয়ে নিয়ে আসা৷ এবার আমাদের মস্কো থেকে গাড়ি চালিয়ে আসতে হয়েছে৷ সাধারণত বিমানে করে আসি৷ কিন্তু বিমানে এত জিনিসপত্র, সাজসরঞ্জাম নিয়ে আসা সম্ভব নয়৷''
মেক্সিকোর মায়া সভ্যতা থেকে প্রেরণা নিয়ে কল্পনার এই জীব সৃষ্টি করে এবারের প্রতিযোগিতায় পঞ্চম স্থান দখল করলেন তিনি৷ এবার দ্রুত সেই সৃষ্টিকর্ম ক্যামেরাবন্দি করতে হবে৷ কারণ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রং ধুয়ে ফেলতে হয়৷
ইয়ানিনা সেমেনোভা/এসবি