ফ্রান্সের উপকূল শৈবালমুক্ত করার উদ্যোগ
১০ নভেম্বর ২০২১ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলের স্যাঁ ব্রিয়কের কাছে সুন্দর খাঁড়ির আর বেশি কিছু অবশিষ্ট নেই৷ সৈকত বন্ধ রাখা হয়েছে৷ প্রায় সর্বত্র বালুর নীচে সবুজ সামুদ্রিক অ্যালজি পচছে৷ ‘স্টপ দ্য গ্রিন ফ্লাড' গোষ্ঠী সেই দুর্দশার মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে৷ গোষ্ঠীর প্রতিনিধি অঁদ্রে অলিভ্রোর হাতে সময় নেই৷ বাতাসে হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা পরিমাপ করছেন তিনি৷ বিষাক্ত এই গ্যাস দুর্গন্ধে ভরা বস্তু থেকে বালুতে মিশে যাচ্ছে৷ সেই কাজের ঝুঁকি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘'২৫ পিপিএম মাত্রা ছুঁলেই দূরে চলে যেতে হয়৷ কারণ সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ আমাকে মাস্ক পরতে হয়েছে৷ এমন ভয়ংকর পরিবেশে বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না৷ এখানে ভেসে আসার ঠিক পর অ্যালজি লেটুসের মতো দেখতে লাগে৷ মোটেই বিষাক্ত হয় না৷ কিন্তু বালুতে পড়ে থাকতে থাকতে শক্ত আস্তরণের নীচে ভেঙে গেলে এক প্রক্রিয়ায় ২০টি গ্যাস নির্গত হয়৷''
সেই অঞ্চলে চিরকাল সবুজ অ্যালজি দেখা যেত৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানিতে নাইট্রেটের মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় অ্যালজির পরিমাণ আর সামলানো যাচ্ছে না৷ অঁদ্রে বলেন, কম দূরত্বে শুকর, মুরগি ও অন্যান্য প্রাণীর খামারের সংখ্যা বেড়ে চলায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷
খামারের প্রাণীর বিষ্ঠা ও সার থেকে বের হওয়া নাইট্রেট নদীর মাধ্যমে সমুদ্রে এসে পড়ে৷ গোটা অঞ্চলে কৃষিকাজ বেড়ে চলায় এমনটা ঘটছে৷ খাঁড়ির অগভীর পানিতে সামুদ্রিক উদ্ভিদের সংখ্যাও বাড়ছে৷
ইয়ান ইয়োবেস আর এমন অবস্থা সহ্য করতে পারেন নি৷ খাঁড়ি থেকে দশ কিলোমিটার দূরে তাঁর খামার রয়েছে৷ তিনি পুরোপুরি অরগ্যানিক পদ্ধতিতে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেন৷ গরু এখন শুধু ঘাস আর খড় খায়৷ কৃত্রিম সার একেবারেই ব্যবহার করা হয় না৷ তবে খামার ছোট বলেই এমন রূপান্তর সহজ হয়েছে৷
খামারের আকার যত বড়, দূষণের মাত্রাও তত বেশি হয় বলে ইয়ান নিশ্চিত৷ আর্থিক প্রণোদনা ছাড়া খুব বেশি পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন৷ তাঁর মতে, কিছু পরিবর্তন করলে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে এই মুহূর্তে সেটা হচ্ছে না৷
প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে স্যাঁ-মিশেল-অঁ-গ্রেভ শহরে ঠিক সেই পরীক্ষাই চলছে৷ ৩০ বছর আগে সবুজ অ্যালজির কারণে সেখানে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল৷ মেয়র হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করে ফ্রঁসোয়া পঁশঁ চাষিদের সঙ্গে মিলে এক বোনাস সিস্টেম চালু করেছেন৷ এর আওতায় উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করলেই হাতে টাকা আসছে৷ এলাকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চাষিই সেই উদ্যোগে শামিল হচ্ছেন৷
প্রতিদিন সৈকতে অ্যালজি দূর করা হচ্ছে৷ ফলে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে৷ দশ বছর আগে বছরে প্রায় ২০,০০০ টন অ্যালজি জমা হতো৷ এখন সেই পরিমাণ অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে৷ স্যাঁ-মিশেল-অঁ-গ্রেভ শহরের মেয়র ফ্রঁসোয়া পঁশঁ বলেন, ‘‘আমরা চাই জায়গাটি সত্তরের দশকের মতো পরিষ্কার হয়ে উঠুক৷ তাতেই সবার উপকার হবে৷ স্বাস্থ্য, পর্যটন, জীববৈচিত্র্যের জন্য সেটা কল্যাণকর হবে৷''
অতীতে স্যাঁ-মিশেল-অঁ-গ্রেভ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সৈকতের মধ্যে পড়তো৷ এখন জায়গাটি আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে৷
‘স্টপ দ্য গ্রিন ফ্লাড' নামের সংঘের সদস্যরা অনেক দশক ধরে হস্তক্ষেপ না করায় রাজনীতি জগতের সমালোচনা করেন৷ আঞ্চলিক স্তরে সবুজ অ্যালজি থেকে সুরক্ষার একাধিক পরিকল্পনায় কোনো কাজ হয় নি বলে তারা মনে করেন৷ অঁদ্রে অলিভ্রো বলেন, ‘‘বাস্তবে পরিকল্পনার রূপায়ন ঘটে নি৷ কেউ কিছু বদলাতে চায় নি৷ কারণ সে ক্ষেত্রে কৃষিক্ষেত্র ও জনসাধারণের উপর চাপ পড়তো৷''
অঁদ্রে অবশ্য ছোট এক সাফল্য পেয়েছেন৷ ফ্রান্সের কৃষি মন্ত্রণালয় সবুজ অ্যালজির সমস্যা সরাসরি সমাধানের অঙ্গীকার করেছে৷ কোনো এক সময়ে তাঁর খাঁড়ি পুরোপুরি অ্যালজি-মুক্ত হবে বলে তিনি আশা করেন৷
ফ্রিডেরিকে হোফমান/এসবি