ফ্রান্সের হারিয়ে যেতে বসা হিমবাহ
ফ্রান্সের শামোনিক্স অঞ্চলে প্রতি বছর বহু পর্যটক আসেন এই আকর্ষণীয় হিমবাহ দেখতে। কিন্তু আর খুব বেশি দিন হয়ত সম্ভব হবে না সেটা।
উবে যাচ্ছে তুষার
ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ও আল্পস পর্বতমালার চতুর্থ বৃহত্তম হিমবাহ বা গ্লেসিয়ার শামোনিক্স অঞ্চলের ম্যের দে গ্লাস হিমবাহ। সেই হিমবাহের কাছেই মানুষের তৈরি তুষার-গুহা, গ্রোত দে গ্লাস, যা দেখতে বহু পর্যটক রওয়ানা দেন বিখ্যাত ‘ম ব্লা’ পাহাড়ের তল থেকে।
সাদার মাঝে একটু রঙ
শামোনিক্স থেকে এই হিমবাহের দূরত্ব প্রায় নয়শ কিলোমিটার, যা পেরোতে চড়তে হবে এই উজ্জ্বল রক্তবর্ণ ট্রেন। উনিশ শতকেই এখানে ছিল একটি কৃত্রিম হিমবাহ। কিন্তু তুষারস্রোতের গতি বদলের ফলে তা হারিয়ে যায়। কিন্তু হিসাবে প্রথম কৃত্রিম হিমবাহ এখানে তৈরি হয় সেই ১৮৬৩ সালেই।
পায়ে হেঁটেই ভালো
এই গুহায় যেতে গেলে পর্যটকদের প্রায় পাঁচশ সিঁড়ি নামতে হয়। একশ বছরের কিছু বেশি সময়ে ম্যের দে গ্লাস তার ব্যাসের এক চতুর্থাংশ হারিয়েছে। তার প্রস্থ কমেছে প্রায় দুই কিলোমিটার, যা স্পষ্টতই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। প্রতি বছর নতুন করে আরো সিঁড়ি যোগ করতে হয় সে কারণে।
বরফের বদলে যে দৃশ্য
ছবিতে দেখা যাচ্ছে গুহার সামনে সেতুতে পর্যটকদের ভিড়। এরা সবাই আশা করেন যে চারদিক বরফে ছেয়ে থাকবে। কিন্তু আসলে তা হয়না। কান পাতলে শোনা যায় বরফ গলার শব্দ। বাড়ন্ত তাপমাত্রা এখানে বরফ গলিয়ে শুধু পাথর রেখে যায়, যা দেখে হতাশ হন অনেকে।
নীল সুড়ঙ্গ
প্রতি গ্রীষ্মে হিমবাহটি প্রায় ২৩০ফুট সরে যাওয়ায় এখানকার কর্মীদের নতুন করে গোছাতে হয় এই নীল সুড়ঙ্গ। গবেষকরা বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত আল্পস পর্বতমালার সবচেয়ে উঁচু জায়গাগুলির মাত্র পাঁচ শতাংশেই তুষার দেখা যাবে।
ফিরে দেখা তুষারময় দিন
তুষার সুড়ঙ্গের ভেতর পর্যটকেরা অত্যাধুনিক আলো-শব্দের খেলা দেখতে পারেন। চাইলে উনিশ শতকে কীভাবে এত উচ্চতায় দিন কাটাতেন পর্বতারোহীরা, তাও দেখা যাবে সেখানে।
বরফশীতল শিল্প
বরফের সিংহাসনে বসে আছেন পর্যটকেরা। বরফের আসবাব ছাড়াও এখানে দেখার আরো অনেক কিছু আছে, কারণ গ্রোত্তে দে গ্লাস, অর্থাৎ এই নীল সুড়ঙ্গ, ফ্রান্সের একমাত্র হিমবাহ জাদুঘর।
বিদায় তুষার, বিদায়...
সব দেখার পরও একবার এই হিমবাহকে ফিরে দেখতে চান পর্যটকেরা। বিজ্ঞানীদের মতে, এই হিমবাহকে হয়তো কখনোই বাঁচানো যাবে না। ভবিষ্যতে পুরোপুরি হারিয়ে যাবে ম্যের দে গ্লাস, যা পৃথিবীকে আরো উষ্ণ করে তুলবে।