রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা!
৬ জুন ২০১২সর্বশেষ ঘটনাটি ময়মনসিংহের একটি বিশ্ববিদ্যালয়'এর৷ সেখানকার শিক্ষার্থী সোহেল মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে কটূক্তি করেছেন তিনি৷ ফেসবুকে ব্যক্তিগত প্রোফাইলে এই মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়৷
ময়মনসিংহের ত্রিশাল'এর পুলিশ প্রধান ফিরোজ তালুকদার এই বিষয়ে বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘ফেসবুকে তার মন্তব্য দেখার পর অনেক শিক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে পড়ে৷ শিক্ষার্থীটি ফেসবুকে দাবি করেছে, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর মুক্তির কোন সুযোগ নেই, কেননা শেখ হাসিনা তাকে আটকে রেখেছে৷''
বলাবাহুল্য, ইলিয়াস আলী হচ্ছেন বিরোধী দল বিএনপি'র একজন প্রভাবশালী নেতা৷ গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি নিখোঁজ আছেন৷ বিরোধী দলের দাবি, ইলিয়াসকে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী ‘গুম' করেছে৷ অন্যদিকে, সরকার পক্ষ ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পেছনে বিরোধী দলই জড়িত বলে দাবি করেছে৷
বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড৷ ফেসবুকে মন্তব্য করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়'এর শিক্ষার্থী সোহেল মোল্লা এখন গুরুতর আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে জড়িয়ে গেছেন৷ পুলিশ কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার এই বিষয়ে বলেন, আমরা আমাদের তদন্ত সম্পন্ন করেছি এবং নিশ্চিত হয়েছে যে তার ফেসবুক মন্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল৷
বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবের অবশ্য মনে করেন, ফেসবুকে একটি মন্তব্যের ভিত্তিতে সরকারের এই প্রতিক্রিয়া অপ্রয়োজনীয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আসলে এটা (ফেসবুক) একটা নতুন বিষয়, ফলে এটা সম্পর্কে যারা দেখভাল করছে বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যারা আছেন, তারা না বুঝে এই কাজগুলো করছেন৷ এটা এই কারণে বলছি যে, ইন্টারনেট এমন একটা মাধ্যম যেখানে স্বাধীনভাবে যে কেউ যে কারো মতামত প্রদান করতে পারে৷ এখানে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন আছে, তেমনি অনেক ভুল, বিভ্রান্তিকর তথ্যও এখানে আছে৷ এবং ভালো দিক হচ্ছে, ইন্টারনেট যারা ব্যবহার করেন তারা এই বিষয়ে সচেতন৷ কাজেই কে কী মন্তব্য করল এবং সেটা শুনেই যে কেউ বিশ্বাস করবে, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই৷''
তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের মন্তব্য যাই হোক, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ফেসবুকের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন৷ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘‘এই ছাত্র যে অপরাধ করেছে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যে কারণে আমরা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যারাই এ ধরনের অশোভন কটূক্তি করবে, তাদের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷''
বলাবাহুল্য, কারিগরিভাবে ইন্টারনেট থেকে যেকোন মন্তব্য বা বিষয়বস্তু মুছে ফেলা বা নির্দিষ্ট কোন লিংক ব্লক করে দেওয়া কঠিন এবং জটিল হলেও ক্ষেত্রবিশেষে সম্ভব৷ কিন্তু ছোট্ট একটি মন্তব্য মুছতে প্রযুক্তির প্রয়োগকে যৌক্তিক মনে করছেন না সুমন আহমেদ সাবের৷ এই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বরং এসব ক্ষুদ্র মন্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়ার পক্ষে৷ তিনি বলে ‘‘আজকে ইন্টারনেটে যে পর্যায়ে চলে গেছে, সেখান থেকে একেকটা ক্ষুদ্র, একক বিষয়বস্তু মুছে ফেলা আসলেই জটিল৷ যদি খুব ক্ষতিকর কোন মন্তব্য থাকে, সেটা একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে মুছে ফেলা সম্ভব৷ কিন্তু একটা মন্তব্যকে যে মুছে ফেলতেই হবে এমন কি কোন কথা আছে? এসব বিষয় বরং এড়িয়ে গেলেই ভালো৷''
উল্লেখ্য, ফেসবুকে কটূক্তি করার অপরাধে বাংলাদেশে এর আগে অন্তত আরো দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ গত জানুয়ারি মাসে ফেসবুকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় গ্রেপ্তার হন শিক্ষার্থী আল-নাইম জুবায়ের৷ একইমাসে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষক রুহুল খন্দকারকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার আদালত৷ তাকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন